বর্ষীয়ান এ রাজনীতিবিদকে হত্যায় বস্তি পুনর্বাসন মামলার যোগ আছে কি না তাও খতিয়ে দেখা হচ্ছে।
Published : 13 Oct 2024, 11:44 AM
মহারাষ্ট্রের সাবেক মন্ত্রী বাবা সিদ্দিকী হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় গ্রেপ্তার দুজন নিজেদেরকে লরেন্স বিষ্ণোই গ্যাংয়ের সদস্য বলে দাবি করেছেন।
তবে পুলিশ এখনো ওই দাবির সত্যতা যাচাই করতে পারেনি, ওই গ্যাংও ঘটনার দায় স্বীকার করেনি।
শনিবার রাতে মুম্বাইয়ের শহরতলি বান্দ্রায় দশেরার বাজি ফোটানোর সময় তিনবারের বিধায়ক বাবা সিদ্দিকীকে গুলি করে হত্যা করা হয়।
এনডিটিভি লিখেছে, মহারাষ্ট্রের ভোটের আগে রাজ্যের রাজধানীতে ঘটা এ হত্যাকাণ্ডের পর নিরাপত্তা নিয়ে উদ্বেগ তৈরি হয়েছে।
ঘটনার সময় বাবা সিদ্দিকী তার ছেলে বান্দ্রা পূর্বের বিধায়ক জিশান সিদ্দিকীর অফিসের কাছে অবস্থান করছিলেন। তার অবস্থানের তথ্য দুষ্কৃতকারীরা কোনোভাবে জেনে যায় বলে ধারণা করছে পুলিশ। ওই রাজনীতিককে লক্ষ্য করে মোট ছয়টি গুলি ছোড়া হয়, যার মধ্যে চারটিই তার বুকে লাগে।
প্রাথমিক তদন্তের পর পুলিশ বলছে, ভাড়াটে খুনি দিয়ে বাবা সিদ্দিকীকে হত্যা করা হয়েছে, ঘটনা তদন্তে তারা চারটি বিশেষ দল গঠন করেছে।
গুলির ঘটনায় তিনজন জড়িত বলে জানিয়েছে পুলিশ। তাদের মধ্যে দুজনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে, অন্যজনকে ধরা সম্ভব হয়নি। গ্রেপ্তার কর্নেইল সিংহ হরিয়ানার বাসিন্দা’ আর ধরমরাজ কাশ্যপের বাড়ি উত্তরপ্রদেশে।
সূত্রের বরাতে এনডিটিভি লিখেছে, মুম্বাই পুলিশের অপরাধ শাখার জিজ্ঞাসাবাদে গ্রেপ্তাররা বলেছেন, ঘটনাস্থলটি তারা এক মাস ধরে রেকি করেছিল।
পুলিশের অপরাধ শাখা সূত্র বলছে, খুনের সঙ্গে জড়িত তিনজন বৃহস্পতিবার রাতে অটোরিকশায় করে সেখানে পৌঁছায় এবং গুলি চালানোর আগে কিছুক্ষণ অপেক্ষা করে।
বাবা সিদ্দিকী হত্যা মামলা দুই দৃষ্টিকোণ থেকে তদন্ত করার কথা জানিয়েছে পুলিশ। একটি বিষ্ণোই গ্যাংয়ের সংশ্লিষ্টতা, অন্যটি বস্তি পুনর্বাসন মামলা সম্পর্কিত।
বলিউড তারকা সালমান খানের সঙ্গে বাবা সিদ্দিকীর ঘনিষ্ঠতার কারণে বিষ্ণোই গ্যাংয়ের সম্পৃক্ততা নিয়ে সন্দেহ করা হচ্ছে। এর আগে লরেন্স বিষ্ণোইয়ের কাছ থেকে হুমকি পেয়েছিলেন সালমান।
