অভিযান সফল হলে যুক্তরাষ্ট্র, সাবেক সোভিয়েত ইউনিয়ন ও চীনের পর ভারত হবে চাঁদের মাটিতে পা রাখা চতুর্থ দেশ।
Published : 05 Aug 2023, 10:55 PM
চাঁদের কক্ষপথে ঢুকে পড়েছে ভারতের মহাকাশ যান চন্দ্রযান-৩। শনিবার সন্ধ্যায় ভারতের মহাকাশ সংস্থা ইসরোর পক্ষ থেকে চন্দ্রযান-৩ এর সফলভাবে চাঁদের কক্ষপথে প্রবেশের খবর দেওয়া হয়।
গত ১৪ জুলাই ভারতের অন্ধ্রপ্রদেশের শ্রীহরিকোটার সতীশ ধাওয়ান মহাকাশ কেন্দ্র থেকে চন্দ্রযান-৩ এর সফল উৎক্ষেপণ হয়। আগামী ২৩ বা ২৪ অগাস্ট এটি চাঁদে দক্ষিণ মেরুর কাছে একটি রোবটযান নামাতে সক্ষম হবে বলে আশা প্রকাশ করেছেন ইসরোর বিজ্ঞানীরা।
যদি এই অভিযান সফল হয় তবে বিশ্বের প্রথম দেশ হিসেবে ভারত চাঁদের দক্ষিণ মেরুতে গবেষণা কাজ শুরু করতে পারবে। চাঁদের ওই অংশ সম্পর্কে এখনও খুব কমই জানে মানুষ।
এর আগে কেবল যুক্তরাষ্ট্র, সোভিয়েত ইউনিয়ন ও চীনের মহাকাশযান নিরাপদে চাঁদের মাটিতে নামতে পেরেছে।
শনিবার ইসরোর পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, চাঁদ এবং চন্দ্রযান-৩ এর মধ্যে যখন দূরত্ব সবচেয়ে কম ছিল তখনই এটি কক্ষপথ পরিবর্তন করেছে। পরবর্তীতে কক্ষপথের দূরত্ব কমানোর কাজটি করা হবে। এই দূরত্ব কমতে শুরু করবে রোববার রাত ১১টার পর থেকে।
তারপর বিজ্ঞানীরা ধীরে ধীরে গতি কমিয়ে একটি নির্দিষ্ট জায়গায় মহাকাশযানটিকে নিয়ে যাবেন, যেখান থেকে বিক্রমের অবতরণপর্ব শুরু হবে। নির্দিষ্ট সময়ে চন্দ্রযান-৩ এর অরবিটার থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে চাঁদের মাটিতে নেমে যাবে ল্যান্ডার বিক্রম।
অবতরণের সময়টা হতে হবে একেবারে নির্দিষ্ট, চাঁদের কোনো এক দিনের ঠিক সূচনায়। কারণ ল্যান্ডার আর রোভারের ব্যাটারি চার্জ হতে সূর্যালোক দরকার হবে।
পৃথিবী থেকে চন্দ্রযান-৩ এর চাঁদে পৌছতে সময় লাগবে মোট ৪০ দিন। শনিবার তার মধ্যে ২২তম দিন সম্পূর্ণ হল।
বিজ্ঞানীরা বলছেন আগামী ১৭ দিন খুবই গুরুত্বপূর্ণ। চন্দ্রযানের কক্ষপথে প্রবেশ করার পর ইসরোর দ্বিতীয় চ্যালেঞ্জ সফট ল্যান্ডিং। ল্যান্ডার বিক্রম ও রোভার প্রজ্ঞান এর মূল যান থেকে আগামী ১৭ অগাস্ট বিচ্ছিন্ন হতে পারে।
ইসরোর হিসাব অনুসারে ঠিক তার ছয়দিন পর চাঁদে অবতরণ করবে বিক্রম।। শেষবারে এই অবতরণের সময়ই বিপদ ঘটেছিল তাই এবার সেই সময়টি নিয়ে যেনো উত্কণ্ঠা কাটছে না ইসরোর বিজ্ঞানীদের।
চাঁদে পৌঁছানোর চেষ্টায় এর আগে দুটো অভিযান চালিয়েছে ভারত। ২০০৮ সালে প্রথম অভিযানে চন্দ্রযান-১ পৌঁছেছিল চাঁদের কক্ষপথে। চাঁদের ভূপৃষ্ঠের গঠন ও পানির উপস্থিতি নিয়ে বড় পরিসরে গবেষণা চালানো হয় সে সময়। দিনের বেলায় চাঁদে যে একটি বায়ুমণ্ডল সক্রিয় থাকে, ওই গবেষণাতেই তা প্রতিষ্ঠা করা সম্ভব হয়।
২০১৯ সালের দ্বিতীয় অভিযান আংশিকভাবে সফল হয়েছিল। চন্দ্রযান-২ এর অরবিটার আজও চাঁদের চারপাশ প্রদক্ষিণ করছে এবং তথ্য পাঠাচ্ছে। কিন্তু এর ল্যান্ডার অবতরণের সময় শেষ মুহূর্তের জটিলতায় চাঁদের মাটিতে বিধ্বস্ত হয়।
৩৯০০ কেজি ওজনের চন্দ্রযান-৩ বানাতে খরচ হয়েছে ৬.১ বিলিয়ন রুপি (সাড়ে ৭ কোটি ডলার)। ভারতের তৃতীয় চন্দ্রাভিযানের এই মহাকাশযান তৈরি হয়েছে অরবিটার, ল্যান্ডার ও রোভার- এই তিনটি অংশ নিয়ে।
ইসরোর প্রতিষ্ঠাতার নামে চন্দ্রযান-৩ এর ল্যান্ডারের নাম রাখা হয়েছে বিক্রম, যার ওজন প্রায় দেড় হাজার কেজি। ওই বিক্রমই তার পেটের মধ্যে বহন করবে ২৬ কেজি ওজনের রোভার বা রোবটযান প্রজ্ঞানকে।
বিক্রম ঠিকঠাক চাঁদে নামতে পারলে এর পেট থেকে বেরিয়ে আসবে ছয় চাকার প্রজ্ঞান। চাঁদের পৃষ্ঠে ঘুরে ঘুরে সে পৃথিবীতে পাঠাবে তথ্য আর ছবি। এই রোভার সক্রিয় থাকবে চাঁদের এক দিন, যা পৃথিবীর ১৪ দিনের সমান।
পাঁচ ধরনের যন্ত্র বহন করছে চন্দ্রযানের রোভার। চন্দ্রপৃষ্ঠের গাঠনিক বৈশিষ্ট্য, পৃষ্ঠের কাছাকাছি বায়ুমণ্ডল এবং ভূগর্ভে নিচে কী ঘটছে তা জানার চেষ্টা করবেন বিজ্ঞানীরা।
ইসরো প্রধান শ্রীধরা পানিকার সোমনাথ আশা করছেন, এই অভিযানে নতুন কিছু খুঁজে পাবেন তারা।
চাঁদের যে অংশে চন্দ্রযান পৌঁছাতে চায়, সেই দক্ষিণ মেরু নিয়ে মানুষের গবেষণা খুব বেশি এগোয়নি। ছায়ায় ঢাকা ওই অঞ্চল চাঁদের উত্তর মেরুর চেয়ে অনেকটা বড়। ধারণা করা হয়, সবসময় অন্ধকারে থাকা ওই অঞ্চলে পানির অস্তিত্ব থাকতেও পারে।