রাশিয়ার শাসন ক্ষমতায় গত ২৩ বছর ধরে রয়েছেন পুতিন। দীর্ঘ এ শাসনামলে প্রথমবার তিনি এতটা গুরুতর চ্যালেঞ্জের মুখে পড়েছেন।
Published : 25 Jun 2023, 12:10 AM
প্রবল বিক্রমে প্রায় দেড় বছর আগে ইউক্রেইনে আক্রমণ করেছিলেন রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন। দিশাহীন হয়ে পড়া সে যুদ্ধ পুরো বিশ্ব অর্থনীতিকে মন্দার দিকে ঠেলে দিয়েছে। সেই যুদ্ধই এখন হাজির হয়েছে পুতিনের ঘরের দুয়ারে; কদিন আগেই যিনি ছিলেন তার নিজের লোক সেই ব্যক্তিই এখন প্রতিপক্ষ।
পাশের দেশ ইউক্রেইন যুদ্ধে রাশিয়ার সবচেয়ে বড় অস্ত্র হয়ে আলোচনায় এসেছে ভাড়াটে সেনাদের দল ওয়াগনার বাহিনী। যাদের নেতৃত্বে তীব্র লড়াইয়ের পর গত মাসে দেশটির বাখমুত শহরের দখল পায় রাশিয়া।
ওয়াগনার বাহিনীর প্রধান ইয়েভগেনি প্রিগোজিন, যিনি পুতিনের ঘনিষ্ঠজন বলেই পরিচিত। হঠাৎ করেই তিনি অভিযোগ করেন, রাশিয়ার সামরিক নেতৃত্ব গত শুক্রবার ক্ষেপণাস্ত্র ছুড়ে তার বাহিনীর বহু সেনাকে হত্যা করেছে। তাই তিনি তাদের নিজ নিজ পদ থেকে অপসারণ করে শাস্তি দিতে চান।
এ অভিযোগ জানানোর কয়েক ঘণ্টা পর শনিবার ভোররাতে প্রিগোজিন জানান, তার ওয়াগনার বাহিনীর যোদ্ধারা ইউক্রেইন থেকে সীমান্ত অতিক্রম করে রাশিয়ার রস্তোভ অঞ্চলে প্রবেশ করেছে এবং তারা মস্কোর সামরিক বাহিনীর বিরুদ্ধে লড়তে যেতে প্রস্তুত। তার বাহিনীর ২৫ হাজার যোদ্ধা তার সঙ্গে আছে বলেও জানান তিনি।
শনিবার দিনভর ওয়াগনার বাহিনী রস্তোভ থেকে ১,১০০ কিলোমিটার দূরে মস্কোর পথে অগ্রসর হয়েছে। শেষ খবর পাওয়া পর্যন্ত তারা মস্কোর দূরত্বের ২০০ কিলোমিটারের মধ্যে এসে যায়।
তাদের থামাতে রাশিয়ার সেনাবাহিনী আকাশ থেকে ওয়াগনার বাহিনীর উপর গোলাবর্ষণ করেছে বলে জানিয়েছে প্রায় সব কটি আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যম। কিন্তু তাদের অগ্রযাত্রার গতি কমাতে পারেনি।
গত ২৩ বছর ধরে রাশিয়া শাসন করছেন পুতিন। দীর্ঘ এই শাসনামলে প্রথমবার তিনি এতটা গুরুতর চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি হলেন। তাও আপন লোকদের দ্বারাই।
ওয়াগনার আর রাশিয়ার সামরিক বাহিনী মুখোমুখি কেন?
