বিশ্লেষকদের ধারণা, বেকারত্ব, বৈষম্য ও বিদ্যুৎ সঙ্কটের জন্য ক্ষুব্ধ জনগণের মনোভাবই প্রতিফলিত হয়েছে এবারের নির্বাচনে।
Published : 01 Jun 2024, 06:58 PM
দক্ষিণ আফ্রিকাকে বর্ণবাদের নিগ্রহ থেকে মুক্ত করেছিল যেই দল সেই আফ্রিকান ন্যাশনাল কংগ্রেসের তিন দশকের রাজনৈতিক আধিপত্যের অবসান ঘটতে যাচ্ছে, জাতীয় নির্বাচনে তাদের ভোটের অংশীদারিত্ব ৪০ শতাংশে নেমে এসেছে।
গত বুধবারে অনুষ্ঠিত নির্বাচনের ভোট গণনা শনিবার সকালে চূড়ান্ত পর্যায়ে প্রবেশ করাকালে এমনটি দেখা গেছে, ৯৮ শতাংশ কেন্দ্রের ভোট গণনায় এএনসি পেয়েছে ৪০ দশমিক ১৫ শতাংশ ভোট।
নেলসন ম্যান্ডেলার উত্তরাধিকারী দলটির জন্য এটি হতাশাজনক একটি ফল। পূর্ববর্তী ২০১৯ সালের পার্লামেন্ট নির্বাচনেও দলটি মোট ভোটের ৫৭ দশমিক ৫ শতাংশ পেয়েছিল। দুর্বল এই ফলাফলের কারণে এএনসিকে ক্ষমতা ধরে রাখতে হলে এবার অবশ্যই বিরোধী কোনো দলের সঙ্গে জোট গঠন করতে হবে, যা গত ৩০ বছরে অভাবিত ছিল।
বিশ্লেষকদের ধারণা, বেকারত্ব, বৈষম্য ও বিদ্যুৎ সঙ্কটের জন্য ক্ষুব্ধ জনগণের মনোভাবই প্রতিফলিত হয়েছে এবারের নির্বাচনে।
দেশটির প্রধান বিরোধীদল ডেমোক্র্যাটিক অ্যালায়েন্স (ডিএ) পেয়েছে ২১ দশমিক ৭১ শতাংশ ভোট এবং সাবেক প্রেসিডেন্ট জ্যাকব জুমার নেতৃত্বাধীন নবগঠিত রাজনৈতিক দল উমকুন্টো ওয়ে সিজওয়ে (এমকে) ১৪ দশমিক ৭৬ শতাংশ ভোট নিজেদের দিকে টানতে পেরেছে।
১৯৯৪ সালের ঐতিহাসিক নির্বাচনের মাধ্যমে দক্ষিণ আফ্রিকায় সংখ্যালঘু শ্বেতাঙ্গ শাসনের অবসান ঘটেছিল। ওই নির্বাচন থেকে শুরু করে পূর্ববর্তী প্রত্যেকটি জাতীয় নির্বাচনে এএনসি বিশাল ব্যবধানে বিজয়ী হয়েছিল। কিন্তু তাদের টানা শাসনের মধ্যেই গত এক দশকে দক্ষিণ আফ্রিকার অর্থনীতি স্থবির হয়েছে, বেকারত্ব বেড়েছে এবং সড়ক ও বিদ্যুৎ অবকাঠামো ভেঙে পড়েছে।
রয়টার্স জানিয়েছে, এমকে-র শক্তিশালী ফলাফল, বিশেষ করে জুমার নিজের প্রদেশ কোয়াজুলু-নাটালে, এএনসির নিরঙ্কুশ সংখ্যাগরিষ্ঠতা না পাওয়ার মূল কারণ। এখন এএনসিকে ক্ষমতায় থাকতে হলে জোট গঠন করতে হবে বা অন্তত একটি বা ছোট অনেকগুলো দলের সঙ্গে কোনো এক ধরনের সমঝোতায় যেতে হবে।
রাজনৈতিক দলগুলোর ভোটের হারে জাতীয় পরিষদে তাদের আসন সংখ্যা নির্ধারিত হবে। নতুন পার্লামেন্ট দেশটির পরবর্তী প্রেসিডেন্ট নির্বাচন করবে। আফ্রিকা মহাদেশের সবচেয়ে শিল্পোন্নত দেশটিতে বিনিয়োগ করেছেন এমন বিনিয়োগকারীদের আশা, অনিশ্চিত এই ছবিটি দ্রুতই পরিষ্কার হয়ে যাবে।
প্রেসিডেন্ট সিরিল রামাফোসা এখনও তার পদ ধরে রাখতে পারবেন বলেই মনে হচ্ছে, কারণ তার দল এএনসি নিকটবর্তী দলের চেয়ে প্রায় দ্বিগুণ ভোট পাওয়ার পথে রয়েছে। কিন্তু নির্বাচনের ফলাফলে তার অবস্থান বেশ দুর্বল হয়ে পড়েছে এবং একইসঙ্গে বিরোধী দলগুলো ও গভীরভাবে বিভক্ত তার নিজ দলের বিরোধীরা তাকে পদত্যাগের আহ্বান জানাতে পারে।
তবে শুক্রবার এএনসির একজন শীর্ষস্থানীয় নেতা পার্টির প্রধান নেতা হিসেবে রামাফোসার প্রতি সমর্থন জানিয়েছেন আর বিশ্লেষকরা বলছেন, দলে তার কোনো সুস্পষ্ট উত্তরসূরী নেই।
এএনসিকে ক্ষমতায় রাখতে বিরোধীদলের সঙ্গে চুক্তি করতে হতে পারে আর তাতে তাদের হয় মন্ত্রিসভার পদ দিতে হবে অথবা পার্লামেন্টের ওপর আরও নিয়ন্ত্রণের সুযোগ দিতে হবে, এমনকি স্পিকারের পদটিও দিতে হতে পারে।
দক্ষিণ আফ্রিকার নির্বাচন কমিশন রোববার ভোটের চূড়ান্ত ফল প্রকাশ করবে।