ভারত প্রবাহ প্রায় বন্ধ করে দেওয়ার পর পাকিস্তানের চেনাবে পানি হ্রাস

পাকিস্তানের শিয়ালকোটের কাছে চেনাব নদীর পানির প্রবাহ আগের দিনের ৩৫ হাজার কিউসেক থেকে কমে প্রায় ৩১০০ কিউসেকে দাঁড়িয়েছে।

ভারত থেকে পাকিস্তানে প্রবেশের পর শিয়ালকোটের কাছে চেনাব নদী। ছবি: ডন

সিন্ধু পানি চুক্তি স্থগিত করার প্রায় এক সপ্তাহ পর ভারত চেনাব নদীর পাকিস্তানমুখি প্রবাহ প্রায় বন্ধ করে দিয়ে পানি প্রত্যাহার শুরু করেছে, এতে নিম্নপ্রবাহে নদীটির পানি বহুগুণ হ্রাস পেয়েছে।

সোমবার সকালে পাকিস্তানের শিয়ালকোট শহরের কাছে মারালা হেডওয়ার্কসে চেনাব নদীর পানির প্রবাহ আগের দিনের ৩৫ হাজার কিউসেক থেকে কমে প্রায় ৩১০০ কিউসেকে দাঁড়ায়; পানি কমে যাওয়ার এ হার প্রায় ৯০ শতাংশ বলে জানিয়েছে দেশটির গণমাধ্যম ডন।

পাকিস্তানের পাঞ্জাব প্রদেশের সেচ বিভাগের এক ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা সোমবার ডনকে বলেন, “রোববার তারা (ভারতীয় কর্তৃপক্ষ) সিদ্ধান্তটি নেওয়ার পর চেনাব নদীর নিম্নপ্রবাহ প্রায় বন্ধ করে দিয়েছে। এখন তারা আমাদের পানি চেনাব অববাহিকায় তাদের বাঁধ/জলবিদ্যুৎ প্রকল্প পূর্ণ করার জন্য ব্যবহার করছে। তারা এমন করতে পারে না, কারণ এটি সিন্ধু পানি চুক্তির গুরুতর লঙ্ঘন।”

ডন লিখেছে, চেনাব অববাহিকায় ভারতের তিনটি বড় জলবিদ্যুৎ প্রকল্প রয়েছে। এর প্রথমটি ১০০০ মেগাওয়াটের পাকাল দুল বাঁধ। এখানে ৮৮ হাজার একর-ফুট ধারণ ক্ষমতার একটি জলাধার রয়েছে, পাশাপাশি দক্ষিণ দিকে পানি সরিয়ে নেওয়ার জন্য ১০ কিলোমিটারের একটি হেড রেস টানেল রয়েছে।

দ্বিতীয়টি পাকাল দুল থেকে ৮৮ কিলোমিটার নিম্নপ্রবাহে বাগলিহার বাঁধ। কাশ্মীরের রামবান জেলার এই প্রকল্পটিতে ৯০০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপন্ন হয়। এটিতে তিন লাখ ২১ হাজার একর-ফুট ধারণ ক্ষমতার জলাধার রয়েছে, পাশাপাশি অতিরিক্ত ৫৮২৬৯২ কিউসেক পানি বের করে দেওয়ার পথ রয়েছে।

তৃতীয়টি বাগলিহার থেকে ৭৮ কিলোমিটার দূরে সালাল বাঁধ। ৬৯০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদন ক্ষমতার এই প্রকল্পটিতে ২২৮০০০ একর-ফুটের একটি জলাধার রয়েছে এবং ৭৯২০১২ কিউসেক পানি বের করে দেওয়ার পথ রয়েছে।

পাকিস্তানি ওই কর্মকর্তা বলেছেন, “সালাল বাঁধ থেকে ৭৬ কিলোমিটার নিম্নপ্রবাহে মারালা ব্যারেজ (পাকিস্তান) । তারা ওই বাঁধগুলো পূর্ণ করতে থাকায় পানির প্রবাহ এতো কমে গেছে। ওই বাঁধ ও জলাধারগুলোর মোট ধারণ ক্ষমতা ১২ লাখ একর-ফুট। তারা যদি তাদের বাঁধগুলো পূর্ণ করা অব্যাহত রাখে আর পানি না ছাড়ে, তারা আমাদের আরও চার থেকে পাঁচ দিন পানি ছাড়া রাখতে পারবে।”

তিনি জানান, যদি ভারত হঠাৎ করে নিম্নপ্রবাহে পানি ছেড়ে দিতে শুরু করে তাহলে চেনাব নদীতে বন্যার মতো পরিস্থিতি দেখা দেবে, এতে স্থানীয় জনগণ ঝুঁকির মুখে পড়বে।

এই কর্মকর্তার ভাষ্য অনুযায়ী, পাকিস্তানের সেচ পদ্ধতির জন্য চেনাব নদী খুব গুরুত্বপূর্ণ। নদীটি থেকে বের হওয়ার খালগুলো পাঞ্জাবের বিস্তীর্ণ কৃষি জমিতে সেচের যোগান দেয়।

ভারত শাসিত জম্মু-কাশ্মীরের পেহেলগামে জঙ্গি হামলার প্রতিক্রিয়ায় সিন্ধু পানি চুক্তি স্থগিত করার পর নয়া দিল্লি রোববার সাময়িকভাবে পাকিস্তানের দিকে যাওয়া চেনাব নদীর প্রবাহ প্রায় বন্ধ করে দিয়েছে।