নিহতের ঘনিষ্ঠ সূত্রের বরাতে এনডিটিভি লিখেছে, ১৫ দিন আগে তাকে হত্যার হুমকি দেওয়া হয়েছিল এবং তাকে ‘ওয়াই' ক্যাটাগরির নিরাপত্তা দেওয়া হয়েছিল।
তবে বাবা সিদ্দিকীর তরফে বিষ্ণোই গ্যাংয়ের কোনো হুমকির কথা বলা হয়নি বলে জানিয়েছে পুলিশ।
ভারতের কেন্দ্রীয় তদন্ত সংস্থাগুলো মুম্বাই পুলিশের সঙ্গে যোগাযোগ রাখছে এবং গুজরাট ও দিল্লির পুলিশ এই মামলা তদন্ত করছে।
কয়েক ডজন মামলা মাথায় নিয়ে লরেন্স বিষ্ণোই বর্তমানে গুজরাটের একটি কারাগারে বন্দি আছেন, তবে তার চক্র মুক্তিপণের জন্য ব্যবসায়ীদের ফোন কল দিয়ে সংবাদের শিরোনাম হয়েছে।
১৯৯৮ সালের দুই কৃষ্ণসার হরিণ হত্যা মামলা থেকে সালমান রেহাই পেলেও লরেন্স বিষ্ণোইয়ের ‘নিশানার তালিকায়’ তিনি রয়েছেন।
কারণ বিষ্ণোই সম্প্রদায়ের মানুষ কৃষ্ণসার বা চিংকার হরিণকে পবিত্র বলে মনে করে, বলতে গেলে তারা পূজা করে।
পুলিশ সূত্রের বরাতে এনডিটিভি লিখেছে, বিষ্ণোই চক্রে ৭০০ জনেরও বেশি ‘শুটার’ রয়েছে, যারা ভারতজুড়ে ছোট-বড় অপরাধী হিসেবে কাজ করে। সাম্প্রতিক বেশ কয়েকটি খুনের ঘটনায় বিষ্ণোইয়ের দলের যোগ পেয়েছে পুলিশ, যার মধ্যে র্যাপার সিধু মুসেওয়ালা এবং দিল্লির একটি জিম মালিকের হত্যাকাণ্ড আছে, যিনি আফগান বংশোদ্ভূত ছিলেন।
আনন্দবাজার লিখেছে, গত ফেব্রুয়ারিতেই কংগ্রেসের সঙ্গে পাঁচ দশকের সম্পর্ক ত্যাগ করে অজিত পাওয়ারের জাতীয়তাবাদী কংগ্রেস পার্টিতে (এনসিপি) যোগ দেন বাবা সিদ্দিকী। সত্তরের দশকে কংগ্রেসের ছাত্র সংগঠন থেকে মূল স্রোতের রাজনীতিতে এসেছিলেন সিদ্দিকী।
১৯৯৯ সালে প্রথম বিধানসভা ভোটে জয়ী হয়েছিলেন বান্দ্রা এলাকার এই নেতা। ২০০৯ সাল পর্যন্ত তিন বার ভোটে জিতলেও ২০১৪ এবং ২০১৯ সালের বিধানসভা ভোটে বান্দ্রা পশ্চিম কেন্দ্র থেকে তিনি হেরেছিলেন।
বলিউডের সঙ্গে বাবা সিদ্দিকীর যোগাযোগ নিয়ে মুম্বাইয়ে আলোচনা রয়েছে জানিয়ে আনন্দবাজার লিখেছে, বিভিন্ন সময়ে তার দেওয়া ইফতার পার্টিতে বলিউড তারকাদের দেখা গেছে। ২০১৩ সালে তার পার্টিতেই ‘মানভঞ্জন’ হয় শাহরুখ খান ও সালমন খানের।
দুই খানকে দু’পাশে নিয়ে তোলা তার সেই ছবি স্মরণীয় হয়ে আছে বলে মনে করেন অনেকেই।