যুক্তরাষ্ট্রের উচ্চ পর্যায়ের এই প্রতিনিধিদের পরিকল্পিত এ সফরকে ‘অত্যন্ত আগ্রাসী’ বলে তীব্র নিন্দা করেছেন গ্রিনল্যান্ডের বিদায়ী প্রধানমন্ত্রী মুটে বি এগেদে।
Published : 25 Mar 2025, 12:47 AM
যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডনাল্ড ট্রাম্পের গ্রিনল্যান্ড দখলের হুমকির মধ্যেই এবার দ্বীপটিতে সফরে যাওয়ার পরিকল্পনা করেছেন উচ্চ-পর্যায়ের মার্কিন প্রতিনিধিরা। আর তাতেই গ্রিনল্যান্ডে দেখা দিয়েছে ক্ষোভ। এ পরিকল্পনার তীব্র নিন্দা জানিয়েছেন গ্রিনল্যান্ডের রাজনীতিবিদরা।
যুক্তরাষ্ট্রের ভাইস প্রেসিডেন্ট জেডি ভ্যান্সের স্ত্রী উষা ভ্যান্স এ সপ্তাহেই সাংস্কৃতিক সফরে গ্রিনল্যান্ডে যাবেন। আর আলাদাভাবে দ্বীপটিতে সফর করবেন প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা মাইক ওয়ালটজ।
তাদের পরিকল্পিত এ সফরকে ‘অত্যন্ত আগ্রাসী’ বলে তীব্র নিন্দা করেছেন গ্রিনল্যান্ডের বিদায়ী প্রধানমন্ত্রী মুটে বি এগেদে। দুই মার্কিন প্রতিনিধিকে কোনও বৈঠকের জন্য আমন্ত্রণ জানানো হয়নি বলেও জানিয়েছেন তিনি।
অন্যদিকে, গ্রিনল্যান্ডের সম্ভাবনাময় পরবর্তী প্রধানমন্ত্রী তাদেরকে সম্মান প্রদর্শন না করার অভিযোগ তুলেছেন যুক্তরাষ্ট্রের বিরুদ্ধে ।
গ্রিনল্যান্ডের ওপর নজর ট্রাম্পের:
বিশ্বের বৃহত্তম দ্বীপ গ্রিনল্যান্ড আর্কটিক ও আটলান্টিক মহাসাগরের সংযোগস্থলে অবস্থিত। প্রায় ৩০০ বছর ধরে এটি ডেনমার্কের অধীনে রয়েছে, যদিও গ্রিনল্যান্ডের অভ্যন্তরীন প্রশাসন স্বাধীনভাবে পরিচালিত হয়। তবে, পররাষ্ট্র ও প্রতিরক্ষা বিষয়ক সিদ্ধান্ত নেওয়া হয় কোপেনহেগেন থেকে।
দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় থেকে যুক্তরাষ্ট্রের একটি সামরিক ঘাঁটি রয়েছে গ্রিনল্যান্ডে। নিরাপত্তার স্বার্থ ছাড়াও যুক্তরাষ্ট্রের ট্রাম্প প্রশাসন দ্বীপটির বিরল খনিজ সম্পদের প্রতিও আগ্রহী বলে মনে করা হয়।
গত জানুয়ারিতে হোয়াইট হাউজে যাওয়ার পর থেকেই প্রেসিডেন্ট ডনাল্ড ট্রাম্প বারবার বলেছেন, তিনি জাতীয় সুরক্ষার কারণে গ্রিনল্যান্ড নিজেদের দখলে নিতে চান। ট্রাম্পের ছেলে ডনাল্ড ট্রাম্প জুনিয়র জানুয়ারিতেই গ্রিনল্যান্ড সফর করেছিলেন।
ঊষা ও ওয়ালটজের সফর পরিকল্পনা:
সফরের পরিকল্পনা জানিয়ে হোয়াইট হাউজ এক বিবৃতিতে বলেছে, ঊষা ভ্যান্স গ্রিনল্যান্ডের ঐতিহাসিক স্থান পরিদর্শন করবেন এবং দ্বীপটির ঐতিহ্যবাহী জাতীয় কুকুর স্লেজ প্রতিযোগিতা দেখবেন।
তার সফরসঙ্গীদের মধ্যে ছেলে ভ্যান্স জুনিয়রও থাকবেন। গ্রিনল্যান্ডের সংস্কৃতি ও ঐক্যর উৎসবে সামিল হবেন তারা।
ওদিকে, ওয়ালটজের সফর সম্পর্কে মার্কিন সংবাদমাধ্যম সিবিএস নিউজকে এক সূত্র জানিয়েছেন, তিনি ঊষা ভ্যান্সের আগেই গ্রিনল্যান্ড সফরে যাবেন এবং তার সঙ্গে সফর করবেন জ্বালানি মন্ত্রী ক্রিস রাইট।
‘ক্ষমতা প্রদর্শনের চেষ্টা’
