সুইস বায়ুর মান বিষয়ক কোম্পানির লাইভ র্যাঙ্কিংয়ে বিশ্বের সবচেয়ে দূষিত নগরী হিসাবে পাকিস্তানের লাহোরকেও ছাড়িয়ে গেছে ভারতের রাজধানীর বায়ুদূষণ।
Published : 13 Nov 2024, 08:25 PM
ভারতের রাজধানী দিল্লির বায়ু দূষণ পৌঁছছে ‘মারাত্মক’ পর্যায়ে। দিল্লির বাতাসের গুনমান ‘এয়ার কোয়ালিটি ইনডেক্স’ (একিউআই) ৪০০-র গন্ডি পেরিয়ে দাঁড়িয়েছে ৪১৮ তে। অর্থাৎ, এ মুহূর্তে বাতাসে ভাসমান সূক্ষ ধূলিকণার পরিমাণ জনস্বাস্থ্যের জন্য 'অত্যন্ত ক্ষতিকর'।
বুধবার সকাল থেকে দিল্লি ও পার্শ্ববর্তী নয়ডা, গাজিয়াবাদ, গুরুগ্রাম ও ফরিদাবাদে ঘন ধোঁয়াশার স্তর দেখা গেছে। এর জেরে সকাল ৭টা থেকে দিল্লিতে নামতে পারেনি ৭টি উড়োজাহাজ। সেগুলোর ছয়টিকে জয়পুর এবং একটিকে লাখনউয়ে পাঠিয়ে দেওয়া হয় বলে জানানো হয়েছে ভারতীয় পত্রিকাগুলোতে।
বার্তা সংস্থা রয়টার্স জানায়, সুইস বায়ুর মান বিষয়ক প্রযুক্তি কোম্পানি আইকিউএয়ার-এর লাইভ র্যাঙ্কিংয়ে বিশ্বের সবচেয়ে দূষিত নগরী হিসাবে পাকিস্তানের লাহোরকেও ছাড়িয়ে গেছে দিল্লির বায়ুদূষণ।
বাতাসের মান নির্ভর করে ভাসমান সূক্ষ্ম ধূলিকণার পরিমাণ (পার্টিকুলেট ম্যাটার বা পিএম-১০) এবং অতি সূক্ষ্ম ধূলিকণার পরিমাণের (পিএম ২.৫) ওপর, যা পরিমাপ করা হয় প্রতি ঘনমিটারে মাইক্রোগ্রাম (পার্টস পার মিলিয়ন-পিপিএম) এককে।
দূষণের মাত্রা বুঝতে পিএম ২.৫, পিএম ১০ ছাড়াও সালফার ডাই অক্সাইড, কার্বন মনো-অক্সাইড, নাইট্রোজেন ডাই-অক্সাইড ও গ্রাউন্ড লেভেল ওজোনে সৃষ্ট বায়ুদূষণ বিবেচনা করে তৈরি করা হয় এয়ার কোয়ালিটি ইনডেক্স বা একিউআই।
এয়ার কোয়ালিটি ইনডেক্স ৫১ থেকে ১০০ হলে তাকে ‘মাঝারি’ বা ‘গ্রহণযোগ্য’ মানের বায়ু হিসেবে বিবেচনা করা হয়। ১০১ থেকে ১৫০ স্কোরকে ‘সংবেদনশীল গোষ্ঠীর জন্য অস্বাস্থ্যকর’ ধরা হয়।
স্কোর ১৫১ থেকে ২০০ হলে তা ‘অস্বাস্থ্যকর’ বায়ু। স্কোর ২০১ থেকে ৩০০ হলে তাকে ‘খুবই অস্বাস্থ্যকর’ বায়ু ধরা হয়। ৩০১ থেকে তার ওপরের স্কোরকে ‘দুর্যোগপূর্ণ’ বা ‘ঝুঁকিপূর্ণ’ ধরা হয়।
আর স্কোর ৪০১ এর ওপরে গেলে তা ‘মারাত্মক’ বলেই বিবেচনা করা হয়।এ পর্যায়ের বায়ুদূষণে স্বাস্থ্যবান মানুষও অসুস্থ হয়ে পড়তে পারে এবং অসুস্থ মানুষেরা আরও গুরুতর অসুস্থ হয়ে পড়তে পারে।
ভারতের রাজধানী দিল্লির বায়ুদূষণ পরিস্থিতি অবশ্য আচমকাই এতটা খারাপ হয়নি। গত মাসের শেষেই দেখা গিয়েছিল শীত মৌসুম শুরু হতে না হতেই দিল্লিতে দূষণের মাত্রা বাড়তে শুরু করেছে এবং বাতাসের গুণমান সূচকও হু হু করে কমছে।
পাঞ্জাব, হরিয়ানা এবং পশ্চিম উত্তরপ্রদেশের কৃষিজমিতে নাড়া (ফসলের গোড়া) আর খড়বিচালি পোড়ানোর কারণেই দিল্লিতে দূষণ মারাত্মক আকার ধারণ করতে থাকে।
পরিস্থিতি মোকাবেলায় দিল্লির দূষণ নিয়ন্ত্রক কমিটির পক্ষ থেকে বিজ্ঞপ্তি জারি করে ২০২৫ সালের ১ জানুয়ারি পর্যন্ত সব ধরনের বাজি উৎপাদন, বাজি সঞ্চয়, বিক্রি এবং পোড়ানোর উপর নিষেধাজ্ঞা জারি করা হয়েছে। দূষণ রোধে নিষেধাজ্ঞা না মেনে খড় পোড়ানোর অভিযোগে গ্রেপ্তারের ঘটনাও ঘটেছে। কিন্তু এরপরও পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে না আসার লক্ষণই দেখা যাচ্ছে।