গৃহযুদ্ধের তীব্রতা বৃদ্ধির মধ্যে দেশটির বড় অংশজুড়ে বন্যার ফলে অর্থনৈতিক সঙ্কট আরও গভীর হবে বলে ধারণা করা হচ্ছে।
Published : 17 Sep 2024, 04:17 PM
টাইফুন ইয়াগির প্রভাবে ভারি বৃষ্টিতে মিয়ানমারজুড়ে ব্যাপক বন্যায় মৃতের সংখ্যা দুই শতাধিক ছাড়িয়েছে। আরও প্রায় ৮০ জন নিখোঁজ রয়েছে বলে জানিয়েছে দেশটির সামরিক সরকার।
টাইফুনের প্রভাবে মিয়ানমারের বিভিন্ন গ্রামে সৃষ্ট বন্যা ও ভূমিধসে ২২৬ জনের মৃত্যুর খবর জানিয়েছে বিবিসি।
সরকারি পরিসংখ্যান অনুযায়ী, সেপ্টেম্বরের শুরুর দিকে উত্তর ভিয়েতনাম, লাওস, থাইল্যান্ড ও মিয়ানমারের ওপর দিয়ে বয়ে যাওয়া এই ঝড় এখন পর্যন্ত ওই অঞ্চলের প্রায় পাঁচ শতাধিক মানুষের প্রাণ কেড়ে নিয়েছে।
ঝড়ে লাখ লাখ একর জমির ফসল ধ্বংস হওয়ায় জাতিসংঘ সতর্ক করে বলেছে, যুদ্ধবিধ্বস্ত দেশটিতে পাঁচ লাখেরও বেশি মানুষের জরুরি ভিত্তিতে খাদ্যের পাশাপাশি খাবার পানি, আশ্রয় ও বস্ত্র প্রয়োজন।
জাতিসংঘের অফিস ফর দ্য কো-অর্ডিনেশন অব হিউম্যানিটারিয়ান অ্যাফেয়ার্স (ওসিএইচএ) জানিয়েছে, ঝড়ের প্রভাবে হওয়া বৃষ্টিতে রাজধানী নেপিদোর পাশাপাশি মান্দালয়, মাগওয়ে ও বাগো অঞ্চলসহ পূর্ব ও দক্ষিণাঞ্চলীয় শান রাজ্য, মন, কায়াহ ও কায়িন রাজ্য ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।
২০২১ সালের ফেব্রুয়ারিতে হওয়া সামরিক অভ্যুত্থানের পর থেকেই মিয়ানমারে অশান্তি বিরাজ করছে। দেশটির বিশাল অংশজুড়ে সহিংসতা চলছে।গৃহযুদ্ধের তীব্রতা বাড়তে থাকায় দেশটির অর্থনীতির আকার সঙ্কুচিত হয়ে আসছে।
এখন দেশটির বড় একটি অংশজুড়ে বন্যার ফলে অর্থনৈতিক সঙ্কট আরও গভীর হবে বলে আশঙ্কা প্রকাশ করা হচ্ছে।
বিবিসি জানিয়েছে, ক্ষতিগ্রস্ত অবকাঠামো এবং টেলিযোগাযোগ ও ইন্টারনেট পরিষেবা বিপর্যস্ত হয়ে পড়ায় হতাহতের তথ্য সংগ্রহ করা কঠিন হয়ে পড়েছে।
জাতিসংঘ বলেছে, মিয়ানমারের সাম্প্রতিক ইতিহাসে এবারের বন্যা সবচেয়ে ভয়াবহ।
দেশটির দুর্যোগ মোকাবিলা সংস্থার হিসাব অনুযায়ী, বন্যায় প্রায় ৬ লাখ ৩০ হাজার মানুষ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে, রাস্তাঘাট বন্ধ হয়ে গেছে, সেতু ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে এবং যোগাযোগ লাইন বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছে, যার কারণে ত্রাণ তৎপরতা মারাত্মকভাবে ব্যাহত হচ্ছে।
এছাড়া বিদ্রোহী নিয়ন্ত্রিত হওয়ায় বন্যায় সবচেয়ে ক্ষতিগ্রস্ত রাজ্যগুলোর একটি শান রাজ্যসহ দেশের অনেক অংশে ত্রাণ সংস্থাগুলোর প্রবেশাধিকার নেই বললেই চলে।
একজন উদ্ধারকারী বিবিসি বার্মিজকে জানিয়েছেন, ভূমিধসে অনেক বাড়িঘর চাপা পড়েছে।
“আমরা এ পর্যন্ত শিশু ও বৃদ্ধসহ শতাধিক মৃতদেহ উদ্ধার করেছি।”
পূর্বাঞ্চলীয় শান রাজ্যের এক বাসিন্দা বলেন, “এই বন্যা আমার জীবনে দেখা সবচেয়ে ভয়াবহ।”
বিদ্রোহী নিয়ন্ত্রিত কায়িন রাজ্যের জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তা খোন মাতিয়া বিবিসি বার্মিজকে বলেছেন, মানুষের জরুরিভাবে খাবারের প্রয়োজন।
তিনি আরও বলেন, “বন্যা ও যুদ্ধের কারণে সবকিছু বন্ধ থাকায় মানুষ এখানে আরও কঠিন অবস্থানে রয়েছে। তাই আমাদের কাছে পৌঁছানো খুব কঠিন।”
এদিকে ক্ষমতাসীন সামরিক জান্তা দুর্গতদের জন্য সাহায্যের যে আবেদন করেছে, তাতে এখন পর্যন্ত একমাত্র প্রতিবেশী রাষ্ট্র ভারত সাড়া দিয়েছে। ইতিমধ্যে দেশটিতে খাদ্য, বস্ত্র ও ওষুধসহ ত্রাণ পাঠিয়েছে ভারত।
উল্লেখ্য, টাইফুন ইয়াগির কারণে থাইল্যান্ডে ১০ জন এবং লাওসে একজনের মৃত্যু হয়েছে।
এছাড়া ভিয়েতনামে মৃতের সংখ্যা ২৯২ জনে দাঁড়িয়েছে, ৩৮ জন নিখোঁজ। দেশটিতে ২ লাখ ৩০ হাজারের বেশি ঘরবাড়ি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে, ২ লাখ ৮০ হাজার হেক্টর জমির ফসল নষ্ট হয়েছে এবং প্রধান প্রধান উৎপাদন কেন্দ্রগুলো ব্যাপকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে বলে জানিয়েছে কর্তৃপক্ষ।