“চলমান স্থল আগ্রাসনে সবচেয়ে খারাপ পরিস্থিতি আসার এখনও বাকি,” বলছেন ইউএনআরডব্লিউএ প্রধান।
Published : 21 Mar 2025, 11:28 AM
গাজায় নতুন করে ইসরায়েলি হামলা শুরুর পাল্টায় তেল আবিবে তিনটি রকেট নিক্ষেপ করার কথা জানিয়েছে ফিলিস্তিনের মুক্তিকামী সংগঠন হামাস।
ইসরায়েল জানিয়েছে, তারা একটি ক্ষেপণাস্ত্র প্রতিহত করেছে এবং অন্যগুলো জনমানবহীন ভূমিতে পড়েছে।
হামাস পরিচালিত গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, গত মঙ্গলবার ইসরায়েল পুনরায় হামলা শুরু করার পর থেকে ২০০ জনেরও বেশি শিশুসহ কমপক্ষে ৫৯১ জন নিহত হয়েছে।
ইসরায়েলি প্রতিরক্ষা বাহিনী (আইডিএফ) বৃহস্পতিবার জানিয়েছে, তারা ফিলিস্তিনি ভূখণ্ডে স্থল অভিযান শুরু করেছে।
জানুয়ারিতে ইসরায়েল ও হামাসের মধ্যে যুদ্ধবিরতি শুরু হওয়ার পর এর আগে বড় আকারের সামরিক অভিযান বন্ধ ছিল।
আইডিএফ বৃহস্পতিবার রাতে জানিয়েছে, সেনারা মিশর সীমান্তের কাছে গাজার দক্ষিণে অবস্থিত রাফায় ‘স্থল তৎপরতা' শুরু করেছে।
তারা এক বিবৃতিতে বলেছে, সেনারা ‘ভেঙে ফেলেছে… সন্ত্রাসী অবকাঠামো’। আইডিএফ বাহিনী উত্তর ও মধ্য গাজাতেও স্থল তৎপরতা চালিয়ে যাচ্ছে।
ইসরায়েলের সামরিক বাহিনী এর আগে জানিয়েছিল, তারা গাজার উত্তর ও দক্ষিণের মধ্যে ‘আংশিক বাফার’ তৈরির জন্য ‘স্থল তৎপরতা’ শুরু করেছে। তারা একে ‘সীমিত স্থল অভিযান’ বলে বর্ণনা করছে।
আইডিএফের মুখপাত্র কর্নেল আভিচে আদ্রেই বলেন, উত্তর ও দক্ষিণ গাজাকে বিভক্তকারী নেটজারিম করিডোরে সেনা মোতায়েন করা হয়েছে।
নতুন করে সহিংসতার জন্য হামাসকে দোষারোপ করে ইসরায়েলি সরকারের মুখপাত্র ডেভিড মেনসার বলেছেন, তারা ‘এই উত্তেজনা বাড়াতে বাধ্য করেছে, তারা যুক্তরাষ্ট্র ও অন্য মধ্যস্থতাকারীর প্রস্তাবসহ প্রতিটি জিম্মি চুক্তি প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করেছে।
বিবিসি লিখেছে, যুদ্ধবিরতি চুক্তির মেয়াদ বৃদ্ধির আলোচনায় অগ্রগতি না আসার মধ্যে মঙ্গলবার ফের হামলা শুরু করে ইসরায়েল। দেশটি বলেছে, হামাস বাকি জিম্মিদের মুক্তি না দেওয়া পর্যন্ত তারা আরও তীব্র হামলা করবে বলে সতর্ক করেছে।
ইসরায়েল বলছে, হামাস এখনো ৫৯ জনকে জিম্মি করে রেখেছে, যাদের মধ্যে ২৪ জন এখনো জীবিত আছেন বলে ধারণা করা হয়।
জাতিসংঘের ফিলিস্তিনি শরণার্থী সংস্থা ইউএনআরডব্লিউএ’র প্রধান ফিলিপ লাজ্জারিনি এক্স পোস্টে জানিয়েছেন, গত কয়েকদিনে প্রাণ হারানোদের মধ্যে জাতিসংঘের ফিলিস্তিনি শরণার্থী সংস্থা ইউএনআরডব্লিউএ’র পাঁচ কর্মী রয়েছে।
“তারা শিক্ষক, চিকিৎসক ও নার্স ছিলেন।”
চলমান স্থল আগ্রাসনে ‘সবচেয়ে খারাপ পরিস্থিতি আসার এখনও বাকি’ বলেও সতর্ক করে দিয়েছেন তিনি।
জাতিসংঘ বুধবার জানিয়েছে, মধ্য গাজার দেইর আল-বালাহ এলাকায় তাদের দপ্তর প্রাঙ্গণে ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার পর তাদের এক কর্মী নিহত হয়েছে। ঘটনাটি এখনও স্পষ্ট নয় বলে তারা জানালেও জাতিসংঘের অফিস ফর প্রজেক্ট সার্ভিসেস (ইউএনওপিএস) প্রধান জর্জ মোরেইরা বলেছেন, এটি নিছকই কোনো দুর্ঘটনা ছিল না, অন্তত এটি একটি ঘটনা।
গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, ইসরায়েলি হামলায় আরও পাঁচজন আহত হয়েছে। ইসরায়েলের সামরিক বাহিনী জানিয়েছে, তারা ওই দপ্তর প্রাঙ্গণে হামলা চালায়নি, তবে ঘটনাটি তদন্ত করে দেখা হচ্ছে।
ইসরাইলের প্রধান অস্ত্র সরবরাহকারী দেশ যুক্তরাষ্ট্র বলেছে, তারা অস্ত্র সরবরাহের বিষয়ে আন্তর্জাতিক আইন মেনে চলতে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ।
হোয়াইট হাউসের প্রেস সেক্রেটারি ক্যারোলিন লেভিট বলেছেন, সাম্প্রতিক দিনগুলোতে ইসরায়েল ও আইডিএফ যেসব পদক্ষেপ নিয়েছে, তাতে যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডনাল্ড ট্রাম্পের ‘পূর্ণ সমর্থন’ রয়েছে।
যুক্তরাজ্যের পররাষ্ট্রমন্ত্রী ডেভিড ল্যামি বৃহস্পতিবার নিশ্চিত করেছেন, জাতিসংঘ দপ্তর প্রাঙ্গণে হামলায় একজন ব্রিটিশ নাগরিক আহত হয়েছে। একটি দাতব্য সংস্থা জানিয়েছে, তাদের ৫১ বছর বয়সী ব্রিটিশ এক কর্মী আহত হয়েছেন, যিনি বোমা নিষ্ক্রিয়করণ বিশেষজ্ঞ।
এমপিদের ল্যামি বলেন, “এই সময়ে তাদের এবং তাদের পরিবারের পাশে থাকা দরকার।”
দক্ষিণ গাজার খান ইউনিসের নাসের হাসপাতালে কাসিম আবু শারকিয়া বলেন, পাঁচ বছর ধরে চেষ্টার পর ইন ভিট্রো ফার্টিলাইজেশনের (আইভিএফ) মাধ্যমে ছেলের জন্ম হয়। তাঁবুতে হামলায় তার এই দুই বছর বয়সী ছেলে মারা গেছে।
“ওমর আমার একমাত্র ছেলে, হে দুনিয়া, আমার আর কেউ নেই।”
সেখানকার একজন চিকিৎসক তানিয়া হাজ হাসান বিবিসির নিউজআওয়ারকে বলেন, তিনি অন্তত ৭৬ জনের কথা শুনেছেন যাদেরকে জরুরি বিভাগে নেওয়া যায়নি। তাদেরকে সরাসরি মর্গে নিয়ে যাওয়া হয়েছে।
