আল শিফার ম্যানেজার জানিয়েছেন, ‘অবরুদ্ধ’ হাসপাতালটিতে ঢুকে কুকুরগুলো মৃতদেহ খাওয়া শুরু করেছে।
Published : 14 Nov 2023, 10:02 AM
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (ডব্লিউএইচও) জানিয়েছে, ফিলিস্তিনের ছিটমহল গাজার সর্ববৃহৎ হাসপাতাল আল শিফা মৃতদের দাফন করতে পারছে না, সেখানে জমা মৃতদেহে পচন ধরেছে।
বিদ্যুৎ বিভ্রাট ও জ্বালানির সংকটে পড়া হাসপাতালটি ‘প্রায় একটি কবরস্থান’ হয়ে উঠেছে বলে সংস্থাটি সতর্ক করেছে।
আল শিফার ম্যানেজার জানিয়েছেন, ‘অবরুদ্ধ’ হাসপাতালটিতে ঢুকে কুকুরগুলো মৃতদেহ খাওয়া শুরু করেছে।
গত কয়েকদিন ধরে হাসপাতালটির আশপাশের এলাকাগুলোতে ফিলিস্তিনি স্বাধীনতাকামী গোষ্ঠী হামাসের যোদ্ধাদের সঙ্গে ইসরায়েলি বাহিনীর তীব্র লড়াই চলছে। হাসপাতালের গেইটের কয়েক মিটারের মধ্যে ইসরায়েলি ট্যাংক ও সাঁজোয়া যান অবস্থান নিয়েছে বলে জানা গেছে।
হাসপাতালটির নিচে ভূগর্ভস্থ টানেলে হামাস একটি কমান্ড ও কন্ট্রোল সেন্টার পরিচালনা করছে বলে অভিযোগ ইসরায়েলের। গাজা শাসনকারী হামাস সেখানে ‘মানবিক সমাধানও প্রতিরোধ’ করছে বলে অভিযোগ তাদের। কিন্তু হামাস ও হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ তা অস্বীকার করেছে।
আল-শিফা হাসপাতালের খুব কাছে লড়াই চলার কথা স্বীকার করেছে ইসরায়েল, কিন্তু হাসপাতালটি অবরুদ্ধ করা হয়নি বলে দাবি করেছে তারা। হাসপাতালটির দিকে কোনো গুলি ছোড়া হচ্ছে না এবং যে কেউ চাইলে সেখান থেকে চলে যেতে পারে বলে জানিয়েছে তারা।
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার মুখপাত্র ক্রিশ্চিয়ান লিন্ডমায়ার জানিয়েছেন, হাসপাতালটিতে এখনও প্রায় ৬০০ জনের মতো রয়ে গেছে, অন্যরা হলওয়েতে আশ্রয় নিয়েছে।
তিনি বলেন, “হাসপাতালের আশপাশে মৃতদেহ আছে। সেগুলো নজরদারি করা যাচ্ছে না, কবর দেওয়া যাচ্ছে না বা কোনো মর্গেও নেওয়া যাচ্ছে না। হাসপাতালটির যেসব কাজ করা উচিত এখন আর সেসব করা যাচ্ছে না। এটি প্রায় একটি কবরস্থান হয়ে গেছে।”
গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, হাসপাতালটির ভেতরে এখনও অন্তত ২৩০০ মানুষ আছেন, এদের মধ্যে ৬৫০ জনের মতো রোগী, ২০০ থেকে ৫০০ কর্মী এবং আশ্রয় নিতে আসা প্রায় ১৫০০ লোক আছে।
আল-শিফার চিকিৎসকরাও স্তূপ হয়ে থাকা মৃতদেহ ও সেগুলোতে পচন ধরেছে বলে জানিয়েছেন। আল-শিফার ম্যানেজার ডাঃ মোহাম্মদ আবু সেলমিয়া জানান, সেখানে প্রায় ১৫০টি মৃতদেহে পচন ধরেছে ফলে ‘তীব্র দুর্গন্ধ ছড়াচ্ছে’।
তিনি বিবিসিকে জানান, ইসরায়েলি কর্তৃপক্ষ এখনও এসব মৃতদেহ কবর দেওয়ার জন্য হাসপাতালের বাইরে নিয়ে যাওয়ার অনুমতি দেয়নি, এই পরিস্থিতিতে কুকুরগুলো হাসপাতাল প্রাঙ্গণে ঢুকে পড়ে লাশ খাওয়া শুরু করেছে।
বিদ্যুৎ না থাকায় কয়েক ডজন নবজাতককে তাদের ইনকিউবেটর থেকে সরিয়ে নেওয়া হয়েছে, এদের সবার মৃত্যু হতে পারে বলে উদ্বেগ দেখা দিয়েছে।
অক্সিজেনের অভাবে এদের মধ্যে সাতটি শিশুর মৃত্যু হয়েছে বলে ডাঃ সেলমিয়া জানিয়েছেন।
তিনি জানান, শিশুগুলোকে সরিয়ে নেওয়ার চেষ্টায় ইসরায়েলি কর্তৃপক্ষের সঙ্গে আলোচনা চালানো হচ্ছে, কিন্তু কোনো সমঝোতা হয়নি।
ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহুর জ্যেষ্ঠ উপদেষ্টা মার্ক রিগেভ জানিয়েছেন, শিশুদের সরিয়ে নেওয়ার জন্য ইসরায়েল ‘কার্যকর সমাধান’ প্রস্তাব করেছিল, কিন্তু হামাস প্রস্তাব গ্রহণ করেনি।
কিন্তু হামাস এসব অভিযোগ অস্বীকার করেছে। হাসপাতালটিকে অভিযানের জন্য ব্যবহার করা হচ্ছে না বলে দাবি করেছে তারা। আর হাসপাতালটিতে থাকা চিকিৎসকরা বলছেন, সেখানে হামাসের কোনো উপস্থিতি নেই।
আরও পড়ুন:
গাজায় হাসপাতালের কাছে তীব্র লড়াই, শিশুদের নিয়ে উদ্বেগ