কোভিড সংক্রমণ ছড়িয়ে পড়া রোধে গত প্রায় তিন মাস ধরে চীনের তিব্বত অঞ্চলের রাজধানী লাসায় কঠোর লকডাউন চলছে।
Published : 27 Oct 2022, 09:43 PM
চীনের তিব্বত অঞ্চলের রাজধানী লাসায় কোভিড-১৯ সংক্রমণের বিস্তার রোধে আরোপ করা কঠোর বিধিনিষেধের বিরুদ্ধে বড় ধরনের বিক্ষোভের কিছু ভিডিও অনলাইনে প্রকাশ পেয়েছে।
ভিডিওগুলোতে শত শত মানুষকে বিক্ষোভ করতে দেখা যাচ্ছে। পুলিশের সঙ্গে তাদের সংঘর্ষও হয়েছে। বিক্ষোভকারীদের বেশিরভাগই আদিবাসী হান চীনা। যারা অভিবাসী শ্রমিক হিসেবে তিব্বতে কাজ করেন।
কোভিড-১৯ সংক্রমণ ছড়িয়ে পড়া রোধে গত প্রায় তিন মাস ধরে লাসায় কঠোর লকডাউন চলছে। চীনের যেসব অঞ্চলের উপর সরকার কঠোর নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থা জারি করে রেখেছে তিব্বত তার একটি। যে কারণে তিব্বতের ভেতরের খবর বাইরের বিশ্ব খুব একটা জানতে পারে না।
বিবিসি জানায়, বুধবার বিকালে বিক্ষোভ শুরু হয়। রাতেও তা অব্যাহত ছিল। একটি ভিডিওতে দেখা যায়, কয়েকশ লোক সড়কে জড়ো হয়েছে। নিরাপত্তা কর্মকর্তারা তাদের একটি প্রান্তে আটকে দিয়েছে। লাউডস্পিকারে কর্মকর্তাদের একজনকে বলতে শোনা যায়, ‘‘দয়া করে পরিস্থিতি উপলব্ধি করুন এবং ফিরে যান।”
আরেকটি ভিডিওতে রাতে সড়কে বেশ কয়েকজনকে দেখা যায়। সেখানে একজনকে মান্দারিন ভাষায় চিৎকার করে বলতে শোনা যায়, ‘‘তারা অনেক দীর্ঘ সময় ধরে লকডাউন দিয়ে রেখেছে। এখানে অনেক মানুষ আছেন যারা শুধু মাত্র কাজ করতে ও অর্থ উপার্জন করতে এই নগরীতে এসেছেন। যদি তারা চীনের মূলভূখণ্ডে সেটা করতে পারতেন তবে এখানে আসতেন না।”
আরেকটি ভিডিওতে একটি ব্যানার নিয়ে লোকজনকে সড়কে মিছিল করতে দেখা যায়। সেখানে লেখা, ‘‘আমরা শুধু বাড়ি ফিরতে চাই।”
বিবিসি এইসব ভিডিওর সত্যতা যাচাই করতে পারেনি। ভিডিওগুলো চীনের সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম থেকে সরিয়ে ফেলা হয়েছে। কিন্তু সরানোর আগেই সেগুলো টুইটারে রি-পোস্ট করার কারণে সেখানে ভিডিও রয়ে গেছে।
তিব্বতের একটিপক্ষ রেডিও ফ্রি এশিয়ায় (আরএফএ) বলেছে, বিক্ষোভকারীরা হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করে বলেছেন, যদি লকডাউন তুলে নেওয়া না হয় তবে তারা ‘আগুন ধরিয়ে দেবেন’। এটা বলে তারা আসলে ঠিক কী বোঝাতে চাইছেন তা নিশ্চিত হওয়া যায়নি।
আরেকটি সূত্র থেকে বলা হয়, তারা আশঙ্কা করছেন সাধারণ মানুষ ও পুলিশের মধ্যে যে কোনো সময় সংঘাত শুরু হয়ে যেতে পারে।
পুরো নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক লাসার এক বাসিন্দা বিবিসি-কে বলেন, সেখানে এখনো লকডাউন চলছে এবং তিনি স্বচক্ষে কোনো বিক্ষোভ দেখেননি। তবে চ্যাট গ্রুপগুলোতে ছড়িয়ে পড়া বিক্ষোভের নানা ভিডিও তিনিও দেখেছেন।
তিনি বলেন, ‘‘লোকজন প্রতিদিনই বাড়িতে বন্দি হয়ে আছেন এবং জীবন অনেক কঠিন হয়ে পড়েছে। লাসায় নিত্যপণ্যের দাম অনেক বেড়ে গেছে এবং বাড়িরমালিকরা ভাড়া আদায় করতে ভাড়াটিয়াদের চাপ দিচ্ছেন।
‘‘শ্রমিকদের এমনকি তাদের নিজ নিজ শহরে ফিরে যেতেও দেওয়া হচ্ছে না। তাদের সামনে কোনো পথ খোলা নেই। এ অবস্থায় লোকজন একটা উপায় চাইছেন..এমনকি যদি তাদের এই শহর ছাড়তে দেওয়া হয় তাতেও রাজি।”
লাসার বাসিন্দা ওই নারী নিজের নাম শুধুমাত্র হান বলেছেন। তিনি নিজে ৮০ দিন ধরে লকডাউনে বন্দি হয়ে আছেন। বলেন, মাঝে-মধ্যে লোকজন শুধু নিজেদের বাড়ির কম্পাউন্ডে হাঁটাহাঁটি করার অনুমতি পান। তার বাইরে নয়।
করোনাভাইরাসের সংক্রমণ ছড়িয়ে পড়া প্রতিরোধে চীন ‘জিরো-কোভিড নীতি’ গ্রহণ করেছে। ফলে যেখানেই কোভিড শনাক্তের খবর প্রকাশ পাচ্ছে সেখানেই কঠোর লকডাউন জারি করা হচ্ছে। এমনকী যেখানে লকডাউন জারি করা হয়েছে সেখানে অফিস বা কর্মক্ষেত্র কিন্তু বসবাস করেন অন্য এলাকা এমন লোকদেরও লকডাউন চলাকালে বাড়িতে ফেরার অনুমতি দেওয়া হচ্ছে না।
‘জিরো-কোভিড নীতির’ মাধ্যমে চীন কোভিড-১৯ সংক্রমণ ছড়িয়ে পড়া আটকাতে বেশ সফল হয়েছে, অনেক জীবনও এতে রক্ষা পেয়েছে। কিন্তু লকডাউনের সময় মানুষের ভোগান্তি চরমে পৌঁছেছে। দেশটির অর্থনীতির উপরও এর নেতিবাচক প্রভাব পড়ছে।