রাশিয়ার গ্যাস পাইপলাইন বন্ধ করে দেওয়ায় ইউক্রেইনীয় শরণার্থীদের সহায়তা কমানোর এই হুমকি দিয়েছেন স্লোভাকিয়ার প্রধানমন্ত্রী
Published : 03 Jan 2025, 04:12 PM
রাশিয়ার গ্যাস সরবরাহ নিয়ে ইউক্রেইনের সঙ্গে বিরোধের জেরে স্লোভাকিয়ার প্রধানমন্ত্রী রবার্ট ফিকো এবার ১ লাখ ৩০ হাজারেরও বেশি ইউক্রেইনীয় শরণার্থীর আর্থিক সহায়তা কমানোর হুমকি দিয়েছেন।
ইউক্রেইন নতুন বছরের ১ জানুয়ারি থেকে একটি গ্যাস পাইপলাইন বন্ধ করেছে, এই পাইপলাইনটি দিয়ে দীর্ঘদিন ধরে মধ্য ইউরোপে রাশিয়ার প্রাকৃতিক গ্যাস সরবরাহ হয়ে আসছিল।
এই সরবরাহ ব্যবস্থার প্রধান প্রবেশদ্বার ছিল স্লোভাকিয়া। পাইপলাইনটির মাধ্যমে ট্রানজিট ফি বাবদ ৫০ কোটি ইউরো আয় করত স্লোভাকিয়া। এখন পাইপলাইন বন্ধ হয়ে যাওয়ায় দেশটি এই আয় হারানোর ঝুঁকিতে পড়েছে।
স্লোভাক প্রধানমন্ত্রী ফিকো ইউক্রেইনের পাইপলাইন বন্ধের পদক্ষেপকে ‘নাশকতা’ বলে বর্ণনা করেছেন। ফিকো বলেন, ইউক্রেইনে বিদ্যুৎ রফতানি বন্ধের প্রস্তাব দেবেন তিনি। একইসঙ্গে স্লোভাকিয়ায় থাকা ইউক্রেইনীয় শরণার্থীদের জন্য আর্থিক সহায়তাও তিনি অনেকখানি কমাবেন।
জাতিসংঘ শরণার্থী সংস্থা (ইউএনএইচসিআর) জানিয়েছে, স্লোভাকিয়ায় বর্তমানে ১ লাখ ৩০ হাজারের বেশি ইউক্রেইনীয় শরণার্থী আশ্রয় নিয়ে আছেন। তবে ফিকো বলেছেন, স্লোভাকিয়া গ্যাস সংকটে পড়বে না। কারণ, তার দেশ ইতোমধ্যেই বিকল্প ব্যবস্থা করে ফেলেছে।
২০১৪ সালে রাশিয়া ক্রাইমিয়া উপদ্বীপ নিজেদের অংশীভূত করে নেওয়ার পরের বছর ইউক্রেইন দেশটি থেকে গ্যাস কেনা বন্ধ করে দেয়। এরপর মস্কো ও কিইভের মধ্যকার বিপর্যস্ত সম্পর্ক ইউরোপে রাশিয়ার গ্যাস রপ্তানির সবচেয়ে পুরনো পাইপলাইনটি বন্ধ হওয়ার ক্ষেত্রে মূল ভূমিকা রাখে।
বুধবার এক বিবৃতিতে ইউক্রেইনের জ্বালানিমন্ত্রী জেওরমান হালুশচেঙ্কো বলেন, “রাশিয়ার গ্যাসের ট্রানজিট বন্ধ করে দিয়েছি আমরা। এটি একটি ঐতিহাসিক ঘটনা। রাশিয়া তার বাজার হারাচ্ছে, তারা আর্থিক ক্ষতির মুখে পড়বে।”
স্লোভাক প্রধানমন্ত্রী ফিকো অভিযোগ করে বলেছেন, ইউক্রেইনের এ সিদ্ধান্তের কারণে গ্যাস সরবরাহ ব্যবস্থায় জড়িত থাকা অন্যান্য দেশ থেকে ট্রানজিট ফি ববাদ পেয়ে আসা অর্থ স্লোভাকিয়া পাবে না। এতে স্লোভাকিয়ার বিপুল অঙ্কের আর্থিক ক্ষতি হবে।
এক্ষেত্রে স্লোভাকিয়ার জন্য একমাত্র বিকল্প হচ্ছে, ট্রানজিট চুক্তি নবায়ন করা অথবা আর্থিক ক্ষতি পুষিয়ে নিতে ক্ষতিপূরণ দাবি করা, বলেন ফিকো।
ইউক্রেইনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি গত মাসে রাশিয়াকে অর্থায়ন ও ইউক্রেইনকে দুর্বল করে পুতিনকে সহায়তা করার জন্য ফিকোকে দায়ী করেছিলেন। তিনি বলেছিলেন, ইউক্রেইনীয়দের ভোগান্তি আরও বাড়ানোর রাশিয়ার চেষ্টায় ফিকো স্লোভাকিয়াকেও টেনে আনছেন।
আর এখন স্লোভাকিয়া ইউক্রেইনের বিরুদ্ধে পাল্টা অভিযোগ করে শরণার্থীদের সহায়তা কমানোসহ বিদ্যুৎ রপ্তানি বন্ধের হুমকি দিল। তবে এই হুমকির সঙ্গে সঙ্গেই ইউক্রেইনের প্রতি সাহায্যের হাত বাড়িয়েছে পোল্যান্ড। স্লোভাকিয়া বিদ্যুৎ বন্ধের পদক্ষেপ নিলে প্রয়োজনীয় সমর্থন দিয়ে পাশে থাকবে বলে জানিয়েছে তারা।
পোল্যান্ড ইউক্রেইনের গ্যাস সরবরাহ বন্ধকে মস্কোর বিরুদ্ধে 'আরেকটি বিজয়' আখ্যা দিয়েছে। ইউরোপীয় কমিশন বলেছে, ইউরোপীয় ইউনিয়ন (ইইউ) এই পরিবর্তনের জন্য প্রস্তুত এবং অধিকাংশ দেশ তা সামাল দিতে পারবে। তবে মলদোভা ইইউ সদস্য নয়, তারা ইতোমধ্যে গ্যাস সংকটে পড়েছে।