Published : 24 Nov 2023, 09:28 AM
ফিলিস্তিনের অবরুদ্ধ ছিটমহল গাজাকে ধ্বংস করে দেওয়া যুদ্ধে প্রথম বিরতি কিছুক্ষণের মধ্যেই শুরু হতে যাচ্ছে।
শুক্রবার স্থানীয় সময় সকাল ৭টায় যুদ্ধবিরতি শুরু হওয়ার কথা। এ সময় গাজার উত্তর ও দক্ষিণাঞ্চলে চার দিনের ব্যাপক যুদ্ধবিরতি কার্যকর হওয়া শুরু হবে।
বিকালে ফিলিস্তিনি স্বাধীনতাকামী গোষ্ঠী হামাস ইসরায়েল থেকে ধরে এনে গাজায় বন্দি করে রাখা প্রায় ২৪০ জন জিম্মির মধ্যে প্রথম দলে ১৩ জনকে মুক্তি দেবে। ইসরায়েলের কারাগার থেকে ফিলিস্তিনি কিছু বন্দিকেও মুক্তি দেওয়া হবে বলে প্রত্যাশা করা হচ্ছে।
কিন্তু যুদ্ধবিরতি শুরু হওয়ার আগে কয়েক ঘণ্টা ধরে গাজায় দুই পক্ষের মধ্যে তীব্র লড়াই হয়েছে। হামাস শাসিত গাজার কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, এ সময় যেসব লক্ষ্যে ইসরায়েল বোমাবর্ষণ করেছে সেগুলোর মধ্যে একটি হাসপাতালও আছে।
রয়টার্স জানিয়েছে, ইসরায়েল ও হামাস, উভয়পক্ষই ইঙ্গিত দিয়েছে ফের লড়াই শুরু হওয়ার আগে যুদ্ধবিরতি হবে সাময়িক।
দোহায় কাতারের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র মাজেদ আল-আনসারি জানিয়েছেন, যুদ্ধবিরতি শুরু হওয়ার পর গাজায় অতিরিক্ত ত্রাণ সরবরাহ শুরু হবে, বিকাল ৪টায় বয়স্ক নারীসহ জিম্মিদের মুক্তি দেওয়া হবে যা বেড়ে চার দিনে ৫০ জনে দাঁড়াবে।
মিশর জানিয়েছে, যুদ্ধবিরতি শুরু হওয়ার পর থেকে প্রতিদিন গাজায় এক লাখ ৩০ হাজার লিটার ডিজেল ও চার লরি গ্যাস সরবরাহ করা হবে আর প্রতিদিন ২০০ ট্রাক ত্রাণ যাবে।
কাতারের মুখপাত্র এক সংবাদ সম্মেলনে জানিয়েছেন, ইসরায়েলের কারাগারগুলো থেকে ফিলিস্তিনিদের মুক্তি দেওয়া হবে বলে প্রত্যাশা করা হচ্ছে।
তিনি বলেন, “এ যুদ্ধবিরতি থেকে একটি স্থায়ী যুদ্ধবিরতি অর্জনে আরও বড় পরিসরে কাজ করার সুযোগ সৃষ্টি হবে বলে আমরা সবাই আশা করছি।”
হামাস তাদের টেলিগ্রাম চ্যানেলে নিশ্চিত করেছে, যুদ্ধবিরতি চলাকালে তাদের বাহিনী সব ধরনের শত্রুতা থেকে বিরত থাকবে।
কিন্তু হামাসের সশস্ত্র শাখার মুখপাত্র আবু উবাইদা পরে এক ভিডিও বার্তায় লড়াইয়ের এই বিরতিকে ‘অস্থায়ী যুদ্ধবিরতি’ উল্লেখ করে এরপর ‘প্রতিরোধের সব ফ্রন্টে (ইসরায়েলের) সঙ্গে সংঘর্ষ বাড়ানোর’ আহ্বান জানিয়েছেন। ইসরায়েলের অধিকৃত পশ্চিম তীরেও প্রতিরোধ গড়ে তোলার আহ্বান জানিয়েছেন তিনি। গাজায় যুদ্ধ শুরু হওয়ার পর থেকেই পশ্চিম তীরে সহিংসতা বহুগুণ বেড়ে গেছে।
ইসরায়েলের সামরিক বাহিনী জানিয়েছে, তাদের সেনারা গাজার ভেতরে একটি যুদ্ধবিরতি লাইনের পেছনে অবস্থান করবে। তবে নিজেদের অবস্থানের বিষয়ে বিস্তারিত আর কিছু জানায়নি তারা।
বিবিসি জানিয়েছে, বিকাল ৪টায় জিম্মিদের মুক্তি দেওয়া শুরু হওয়ার আগে থেকে শুরু করে ইসরায়েল গাজার আকাশে থাকা তাদের গোয়েন্দা ড্রোনগুলোর উড়াউড়ি ৬ ঘণ্টা বন্ধ রাখবে (নজরদারি বন্ধ করা চুক্তিতে হামাসের করা দাবি অনুযায়ী শুরু হবে) ।
অন্য জিম্মিদের হামাস কোথায় লুকিয়ে রেখেছে তা বের করতে ইসরায়েল তাদের গোয়েন্দা নজরদারি সক্ষমতা ব্যবহার করতে পারে, এই আশঙ্কা থেকেই এ সতর্কতা। ড্রোনের নজরদারি চলতে থাকলে হামাস সম্ভবত জিম্মি মুক্তির চুক্তিতে স্বাক্ষর করতো না।
এর আগে ইসরায়েলের কর্মকর্তারা জানিয়েছিলেন, আকাশে ড্রোন ও বেলুন না থাকলেও তাদের ‘তথ্য সংগ্রহ করার বিকল্প গোয়েন্দা সক্ষমতা’ আছে।
ইসরায়েলি সামরিক বাহিনীর মুখপাত্র ডানিয়েল হাগারি বলেছেন, “এই দিনগুলো জটিল হবে এবং কোনো কিছুই নিশ্চিত নয়। গাজার নিয়ন্ত্রণ নেওয়া দীর্ঘমেয়াদি যুদ্ধের প্রথম পদক্ষেপ। আমরা পরবর্তী ধাপের জন্য প্রস্তুতি নিচ্ছি।”
ইসরায়েল ও হামাসের মধ্যে পরস্পরের ওপর কোনো বিশ্বাস নেই। এক্ষেত্রে দুই পক্ষই মধ্যস্থতাকারী কাতারে ওপর নির্ভর করে আছে আর তারা তাদের মধ্যস্থতার কাজ বেশ ভালোভাবেই করেছে বলে ধারণা পর্যবেক্ষকদের।
আরও পড়ুন: