ল্যান্ডার বিক্রম বুধবার চাঁদের মাটিতে অবতরণ করবে; সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ এই মুহূর্তের দিকে এখন তাকিয়ে ইসরোর বিজ্ঞানীরা।
Published : 20 Aug 2023, 02:46 PM
চন্দ্রাভিযানে ভারতের চন্দ্রযান-৩ এর দ্বিতীয় ও চূড়ান্ত ডি-বুস্টিং অপারেশন সফলভাবে সম্পন্ন হয়েছে রোববার সকালে; এখন চাঁদের মাটিতে পৌঁছানোর সেই মাহেন্দ্রক্ষণের জন্য কেবল অপেক্ষা।
মহাকাশযানটির ল্যান্ডার বুধবার চাঁদের মাটিতে অবতরণ করবে, সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ এই পর্বের দিকেই এখন গভীর মনোযোগ ভারতীয় মহাকাশ গবেষণা সংস্থা-ইসরোর বিজ্ঞানীদের।
সংস্থাটির বরাতে এনডিটিভি জানিয়েছে, ল্যান্ডার বিক্রম চাঁদের কক্ষপথের এমন একটি অবস্থানে রয়েছে যেখান থেকে চাঁদের নিকটতম দূরত্ব ২৫ কিলোমিটার এবং দূরবর্তী পথের দূরত্ব ১৩৪ কিলোমিটার।
এই কক্ষপথ থেকেই বুধবার চাঁদের দক্ষিণ মেরু অঞ্চলে সফট-ল্যান্ডিংয়ের চেষ্টা করবে বিক্রম। চাঁদের ওই অংশ সম্পর্কে এখনও খুব কমই জানে মানুষ। প্রথম দেশ হিসেবে ভারত সেখানে রোবটযান নামাতে যাচ্ছে।
ইসরো সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম এক্সে (টুইটার) জানিয়েছে, চন্দ্রযান-৩ এর দ্বিতীয় ও চূড়ান্ত ডিবুস্টিং অপারেশনের মধ্য দিয়ে লুনার মডিউল সফলভাবে কক্ষপথের দূরত্ব কমিয়ে এনেছে। মডিউলটি অভ্যন্তরীণ পরীক্ষা-নিরীক্ষার মধ্য দিয়ে যাবে এবং নির্ধারিত ল্যান্ডিং সাইটের সূর্যোদয়ের জন্য অপেক্ষা করবে। চাঁদের মাটিতে অবতরণ শুরু হবে ২৩ অগাস্ট।
ল্যান্ডার বিক্রম স্বয়ংক্রিয় মোডে চাঁদের কক্ষপথ ধরে অবতরণ করছে, ফলে এই প্রক্রিয়ায় স্বয়ংক্রিয়ভাবে নিজের সিদ্ধান্ত নিচ্ছে বিক্রম।
শুক্রবার প্রথম ডি-বুস্টিং অপারেশন চলাকালে ইসরোর সাবেক প্রধান কে সিভান এনডিটিভিকে বলেন, চন্দ্রযান-৩ ল্যান্ডারের ডিজাইন আগের চন্দ্রযান-২ এর ল্যান্ডারের মতই। ডিজাইনে কোনো পরিবর্তন নেই। তবে চন্দ্রযান-২ এর সকল সমস্যা সমাধান করা হয়েছে এটাতে।
অভিযান সফল হলে নিরাপদে চাঁদের মাটিতে নামতে পারা চতুর্থ দেশ হবে ভারত। এর আগে কেবল যুক্তরাষ্ট্র, সোভিয়েত ইউনিয়ন ও চীনের মহাকাশযান নিরাপদে চাঁদের মাটিতে নামতে পেরেছে।