গ্রিনল্যান্ডের বিদায়ী প্রধানমন্ত্রী এগেদে বিশেষ করে ওয়াল্টজের পরিকল্পিত সফরকে ‘উস্কানিমূলক’ বলে নিন্দা করেছেন।
তিনি স্থানীয় সংবাদমাধ্যমকে বলেন, “জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা গ্রিনল্যান্ডে কী করবেন? একমাত্র উদ্দেশ্য হচ্ছে, আমাদের কাছে শক্তি প্রদর্শন করা।”
গ্রিনল্যান্ডের সম্ভাব্য পরবর্তী প্রধানমন্ত্রী জেনস-ফ্রেডরিক নিলসেনও একই পত্রিকায় পরিকল্পিত এই সফরের সমালোচনা করেছেন। তিনি বলেন, “যুক্তরাষ্ট্রের কর্মকর্তারা আমাদের স্থানীয় জনগণকে অসম্মান করছেন।”
তবে, মার্কিন জাতীয় নিরাপত্তা পরিষদের (এনএসসি) মুখপাত্র ব্রায়ান হিউজ বলেছেন, “আর্কটিক অঞ্চলে যুক্তরাষ্ট্রের গুরুত্বপূর্ণ স্বার্থ রয়েছে, তাই জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা এবং জ্বালানি মন্ত্রীর যুক্তরাষ্ট্রের একটি মহাকাশ ঘাঁটি পরিদর্শন করা বিস্ময়কর কিছু নয়। সেখানে মাঠ পর্যায়ে আমাদের কর্মরত সদস্যদের কাছ থেকে সরাসরি ব্রিফিং নিতেই তারা যাচ্ছেন।”
তিনি আরও বলেন, এ সফর “গ্রিনল্যান্ডের আত্মনিয়ন্ত্রণাধিকারকে সম্মান জানিয়ে অর্থনৈতিক সহযোগিতা আরও বাড়ানোর একটি সুযোগ” এবং “গ্রিনল্যান্ডের সংস্কৃতি, ইতিহাস ও জনগণ সম্পর্কে জানার একটি মাধ্যম।”
এমাসের শুরুর দিকে পশ্চিমা সামরিক জোট নেটোর মহাসচিব মার্ক রুত্তে সঙ্গে এক আলোচনায় ট্রাম্প ইঙ্গিত দেন, যুক্তরাষ্ট্রের আন্তর্জাতিক নিরাপত্তার স্বার্থে গ্রিনল্যান্ডকে নিজেদের অংশ করা প্রয়োজন হতে পারে।
ট্রাম্প বলেন, “মার্ক, আমরা এটা নিয়ে কথা বলব। আমাদের অনেক ‘প্রিয় খেলোয়াড়’ উপকূলের চারপাশে ঘুরছে, আমাদের সতর্ক থাকতে হবে।”
গ্রিনল্যান্ড যুক্তরাষ্ট্রের অংশ হতে পারে কি না—এমন প্রশ্নের জবাবে ট্রাম্প বলেন, “আমার মনে হয়, এটা ঘটবে।”
গ্রিনল্যান্ডের রাজনৈতিক দলগুলো এক যৌথ বিবৃতিতে ট্রাম্পের এই মনোভাবকে "অগ্রহণযোগ্য আচরণ" বলে নিন্দা জানিয়েছে।
গ্রিনল্যান্ডের নির্বাচনে প্রভাব:
সম্প্রতি গ্রিনল্যান্ডে অনুষ্ঠিত নির্বাচনে এ বিষয়টি আলোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে ছিল। বিদায়ী প্রধানমন্ত্রী মুটে এগেদে নেতৃত্বাধীন দল নির্বাচনে হেরেছে, আর বিজয়ী হয়েছে জেনস-ফ্রেডরিক নিলসেনের ডেমোক্র্যাটিক পার্টি, যারা ডেনমার্ক থেকে ধীরে ধীরে স্বাধীনতার পথে যাওয়ার পক্ষে।
এ মাসের শুরুর দিকে ট্রাম্প বলেছিলেন, তিনি গ্রিনল্যান্ডবাসীর নিজেদের ভবিষ্যৎ নির্ধারণের অধিকারকে জোরালোভাবে সমর্থন করেন। তিনি বলেন, “আপনারা বেছে নিলে আমরা আপনাদেরকে আমেরিকায় স্বাগত জানাব।”
গ্রিনল্যান্ডের সাম্প্রতিক জনমত জরিপগুলোতে দেখা গেছে, প্রায় ৮০ শতাংশ গ্রিনল্যান্ডবাসী ডেনমার্ক থেকে স্বাধীনতার পক্ষে। তবে, চলতি বছরের জানুয়ারিতে দ্বীপটিতে পরিচালিত আরেকটি জরিপে দেখা গেছে, এর চেয়েও বেশি মানুষ যুক্তরাষ্ট্রের অংশ হওয়ার ধারণা প্রত্যাখ্যান করেছে।