স্মরণ করে তিনি বলেন, “বিভীষিকা ও দুর্বৃত্তপনার এমন স্তর, যা স্পষ্ট করে তুলে ধরা সত্যিই কঠিন- আর্মাগেডনের (শুভ ও অশুভ শক্তির সর্বশেষ যুদ্ধ সংঘটিত হবে বলে বাইবেলের ভবিষ্যদ্বাণী) মতো অনুভূতি হয়েছিল।”
এদিকে জিম্মিদের ফিরিয়ে দেওয়ার দাবিতে জেরুজালেম ও তেল আবিবে নেতানিয়াহুবিরোধী বিক্ষোভ দেখিয়েছে হাজার হাজার ইসরায়েলি।
সেখানে বেশ কয়েকজনকে গ্রেপ্তার করা হয়। বিক্ষোভকারীদের দমাতে পুলিশ একটি জলকামান রেখেছিল।
ইয়েমেনের হুথি বিদ্রোহীরা বৃহস্পতিবার তেল আবিবের কাছে বেন গুরিয়ন বিমানবন্দর লক্ষ্য করে দূরপাল্লার ক্ষেপণাস্ত্র নিক্ষেপ করেছে বলে ইরান সমর্থিত গোষ্ঠীটির সামরিক মুখপাত্র জানিয়েছেন।
এতে কেউ হতাহত হয়নি। আইডিএফ জানিয়েছে, ইসরায়েলে প্রবেশের আগে ক্ষেপণাস্ত্রটিকে ঠেকানো হয়।
ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু মঙ্গলবার বলেছেন, তারা ‘পূর্ণ শক্তিতে যুদ্ধ শুরু করেছেন’ এবং যেকোনো যুদ্ধবিরতি আলোচনাকে এখন আগুনে ছুড়ে ফেলা হবে।
জিম্মিদের পরিবারের প্রতিনিধিত্বকারী একটি গোষ্ঠী অভিযোগ করেছে, ইসরায়েলি সরকার নতুন করে হামলা চালিয়ে ‘জিম্মিদের হাল ছেড়ে দেওয়ার’ পথ বেছে নিয়েছে।
গত ১ মার্চ প্রথম দফার যুদ্ধবিরতি শেষ হয়েছে। এরপর তার মেয়াদ বৃদ্ধির আলোচনায় একমত হতে পারেনি ইসরায়েল ও হামাস।
ইসরায়েলের শর্তে যুদ্ধবিরতি নিয়ে নতুন চুক্তির জন্য সায় দেয়নি হামাস; যদিও তারা বিদ্যমান চুক্তির মেয়াদ বাড়িয়ে জীবিত এক আমেরিকান জিম্মি এবং চারটি মৃতদেহ দিতে সম্মত হয়েছিল।
হামাসকে চাপে রাখতে মার্চের শুরুতে গাজায় খাদ্য, জ্বালানি ও চিকিৎসা সরবরাহ বন্ধ করে দেয় ইসরায়েল।
ইসরায়েল এখন সামরিক শক্তি ব্যবহার করে হামাসকে চাপে ফেলতে চাইছে, যাতে করে তারা যুক্তরাষ্ট্র ও ইসরায়েল প্রস্তাবিত নতুন যুদ্ধবিরতি চুক্তিতে সই করতে রাজি হয়।
২০২৩ সালের ৭ অক্টোবর হামাসের হামলায় ইসরায়েলে প্রায় ১,২০০ জন নিহত হয়, জিম্মি করা ২৫১ জনকে। তাদের মধ্যে ২৫ জন যুদ্ধবিরতির প্রথম পর্বে জীবিত অবস্থায় মুক্তি পেয়েছে।
তার পাল্টায় ইসরায়েল যে ব্যাপক আক্রমণ চালিয়েছে তাতে সাড়ে ৪৮ হাজারেরও বেশি মানুষ প্রাণ হারিয়েছে বলে জানিয়েছে হামাস পরিচালিত স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়। পাশাপাশি ব্যাপকমাত্রায় বাড়িঘর ও অবকাঠামো ধ্বংস হয়েছে।