হায়াত তাহরির আল-শাম (এইচটিএস) সিরিয়ার ক্ষমতায় আসার পর তারা সংখ্যালঘুদের জীবনযাত্রা ঝুঁকিতে পড়বে না’ বলে আশ্বস্ত করেছে।
Published : 16 Dec 2024, 07:20 PM
সিরিয়ার বিদ্রোহীরা এক সপ্তাহ আগে প্রেসিডেন্ট বাশার আল-আসাদকে নাটকীয়ভাবে উৎখাত করার পর প্রথমবারের মতো দেশটির খ্রিস্টানরা রোববারের নিয়মিত প্রার্থনায় অংশ নিয়েছেন। সংখ্যালঘুদের অধিকারগুলো রক্ষা করা হবে, দেশটির ইসলামপন্থি নতুন শাসকদের দেওয়া এমন প্রতিশ্রুতির এটি প্রাথমিক পরীক্ষা বলে মনে করছেন পর্যবেক্ষকরা।
গত সপ্তাহে ইসলামপন্থী গোষ্ঠী হায়াত তাহরির আল-শাম (এইচটিএস) সিরিয়ার ক্ষমতায় আসার পর তারা সংখ্যালঘুদের জীবনযাত্রা ঝুঁকিতে পড়বে না’ বলে আশ্বস্ত করার চেষ্টা করেছে।
আসাদের পতনের আগে খ্রিস্টানসহ ঐতিহাসিক ধর্মীয় সংখ্যালঘু গোষ্ঠীগুলো স্বাধীনভাবে উপাসনা করত। আসাদের পতনের পর অনেকেই ইসলামপন্থী সরকারের সম্ভাবনা নিয়ে উদ্বিগ্ন ছিল।
রয়টার্স লিখেছে, রোববার সকালে দামেস্কর খ্রিস্টান অধ্যুষিত এলাকা বাব তৌমার রাস্তাগুলোতে গির্জা থেকে ফেরা উপাসকদের ভিড় দেখা যায়। তাদের কারও কারও কণ্ঠে সতর্কতার আভাস পাওয়া যায় বলে রয়টার্স জানায়।
স্থানীয় গ্রিক মেলকাইট ক্যাথলিক গির্জায় প্রার্থনায় অংশ নেওয়ার পর স্থানীয় বাসিন্দা মাহা বারসা বলেন, “আমরা ভীত। আমরা এখনও ভয়ে আছি।”
বারসা জানান, এক সপ্তাহ আগে এইচটিএস ক্ষমতা গ্রহণ করার পর থেকে তিনি আজকেই বাড়ি থেকে বের হয়েছেন।
তিনি বলেন, “উদ্বিগ্ন হওয়ার মতো কিছু না ঘটলেও বিষয়গুলো অস্পষ্ট হয়ে আছে।”
আসাদের দীর্ঘদিনের শক্ত ঘাঁটি হিসেবে পরিচিত উপকূলীয় শহর লাতাকিয়ায় সেন্ট জর্জ গ্রিক অর্থোডক্স ক্যাথেড্রালের যাজকপল্লীর কাউন্সিল সেক্রেটারি লিনা আখরাস রোববার জানান, আসাদের শাসনের অধীনে বিশ্বাসের স্বাধীনতার ক্ষেত্রে খ্রিস্টানরা ‘স্বাচ্ছন্দ্যেই' ছিল কিন্তু তারা কেবল শান্তি ও সম্প্রীতির সঙ্গে বসবাস করতে চেয়েছিল।”
রয়টার্সকে তিনি বলেন, “(আসাদের পতন) হঠাৎ করেই হয়েছে, কী আশা করবো তাই বুঝতে পারছিলাম না। ঈশ্বরকে ধন্যবাদ, আমরা অনেক আশ্বাস পেয়েছি। আমরা দেখেছি (এইচটিএস) কমিটির সদস্যরা আমাদের যাজকের সঙ্গে দেখা করেছে।
"ঈশ্বরের ইচ্ছায়, আমরা আমাদের আগের জীবনে ফিরে যাব এবং আমাদের সুন্দর সিরিয়ায় বসবাস করবো।“
সিরিয়ায় খ্রিস্টান, আর্মেনিয়ান, কুর্দি এবং শিয়া মুসলমানসহ একাধিক জাতিগত ও ধর্মীয় সংখ্যালঘু রয়েছে। আসাদ পরিবার নিজেরাই সুন্নি মুসলিম সংখ্যাগরিষ্ঠ সিরিয়ার শিয়া মুসলিম সংখ্যালঘু আলাউইতি সম্প্রদায়ের সদস্য।
লেবাননের এক ঊর্ধ্বতন নিরাপত্তা কর্মকর্তা গত সপ্তাহে রয়টার্সকে জানান, দেশটির নতুন শাসকদের নির্যাতনের ভয়ে গত সপ্তাহে হাজার হাজার শিয়া মুসলিম সিরিয়া থেকে লেবাননে পালিয়ে গেছে।
এদিকে সিরিয়ার নতুন শাসকরা স্কুল পুনরায় খোলার নির্দেশ দেওয়ার পর রোববার শিক্ষার্থীরা ক্লাসে ফিরে গেছে।
দীর্ঘ গৃহযুদ্ধে দেশটির শহরগুলো ধ্বংসস্তূপে পরিণত হয়েছে। অর্থনীতি বিপর্যস্ত হয়েছে এবং লাখ লাখ শরণার্থী এখনো সিরিয়ার বাইরে বিদেশে শরণার্থী শিবিরগুলোতে বসবাস করছে।
কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, “কর্ম সপ্তাহের প্রথম দিন রোববার দেশজুড়ে বেশিরভাগ স্কুল খুলছে। তবে কিছু অভিভাবক পরিস্থিতিগত অনিশ্চয়তার কারণে তাদের সন্তানদের ক্লাসে পাঠাচ্ছেন না।”
রোববার সকালে দামেস্কের একটি বালক উচ্চ বিদ্যালয়ের মাঠ শিক্ষার্থীদের আনাগোনায় মুখরিত ছিল। স্কুলের সেক্রেটারি রায়েদ নাসের নতুন সরকারের গৃহীত পতাকা উত্তোলন করার পর সবাই করতালি দিয়ে স্বাগত জানান।