‘অপরাধমূলক অ্যাডভেঞ্চারের’ নিন্দা পুতিনের
মস্কোর পথে এগুচ্ছে ওয়াগনার বাহিনী, পরিস্থিতি কঠিন: মেয়র
পুতিনের নিন্দার জবাবে বিদ্বেষ ঝরালেন ওয়াগনার প্রধান প্রিগোজিন
শনিবার এক ভাষণে পুতিন উদ্ভূত পরিস্থিতিকে ‘রাষ্ট্রদ্রোহ’ বলে বর্ণনা করেছেন। এ পরিস্থিতিকে তিনি এক শতাব্দী আগে রাশিয়ায় হওয়া গৃহযুদ্ধের সঙ্গে তুলনা করে একে কঠোর হাতে দমনের প্রতিজ্ঞা করেছেন।
ইউক্রেইনের দোনেৎস্ক প্রদেশে রাশিয়া নিয়ন্ত্রিত অঞ্চলের নেতার সঙ্গে ঘনিষ্ঠ নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একটি সূত্র জানায়, মস্কো অভিমুখে যাত্রা করা ওয়াগনার দলটিতে প্রায় পাঁচ হাজার যোদ্ধা রয়েছে, যাদের নেতৃত্ব দিচ্ছেন জ্যেষ্ঠ ওয়াগনার কমান্ডার দিমিত্রি উৎকিন। যদিও ওয়াগনার প্রধান প্রিগোজিন দাবি করেছেন তার সঙ্গে ২৫ হাজার যোদ্ধা রয়েছে।
ওয়াগনার বাহিনী মস্কোর কাছাকাছি পৌঁছে যাওয়ায় চলমান পরিস্থিতিতে ‘কঠিন’ বলে বর্ণনা করেছেন মস্কোর মেয়র সের্গেই সোবিয়ানিন।
শনিবার তিনি মস্কোকে ‘সন্ত্রাস বিরোধী অভিযান অঞ্চল’ ঘোষণা করে নিরাপত্তা ব্যবস্থা জোরদার করেন।
ঝুঁকি কমাতে তিনি আগামী সোমবার মস্কোয় ‘নন-ওয়ার্কিং ডে’ বা ‘কর্মহীন দিবস’ ঘোষণা করে বাসিন্দাদের সব ধরণের ভ্রমণ এড়িয়ে চলার পরামর্শ দিয়েছেন।
নগরীর সড়কগুলোতে নিরাপত্তা বাহিনীর সংখ্যা বাড়ানো হয়েছে এবং ধাতব ব্যারিকেড দিয়ে বিখ্যাত রেড স্কয়ারে যাওয়ার পথ আটকে দেওয়া হয়েছে।
প্রিগোজিন দাবি করেছেন, তার যোদ্ধারা দুর্নীতিবাজ ও অযোগ্য কমান্ডার যারা ইউক্রেইন যুদ্ধের জন্য দায়ী তাদের ক্ষমতা থেকে অপসারণ করতে ‘ন্যায়ের মিছিলে’ নেমেছে।
অন্যদিকে, শনিবার স্থানীয় সময় সকালে টেলিভিশনে এক ভাষণে পুতিন বলেন, রাশিয়ার অস্তিত্ব হুমকির মুখে ছিল।
‘‘আমরা আমাদের জনগণের জীবন ও নিরাপত্তার জন্য, আমাদের সার্বভৌমত্ব এবং স্বাধীনতার জন্য এবং হাজার বছরের ইতিহাস সমৃদ্ধ একটি রাষ্ট্র হিসেবে রাশিয়ার অস্তিত্ব রক্ষার জন্য লড়াই করছি।
‘‘যারা ইচ্ছাকৃতভাবে বিশ্বাসঘাতকতার পথে পা দিয়েছে, যারা সশস্ত্র বিদ্রোহের প্রস্তুতি নিয়েছে, যারা হুমকি দিয়ে সুবিধা আদায় এবং সন্ত্রাসবাদের পথ বেছে নিয়েছে, তারা অনিবার্য শাস্তি ভোগ করবে। আইন এবং আমাদের জনগণ উভয়ের কাছেই তাদের জবাবদিহি করতে হবে।”
এদিকে, সাবেক রুশ প্রেসিডেন্ট দিমিত্রি মেদভেদেভ জোর দিয়ে বলেছেন, রাশিয়ার কিছুতেই এই বিদ্রোহকে অভ্যুত্থান অথবা বৈশ্বিক সংকটের রূপ নিতে দেবে না।
মেদভেদেভের বরাত দিয়ে রুশ সংবাদ সংস্থা তাস এর খবরে আরো বলা হয়, সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে মেদভেদেভ পশ্চিমাদের সতর্ক করে দিয়ে বলেছেন, ‘‘যদি রাশিয়ার পরমাণু অস্ত্র দস্যুদের হাতে পড়ে যায় তবে তা পুরো বিশ্বকে বিপর্যয়ের কিনারে নিয়ে দাঁড় করিয়ে দেবে।”
রুশ পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় থেকেও শনিবার এক বিবৃতিতে সতর্ক করে বলা হয়, পশ্চিমাদের জন্য তাদের ‘রুশোফোবিয়ার লক্ষ্য অর্জনে’ ভাড়াটে ওয়াগনার বাহিনীর বিদ্রোহকে রাশিয়ার বিরুদ্ধে ব্যবহার করা একদমই উচিত হবে না।