আবেদনে ফিলিস্তিনের গাজায় যুদ্ধ চলার মধ্যে ইসরায়েলকে অস্ত্র ও সামরিক সরঞ্জাম রপ্তানির জন্য ভারতীয় বিভিন্ন কোম্পানিকে দেওয়া লাইসেন্স বাতিল বা স্থগিত করতে সরকারকে নির্দেশ দেওয়ার দাবি জানানো হয়েছে।
Published : 05 Sep 2024, 09:13 PM
ইসরায়লে অস্ত্র ও সামরিক সরঞ্জাম সরবরাহ বন্ধ করতে ভারত সরকারের বিরুদ্ধে সুপ্রিম কোর্টে আবেদন করেছেন বেশ কয়েকজন অবসরপ্রাপ্ত কূটনীতিক, শিক্ষাবিদ ও অধিকারকর্মী।
আবেদনে তারা গাজায় চলমান যুদ্ধের মধ্যে ইসরায়েলকে অস্ত্র ও সামরিক সরঞ্জাম রপ্তানির জন্য ভারতীয় বিভিন্ন কোম্পানিকে দেওয়া লাইসেন্স বাতিল বা স্থগিত করতে সরকারকে নির্দেশ দেওয়ার দাবি জানিয়েছে আদালতের কাছে।
ভারতীয় পত্রিকা দ্য হিন্দু জানায়, বিশিষ্ট আইনজীবী প্রশান্ত ভূষণ ও শেরিল ডি সুজার মাধ্যমে বুধবার সুপ্রিম কোর্টে আবেদন দাখিল করা হয়েছে। এতে বলা হয়, গাজায় যুদ্ধ চলার এই সময়ে ইসরায়েলকে অস্ত্র সরবরাহ করাটা আন্তর্জাতিক আইনের আওতায় ভারতের বাধ্যবাধকতার লঙ্ঘন। একইসঙ্গে তা ভারতের সংবিধানের ৫১ তম অনুচ্ছেদ এবং মানুষের জীবনের মৌলিক অধিকার ও সমান অধিকারেরও লঙ্ঘন।
আবেদনে কয়েকটি কোম্পানির নাম দেওয়া হয়েছে। এর মধ্যে আছে প্রতিরক্ষামন্ত্রণালয়ের অধীন একটি পাবলিক সেক্টর এন্টারপ্রাইজ, মিউনিশনস ইন্ডিয়া লিমিটেড, প্রেমিয়ার এক্সপ্লোসিভস, আদানি ডিফেন্স এবং এয়ারোপেস লিমিটেড ও অন্যান্য আরও কোম্পানি।
আবেদনে বলা হয়, ভারত অনেক আন্তর্জাতিক আইন ও চুক্তি মেনে চলতে বাধ্য। এর আওতায় যুদ্ধাপরাধে দোষী কোনও দেশকে সামরিক অস্ত্র সরবরাহ করার বাধ্যবাধকতা ভারতের নেই। কারণ এমন দেশে যে কোনও অস্ত্র রপ্তানিতে আন্তর্জাতিক আইন মারাত্মকভাবে লঙ্ঘিত হতে পারে।
জেনোসাইড কনভেনশনের অধীনেও ভারতের কিছু বাধ্যবাধকতা আছে। আর সে কারণে ভারত ইসরায়েলে কোনও সামরিক সাজসরঞ্জাম বা অস্ত্র রপ্তানি করতে পারে না, যেখানে এই অস্ত্র যুদ্ধাপরাধে ব্যবহার হওয়ার ঝুঁকি আছে- বলেও আবেদনে উল্লেখ করা হয়।
এতে আরও বলা হয়, ভারত গতবছর ডিসেম্বরে গাজায় যুদ্ধবিরতি নিয়ে জাতিসংঘের একটি প্রস্তাবের পক্ষে ভোট দিয়েছিল। কিন্তু এবছর এপ্রিলে ইসরায়েলের ওপর অস্ত্র নিষেধাজ্ঞা আরোপ এবং যুদ্ধবিরতির আহ্বান জানিয়ে যে প্রস্তাব জাতিসংঘে পেশ করা হয়েছিল, তাতে ভারত ভোটদানে বিরত ছিল। এতে ফিলিস্তিনে গণহত্যা চলার প্রেক্ষাপটে ভারতের অবস্থান গুরুতর প্রশ্নের মুখে পড়েছে।
গতবছর ৭ অক্টোবর ইসরায়েল গাজায় যুদ্ধ শুরুর পর থেকে এখন পর্যন্ত প্রাণ হারিয়েছেন ৩৭ হাজারের বেশি মানুষ, যাদের অধিকাংশই নারী ও শিশু।
নিরপরাধ নাগরিককে যথাসম্ভব বাঁচিয়ে হামাসকে কী করে নির্মূল করা যায়, তা ইসরায়েল জানে না। এ পরিস্থিতিতে ভারত কোন যুক্তিতে ইসরায়েলকে অস্ত্র পাঠাতে পারে সেটি প্রশ্নসাপেক্ষ। বিশেষ করে ভারত যেখানে বরাবরই ফিলিস্তিনকে সমর্থন দিয়ে এসেছে।
তাই গাজায় যুদ্ধের মধ্যে ভারত ইসরায়েলকে যুদ্ধাস্ত্র সরবরাহ করবে কিনা সে প্রশ্ন ক্রমেই বড় হয়ে উঠেছে। তাছাড়া, বিশ্বে ভারতের ভাবমূর্তি একটি শান্তিকামী দেশের। উন্নয়নশীল বিশ্বের নেতৃত্বেও নিজেদের জাহির করতে চায় ভারত। সেই প্রেক্ষাপটে ইসরায়েলকে অস্ত্র সরবরাহ কতটা ঠিক? আছে সে প্রশ্নও।