জাতিসংঘের ফিলিস্তিন বিষয়ক শরণার্থী সংস্থা ইউএনআরডব্লিউএ এর প্রধান ফিলিপ লাজারিনি বলেছেন, সম্ভবত মৃত্যুর সংখ্যা আরও বেশি হবে।
Published : 25 Jan 2024, 09:44 AM
ফিলিস্তিনি ছিটমহল গাজার দক্ষিণাঞ্চলীয় শহর খান ইউনিসে জাতিসংঘের একটি স্থাপনায় আশ্রয় নিয়ে থাকা বেসামরিকদের ওপর ইসরায়েলি হামলায় অন্তত নয়জন নিহত ও ৭৫ জন আহত হয়েছে।
বুধবার জাতিসংঘ জানিয়েছে, গাজায় বাস্তুচ্যুত ফিলিস্তিনিদের আশ্রয় দেওয়া জাতিসংঘের এক কম্পাউন্ডে ইসরায়েলি ট্যাংকগুলো হামলা চালিয়েছে, এতে ‘ব্যাপক হতাহতের’ ঘটনা ঘটেছে।
কিন্তু ইসরায়েল এ হামলার জন্য তাদের সেনারা দায়ী নয় বলে দাবি করেছে, হামাস সেখানে হামলা চালিয়ে থাকতে পারে বলে সন্দেহ প্রকাশ করেছে।
জাতিসংঘ জানিয়েছে, খান ইউনিসের ওই বৃত্তিমূলক প্রশিক্ষণ কেন্দ্রটিতে ৩০ হাজার বাস্তুচ্যুত ফিলিস্তিনি আশ্রয় নিয়ে আছে, এখানেই হামলা চালিয়েছে ইসরায়েল।
ইসরায়েলর ঘনিষ্ঠ মিত্র যুক্তরাষ্ট্র সরাসরি এ হামলার নিন্দা জানিয়েছে, খবর বার্তা সংস্থা রয়টার্সের।
ফিলিস্তিনি ভূখণ্ডের জন্য নিযুক্ত জাতিসংঘের মানবিক সমন্বয়কারী জেমস ম্যাকগোলড্রিক বলেছেন, “ব্যাপক হতাহতের ঘটনা ঘটেছে। কিছু ভবন পুড়ে গেছে আর সেখানে মৃত্যুর ঘটনা ঘটেছে বলে খবর পাওয়া গেছে। বহু মানুষ ঘটনাস্থল থেকে পালাতে চেয়েছিল, কিন্তু তারা তা পারেনি।”
জাতিসংঘের ফিলিস্তিন বিষয়ক শরণার্থী সংস্থা ইউএনআরডব্লিউএ এর গাজা বিষয়ক পরিচালক টমাস হোয়াইট জানিয়েছেন, প্রশিক্ষণ কেন্দ্রটির ভবনগুলোর মধ্যে একটিতে ট্যাংকের দু’টি গোলা আঘাত হানে। এই ভবনটিতে প্রায় ৮০০ মানুষ আশ্রয় নিয়ে ছিল। অন্তত নয়জন নিহত ও ৭৫ জন আহত হয়েছে।
ইউএনআরডব্লিউএ এর প্রধান ফিলিপ লাজারিনি বলেছেন, সম্ভবত মৃত্যুর সংখ্যা আরও বেশি হবে।
লাজারিনি বলেছেন, “কম্পাউন্ডটি জাতিসংঘের স্থাপনা হিসেবে পরিষ্কারভাবে চিহ্নিত ছিল। আমাদের সব স্থাপনার মতো এটির অবস্থানও ইসরায়েলি কর্তৃপক্ষকে জানানো হয়েছিল। আরও একবার যুদ্ধের মূল আইনকে নির্লজ্জভাবে উপেক্ষা করা হলো।”
ওয়াশিংটনে যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র ভেদান্ত প্যাটেল বলেন, “খান ইউনিসে জাতিসংঘের প্রশিক্ষণ কেন্দ্রে আজ যে হামলা হয়েছে আমরা তার নিন্দা জানাই।
“বেসামরিকদের অবশ্যই সুরক্ষা দিতে হবে এবং জাতিসংঘের স্থাপনাগুলোর সুরক্ষিত প্রকৃতির প্রতি অবশ্যই শ্রদ্ধা দেখাতে হবে। মানবিক কর্মীদের অবশ্যই সুরক্ষা দিতে হবে যেন তারা বেসামরিকদের প্রাণ রক্ষাকারী মানবিক সহায়তা দেওয়া অব্যাহত রাখতে পারেন যা তাদের প্রয়োজন।”
জাতিসংঘের এসব অভিযোগের পর ইসরায়েলের সামরিক বাহিনী এক বিবৃতিতে দাবি করে, বৃহত্তর খান ইউনিস এলাকাটি হামাসের যোদ্ধাদের একটি ঘাঁটি। বিপুল সংখ্যক বেসামরিকদের নিকটেই লড়াই চলছে বলে স্বীকার করে তারা।
কিন্তু ওয়াশিংটন হামলার নিন্দা জানানোর পর দ্বিতীয় আরেক বিবৃতিতে তারা দাবি করে, তাদের বাহিনী কেন্দ্রটিতে হামলা চালিয়েছে, এ অভিযোগ তাদের অভিযান পদ্ধতি নিয়ে করা একটি পরীক্ষা বাতিল করেছে। তারা আরও জানায়, আঘাতটি হামাসের গোলাবর্ষণের কারণে হয়েছিল কিনা তা যাচাই করার জন্য একটি পরীক্ষা এখনও চলছে।
অক্টোবরের শেষ দিকে গাজায় ইসরায়েলের স্থল হামলা শুরু হওয়ার পর থেকে ওয়াশিংটন বেসামরিকদের ওপর হামলার ঘটনা নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছে এবং এ ধরনের ঘটনাগুলোর বিষয়ে ইসরায়েলের কাছে তথ্য চেয়েছে, কিন্তু ইসরায়েলের কোনো নির্দিষ্ট হামলা নিয়ে প্রকাশ্যে সমালোচনা এবারই প্রথম।
রয়টার্স জানিয়েছে, হামলার কয়েক ঘণ্টা পার হওয়ার পরও জাতিসংঘের কর্মকর্তারা ওই এলাকায় যেতে পারেননি এবং সব ধরনের যোগাযোগ বন্ধ করে রাখা হয়েছে।
আরও পড়ুন: