ক্রেমলিনে ড্রোন হামলা মস্কোর জন্য কতটা লজ্জার?

ড্রোন হামলা সত্যি হলে এখন প্রশ্ন উঠছে, পুতিন আসলে কতটা সুরক্ষিত, রুশ আকাশ প্রতিরক্ষা ব্যবস্থাই বা কতটা নির্ভরযোগ্য

নিউজ ডেস্কবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 4 May 2023, 08:56 AM
Updated : 4 May 2023, 08:56 AM

চলমান যুদ্ধের মধ্যে মস্কোর প্রাণকেন্দ্রে ক্রেমলিনে ইউক্রেইন ড্রোন হামলা চালিয়েছে বলে দাবি করেছে রুশ প্রশাসন, ফলে যুদ্ধের এক বছর পর উত্তেজনা প্রশমনের পরিবর্তে আরও চড়তে শুরু করেছে।

বুধবার ভোররাতে ওই ঘটনার পর ড্রোন নিষ্ক্রিয় করতে রেডার সরঞ্জাম ব্যবহার করেছে রুশ বাহিনী; সেখানে কেউ হতাহত হননি। আর প্রেসিডেন্ট পুতিনও তখন ক্রেমলিনে ছিলেন না বলে তার দপ্তর থেকে জানানো হয়েছে। 

ক্রেমলিন ওই ঘটনার জন্য ইউক্রেইনকে দায়ী করে বলেছে, ওই হামলার উদ্দেশ্য ছিল প্রেসিডেন্ট পুতিনকে হত্যা করা।

অন্যদিকে হামলার অভিযোগ অস্বীকার করে ইউক্রেইন বলেছে, এটা রাশিয়ার নাটক।

মস্কোর দুর্গ সদৃশ ক্রেমলিনের গ্র্যান্ড ক্রেমলিন প্যালেসে থাকেন প্রেসিডেন্ট পুতিন। সেখানেই দুটি ড্রোন আঘাত হানে বলে রুশ প্রেসিডেন্টের দপ্তরকে উদ্ধৃত করে জানিয়েছে রাশিয়ার সরকারি বার্তা সংস্থা রিয়া নোভোস্তি।

বিবিসি জানিয়েছে, ওই ঘটনার পর বেশ কয়েকটি ভিডিও সামনে এসেছে। সেগুলোর একটিতে দেখা যায়, গ্র্যান্ড ক্রেমলিন প্যালেসের দিকে একটি ড্রোন উড়ে যাচ্ছে এবং পরক্ষণেই সেটি বিস্ফোরণে আগুন জ্বলতে দেখা যায়।

আরেকটি ভিডিওতে ক্রেমলিন দুর্গের ওপর থেকে আগুন ও ধোঁয়া উঠতে দেখা যায়। তবে সেটি আসলে ড্রোন ছিল কিনা কিংবা ড্রোন হামলার কথা বলা হলেও আসলে কী ঘটেছে সেটি স্পষ্ট নয়।

এক বিশ্লেষণী প্রতিবেদনে বিবিসি বলেছে, ক্রেমলিনের দাবি যদি সত্যি হয়, আর পুতিনকে হত্যাই যদি এর আসল উদ্দেশ্য হয়ে থাকে, ক্রেমলিনের জন্য তা হবে চরম বিব্রতকর।

পুতিন বিশ্বের সবচেয়ে সুরক্ষিত নেতাদের একজন। মস্কোতে তার অনুষ্ঠান ঘিরে কঠোর নিরাপত্তার ব্যবস্থা করা হয়। আকাশ ও সড়কপথ বন্ধ রেখে ব্যাপক তল্লাশি চালানো হয়। প্রেসিডেন্টের নিরাপত্তা যানের দীর্ঘ সারিও দেখা যায়।

কিন্তু রুশ প্রেসিডেন্টের বাসভবনের মত জায়গায় ড্রোন হামলার ঘটনায় এখন যে প্রশ্ন উঠছে তা হল, প্রেসিডেন্ট পুতিন আসলে কতটা সুরক্ষিত। আরও প্রশ্ন উঠছে, রুশ আকাশ প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা এতটা নড়বড়ে?

বিবিসি লিখেছে, সাম্প্রতিক মাসগুলোতে রুশ প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়সহ মস্কোর গুরুত্বপূর্ণ ভবনগুলো ঘিরে বিমান-বিধ্বংসী প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা জোরদার করতে দেখা গেছে। চলমান যুদ্ধ পরিস্থিতির মধ্যে ইউক্রেইন বা এর মিত্ররা গুরুত্বপূর্ণ লক্ষ্যগুলোতে হামলা চালাতে পারে, সেই আশঙ্কা থেকে ওই ব্যবস্থা নিয়েছে ক্রেমলিন।

এখন রুশ প্রেসিডেন্টের বাসভবনে হামলার ঘটনা যদি সত্যি হয়, তার মানে দাঁড়াবে সেই বিমান-বিধ্বংসী ব্যবস্থা ব্যর্থ হয়েছে।

চলমান যুদ্ধের মধ্যে সাম্প্রতিক মাসগুলোতে রাশিয়ার ভূখণ্ডে হামলা ও বিস্ফোরণের সর্বশেষ ঘটনা এটি। গত কিছুদিন ধরেই এমন ঘটনা বেড়ে চলেছে।

বুধবার সকালে রাশিয়ার ক্রাসনোদার অঞ্চলে একটি জ্বালানি ডিপোতে আগুন লাগে। ড্রোন হামলায় এটি ঘটেছে বলে জানা গেছে।

সোমবার ও মঙ্গলবার দুটি পৃথক ঘটনায় ইউক্রেনের সীমান্তবর্তী রাশিয়ার ব্রায়ানস্ক অঞ্চলে দুটি মালবাহী ট্রেন লাইনচ্যুত হয়। বিস্ফোরক ডিভাইসের কারণে ওই ঘটনা ঘটেছে বলে স্থানীয় গভর্নর পরে জানিয়েছেন।

এ সপ্তাহান্তে ক্রাইমিয়ায় রুশ নিয়ন্ত্রিত কর্মকর্তারা দাবি করেন, ইউক্রেনীয় ড্রোন একটি জ্বালানি সংরক্ষণাগারে আঘাত হেনেছে। বারবার এ ধরনের আক্রমণগুলো রাশিয়ার সাধারণ সৈন্যদের বিচলিত করছে।

রুশ সংবাদমাধ্যমগুলো বলছে, মস্কোতে প্রচুর ড্রোন আঘাত হানার খবর স্থানীয় বাসিন্দাদের কাছ থেকে পাচ্ছে পুলিশ।

এখন সর্বশেষ ড্রোন হামলার ঘটনায় আরেকটি যে প্রশ্ন উঠছে তা হল, রাশিয়া এখন কীভাবে সাড়া দেবে। যদি পাল্টা জবাব দেওয়ার কথা তারা ভাবে, সেটি কীভাবে।

রুশ কর্তৃপক্ষের কেউ কেউ এই ঘটনায় কঠিন পদক্ষেপ নেওয়ার হুঁশিয়ারি দিচ্ছেন। যদি রুশ প্রেসিডেন্টকে হত্যা চেষ্টার ঘটনাই হয়, তবে সেটি অত্যন্ত গুরুতর বিষয়।

রাশিয়ার ভূখণ্ডে হামলার পর বহুবারই কঠিন ব্যবস্থা নেওয়ার হুঁশিয়ারি করেছেন রুশ জেনারেলরা। কিন্তু বাস্তবিক প্রতিশোধমূলক হামলা চালানোর সক্ষমতা কি রাশিয়ার আছে? 

আরও পড়ুন-

Also Read: ‘পুতিনকে মারতে’ ড্রোন হামলা, জেলেনস্কির অস্বীকার