বিশ্বের সবচেয়ে বয়স্ক পুরুষের তালিকায় নাম তোলা জন টিনিসউড সদ্য ১১২ বছরে পা রেখে বলেছেন, কেন এত বেশি বছর বাঁচলেন তা তিনি নিজেও জানেন না।
Published : 27 Aug 2024, 12:42 AM
টাইটানিক জাহাজ ডুবে যাওয়ার বছরে জন্ম জন টিনিসউডের। বিশ্বের সবচেয়ে বয়স্ক পুরুষের খেতাব পাওয়া এই ব্যক্তি সোমবার ১১২ বছরে পা রেখেছেন। নতুন বছরে এই পদার্পন উদযাপন করতে গিয়ে টিনিসউড বলেছেন, তার এই দীর্ঘ জীবন পাওয়ার পেছনে ‘বিশেষ কোনও গোপন রহস্য নেই’।
১৯১২ সালের ২৬ অগাস্ট লিভারপুলে জন্মগ্রহণ করেন টিনিসউড। গিনেস ওয়ার্ল্ড রেকর্ডস-কে টিনিসউড বলেন, কেন তিনি এতদিন বাঁচলেন সে সম্পর্কে তার 'কোনও ধারণা নেই'।
১১৪ বছর বয়সী হুয়ান ভিসেন্তে পেরেজ মোরা মারা যাওয়ার পর গত এপ্রিলে বিশ্বের সবচেয়ে বয়স্ক জীবিত পুরুষের খাতায় নাম ওঠে টিনিসউডের। ইংল্যান্ডে সাউথপোর্টের একটি বৃদ্ধাশ্রমে তার বাস। লিভারপুল ফুটবল দলের ভক্ত তিনি।
বিবিসি জানায়, টিনিসউড তরুণ বয়েসে বেশ সক্রিয় ছিলেন। প্রচুর হাঁটাচলা করতেন। তবে তিনি নিজেকে অন্যদের থেকে আলাদা ভাবেন না।
তিনি বলেন, “জন্ম মৃত্যু কারো হাতে নেই, হয় আপনি দীর্ঘজীবী হবেন, নয়ত কম সময় বাঁচবেন।”
টিনিসউড বলেন, তিনি ‘অন্য যে কোনও কিছুর মতো’ ১১২ বছরে পদার্পণকে স্বাভাবিক ভাবেই নেবেন।
তার কথায়, “আমি এত লম্বা সময় ধরে কেন বেঁচে আছি, সে বিষয়ে আমার কোনও ধারণা নেই। এর পেছনে কোনও বিশেষ রহস্য থাকার ব্যাপারে আমি চিন্তাও করতে পারি না।”
পছন্দের ফুটবল ক্লাব লিভারপুল প্রতিষ্ঠার ২০ বছর পর টিনিসউডের জন্ম। ১৯০১ ও ১৯০৬ ছাড়া ক্লাবটির জেতা সব কটি ট্রফির খেলা দেখেছেন তিনি।
প্রথম বিশ্বযুদ্ধের সময় টিনিসউডের বয়স ছিল মাত্র দুই বছর। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ শুরুর সময় তিনি ছিলেন ২৭ বছরের তরুণ।
তখন তিনি আর্মি পে কর্পে প্রশাসক হিসেবে কাজ করতেন। তার দায়িত্ব ছিল আটকে পড়া সেনাদের অবস্থান খুঁজে বের করা এবং খাদ্য সরবরাহের ব্যবস্থা করা।
এখন টিনিসউড বিশ্বের প্রাচীনতম জীবিত পুরুষ হওয়ার পাশাপাশি দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের চাক্ষুস সাক্ষী।
১৯৪২ সালে বিয়ে করেন জন টিনিসউড। তার স্ত্রীর নাম ব্লডওয়েন। লিভারপুলে একটি নাচের অনুষ্ঠানে ব্লডওয়েনের সঙ্গে তার পরিচয় হয়েছিল। তাদের কন্যা সুজানের জন্ম ১৯৪৩ সালে।
৪৪ বছরের দীর্ঘ সংসার জীবন কাটানোর পর ১৯৮৬ সালে স্ত্রী ব্লডওয়েনের মৃত্যু হয়।
দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর জন টিনিসউড জ্বালানি কেম্পানি শেল ও বিপিতে হিসাবরক্ষক হিসেবে কাজ করেন। ১৯৭২ সালে তিনি অবসর নেন।
বিবিসি জানায়, টিনিসউড প্রতি শুক্রবার মাছ আর চিপস খাওয়া ছাড়া বিশেষ কোনও নিয়ম মেনে চলেন না। তিনি বলেন, ‘তারা যা দেয়, আমি তাই খাই। অন্যরাও তাই খায়। আমার কোনও বিশেষ খাদ্যাভ্যাস নেই।’
২০১২ সালে ১০০ বছর পূর্ণ হওয়ার পর টিনিসউড বরাবরই ইংল্যান্ডের রাজ পরিবার থেকে জন্মদিনের শুভেচ্ছাবার্তা পেয়ে আসছেন।
প্রথমে প্রয়াত রানি দ্বিতীয় এলিজাবেথের কাছ থেকে শুভেচ্ছা পেতেন। এলিজাবেথ প্রায় ১৪ বছরের ছোট ছিলেন। এরপর রাজা তৃতীয় চার্লসের কাছ থেকেও তিনি শুভেচ্ছা পাচ্ছেন।
শৈশব থেকে পৃথিবী খুব বেশি পরিবর্তিত হয়েছে বলে মনে করেন কিনা এমন প্রশ্নের জবাবে টিনিসউড বলেন, "খুব একটা পার্থক্য নেই।”
এর আগে, বিশ্বের সবচেয়ে বয়স্ক মানুষ ছিলেন জাপানের জিরোইমন কিমুরা। তিনি ১১৬ বছর ৫৪ দিন পর্যন্ত বেঁচে ছিলেন এবং ২০১৩ সালে মারা যান।
আর বর্তমানে বিশ্বের সবচেয়ে বয়স্ক জীবিত নারী হলেন জাপানের ১১৬ বছর বয়সী তোমিকো ইতোওকা।