বৃহস্পতিবার চন্দ্রযান-৩ এর ‘প্রপালশন মডিউল’ থেকে ‘ল্যান্ডার মডিউলটি’ বিচ্ছিন্ন হয়ে যায়। পৃথিবী থেকে সমস্ত পথ ল্যান্ডারকে বয়ে নিয়ে এসেছে প্রপালশন মডিউল।
প্রপালশন মডিউলটি এখন কয়েক মাস বা বছর ধরে পৃথিবীকে প্রদক্ষিণ করতে থাকবে এবং চাঁদের বায়ুমণ্ডল পর্যবেক্ষণ করবে। ল্যান্ডারটি সেখান থেকে বিচ্ছিন্ন হওয়ার পরই বৃহস্পতিবার প্রথম চাঁদের উপরিভাগের ছবি পাঠিয়েছে।
চাঁদের মাটিতে নামার পর ল্যান্ডার বিক্রমের পেট থেকে বেরিয়ে আসবে রোভার প্রজ্ঞান। তার ছবি তুলে পৃথিবীতে পাঠাবে বিক্রম।
রোবটযান প্রজ্ঞান চন্দ্রপৃষ্ঠের রাসায়নিক গঠন বিশ্লেষণ এবং পানির সন্ধান করবে। এই মিশনের আয়ু হবে এক চন্দ্র দিবস, যা পৃথিবীর ১৪ দিনের সমান।
গত ১৪ জুলাই দুপুরে অন্ধ্রপ্রদেশের শ্রীহরিকোটার সতীশ ধাওয়ান মহাকাশ কেন্দ্র থেকে চন্দ্রযান-৩ এর সফল উৎক্ষেপণ করে ইসরো। ঐতিহাসিক সেই মুহূর্তের সাক্ষী হতে ভারতের শতকোটি মানুষের চোখ ছিল টেলিভিশন আর সোশাল মিডিয়ায়। আগ্রহ নিয়ে নজর রেখেছেন বিশ্বের অন্যান্য মহাকাশ গবেষণা সংস্থার বিজ্ঞানীরাও।
চাঁদে পৌঁছানোর চেষ্টায় এর আগে দুটো অভিযান চালিয়েছে ভারত। ২০০৮ সালে প্রথম অভিযানে চন্দ্রযান-১ পৌঁছেছিল চাঁদের কক্ষপথে। চাঁদের ভূপৃষ্ঠের গঠন ও পানির উপস্থিতি নিয়ে বড় পরিসরে গবেষণা চালানো হয় সে সময়। দিনের বেলায় চাঁদে যে একটি বায়ুমণ্ডল সক্রিয় থাকে, ওই গবেষণাতেই তা প্রতিষ্ঠা করা সম্ভব হয়।
২০১৯ সালের দ্বিতীয় অভিযান আংশিকভাবে সফল হয়েছিল। চন্দ্রযান-২ এর অরবিটার আজও চাঁদের চারপাশ প্রদক্ষিণ করছে এবং তথ্য পাঠাচ্ছে। কিন্তু এর ল্যান্ডার অবতরণের সময় শেষ মুহূর্তের জটিলতায় চাঁদের মাটিতে বিধ্বস্ত হয়।
চন্দ্রযান-৩ এর ওজন ৩ হাজার ৯০০ কেজি, যা বানাতে খরচ হয়েছে ৬.১ বিলিয়ন রুপি (সাড়ে ৭ কোটি ডলার)। এই মহাকাশযানও তৈরি হয়েছে অরবিটার, ল্যান্ডার ও রোভার- এই তিনটি অংশ নিয়ে।
ইসরোর প্রতিষ্ঠাতার নামে চন্দ্রযান-৩ এর ল্যান্ডারের নাম রাখা হয়েছে বিক্রম, যার ওজন প্রায় দেড় হাজার কেজি। ওই বিক্রমই তার পেটের মধ্যে বহন করছে ২৬ কেজি ওজনের রোভার বা রোবটযান প্রজ্ঞানকে।
আরও পড়ুন-
চন্দ্রপৃষ্ঠের প্রথম ছবি পাঠাল ভারতের চন্দ্রযান-৩