Published : 05 May 2025, 02:21 PM
ভারত শাসিত জম্মু-কাশ্মীরের পেহেলগামে জঙ্গি হামলার প্রতিক্রিয়ায় সিন্ধু পানি চুক্তি স্থগিত করার পর নয়া দিল্লি সাময়িকভাবে পাকিস্তানের দিকে যাওয়া চেনাব নদীর প্রবাহ বন্ধ করেছে।
চেনাব নদীর বাগলিহার বাঁধে প্রবাহ বন্ধ করা হয়েছে বলে ভারতীয় গণমাধ্যম জানিয়েছে। এর পাশাপাশি কৃষাণগঙ্গা বাঁধেও একই ধরনের পদক্ষেপ নেওয়ার পরিকল্পনা করছে ভারত সরকার।
বাগলিহার বাঁধ সিন্ধু পানি চুক্তি মেনে তৈরি করা হয়েছে আর চুক্তি অনুযায়ী এটি সাময়িক সময়ের জন্য সীমিত পরিমাণ পানি ধরে রাখতে পারবে, এরপর এটি ছেড়ে দিতে হবে। কিন্তু কাশ্মীরে সন্ত্রাসী হামলার পর দুই প্রতিবেশী দেশের মধ্যে তুমুল উত্তেজনার সময়টিতে এ পদক্ষেপ ইসলামাবাদের জন্য একটি পরিষ্কার সতর্ক বার্তা বলে লিখেছে এনডিটিভি।
সিন্ধু পানি চুক্তি অনুযায়ী, বাগলিহার বাঁধ যে নদীতে সেই চেনবা একটি পশ্চিমা নদী। পাকিস্তানের এই নদীর পানি অবাধ ব্যবহারের অধিকার আছে। কিন্তু ভারত শুধু কৃষিকাজে, জলবিদ্যুৎ উৎপাদনে এবং খরচ হয়ে যাবে না এমন ক্ষেত্রে নদীটির পানি ব্যবহার করতে পারবে।
বাগলিহার বাঁধ নদীর প্রবাহ অক্ষুণ্ণ রেখে তৈরি করা জলবিদ্যুৎ প্রকল্প হওয়ায় এখানে জলাধার তেমন বড় নয়। কাশ্মীরের রামবান জেলার এই প্রকল্পটিতে ৯০০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপন্ন হয়। এই প্রকল্পের প্রথম অংশ ২০০৮ সালে এবং দ্বিতীয় অংশ ২০১৫ সালে সম্পূর্ণ হয়।
কৃষাণগঙ্গা বাঁধও নদীর প্রবাহ অক্ষুণ্ণ রেখে তৈরি করা প্রকল্প। কাশ্মিরের বান্দিপুর জেলার এ প্রকল্পটির বিদ্যুৎ উৎপাদন ক্ষমতা ৩৩০ মেগাওয়াট।
এই উভয় প্রকল্পের নকশা ও সীমা সিন্ধু পানি চুক্তি লঙ্ঘন করে এমন অভিযোগ জানিয়ে আপত্তি তুলেছিল পাকিস্তান। ইসলামাবাদ বলেছিল, বাগলিহার বাঁধের সীমা সংঘাতের সময় ভারতকে একটি কৌশলগত সুবিধা দেবে।
এই বাঁধ নিয়ে বেশ কয়েক দফা বৈঠকেও কোনো ফল না আসায় পাকিস্তান বিশ্ব ব্যাংকের কাছে তাদের আপত্তি তুলে ধরে। সিন্ধু পানি চুক্তির মধ্যস্থতাকারী বিশ্ব ব্যাংকের নিয়োগ করা বিশেষজ্ঞরা পাকিস্তানের কিছু আপত্তি সমর্থন করলেও বাঁধের উচ্চতা ও স্পিলওয়ে গেটযুক্ত নিয়ন্ত্রণের বিষয়ে তাদের উদ্বেগ প্রত্যাখ্যান করে।
কৃষাণগঙ্গা বাঁধ নিয়েও পাকিস্তান আপত্তি তুলেছিল। কিন্তু এ বিষয়ক সালিশ আদালত ভারতের পক্ষে রায় দেয়।
বাগলিহার বাঁধে ভারত শুধু কিছু সময়ের জন্য পানি আটকে রাখতে পারবে। কারণ এর বাঁধটি শুধু একটি নির্দিষ্ট উচ্চতা পর্যন্ত পানি ধরে রাখতে পারে। ওই উচ্চতায় পৌঁছানোর পর ভারতকে অবশ্যই পানি ছেড়ে দিতে হবে, না হলে বিপর্যয় ঘটবে। এখানে দীর্ঘ সময়ের জন্য পানি ধরে রাখতে ভারতকে অবশ্যই এই বাঁধের উচ্চতা বাড়াতে হবে, যা রাতারাতি নির্মাণ করা সম্ভব নয়।