শ্রীলঙ্কার পার্লামেন্ট নির্বাচনে অংশ নেওয়া প্রায় আট হাজার প্রার্থীর একজন এই ৪৯ বছর বয়সী চানু নিমেশা।
Published : 13 Nov 2024, 04:49 PM
শ্রীলঙ্কার পার্লামেন্ট নির্বাচনে প্রকাশ্যে প্রথম একজন রূপান্তরকামী প্রার্থী হিসাবে প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নেমেছেন চানু নিমেশা (৪৯) ।
বৃহস্পতিবার শ্রীলঙ্কার পার্লামেন্ট নির্বাচনের ভোট গ্রহণ করা হবে। এ নির্বাচনে নিমেশা দেশটির সমাজতান্ত্রিক দলের প্রার্থী হয়ে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন।
সেপ্টেম্বরের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে শ্রীলঙ্কার বামপন্থি রাজনীতিবিদ অনুঢ়া কুমারা দিশানায়েকের জয়ের দুই মাসেরও কম সময়ের মধ্যে আয়োজিত এই নির্বাচনে প্রায় আট হাজার প্রার্থীর একজন তিনি। দ্বীপদেশ শ্রীলংকায় আরও অন্তর্ভুক্তিমূলক এবং সহনশীল রাজনৈতিক সংস্কৃতি গড়ে তোলার স্বপ্ন নিয়ে এই প্রতিদ্বন্দ্বিতায় অংশ নিয়েছেন তিনি।
স্থানীয় অধিকারবাদী গোষ্ঠী ইক্যুয়াল গ্রাউন্ডের তথ্য অনুযায়ী, শ্রীলঙ্কার ২ কোটি ২০ লাখ মানুষের মধ্যে রূপান্তরকামী জনগোষ্ঠী এক শতাংশ। তারা প্রায়শই সামাজিক প্রতিকূলতার মুখোমুখি হয়। দেশটির রাজনৈতিক দলগুলোতে আইনি সুরক্ষার অভাবে থাকা এই জনগোষ্ঠীর প্রায় কোনও প্রতিনিধিত্ব নেই।
রাজধানী কলম্বো থেকে প্রায় ৮০ কিলোমিটার পূর্বে কেগাল্লে জেলা থেকে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করা নিমেশা রয়টার্সকে জানান, তিনিই প্রথম রূপান্তরকামী ব্যক্তি যিনি ২২৫ সদস্যের পার্লামেন্টের একটি আসনের জন্য প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেছেন।
নিজের এক বেডরুমের ফ্ল্যাটে বসে তিনি বলেন, “আমি হার-জিত নিয়ে চিন্তিত নই। কিন্তু আমার মতো অন্যদের অনুপ্রাণিত করার জন্য এই প্রচারণায় উপস্থিত থাকা, দেখা দেওয়া আমার জন্য গুরুত্বপূর্ণ। শুধু আমার সম্প্রদায়ের জন্য না, আমি সবার জন্য কাজ করতে চাই।”
উচ্চ ঋণ, অদূরদর্শী অর্থনৈতিক নীতি এবং কোভিড-১৯ মহামারির কারণে পর্যটন রাজস্বে ক্ষতি শ্রীলঙ্কাকে ২০২২ সালে সাত দশকেরও বেশি সময়ের মধ্যে সবচেয়ে মারাত্মক আর্থিক সংকটে ফেলেছিল।
ওই বছর শ্রীলঙ্কার তৎকালীন প্রেসিডেন্ট গোতাবায়া রাজাপাকসে ব্যাপক গণঅভ্যুত্থানের মধ্যে দেশ ছেড়ে পালান। যে হাজার হাজার বিক্ষোভকারী রাজধানী কলম্বোতে গিয়ে তার দপ্তর ও বাসভবন দখলে নেয় নিমেশা তাদের একজন।
আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের (আইএমএফ) ২৯০ কোটি ডলারের বেইলআউট সহায়তা শ্রীলঙ্কাকে সঙ্কট থেকে সাময়িকভাবে উদ্ধার করলেও দেশটির এক-চতুর্থাংশ মানুষ দারিদ্র্যসীমার নিচে রয়ে গেছেন।
নিমেশা নিকটবর্তী একটি নির্মাণ প্রকল্পে পরিমাণ সার্ভেয়ার হিসাবে কাজ করে তার আন্দোলন ও রাজনৈতিক প্রচারের তহবিল যোগাড় করেন। তিনি একজন শৌখিন অভিনেত্রী, পাশাপাশি গান রচনা ও লেখালেখিও করেন। আগামী দুই মাসের মধ্যে তার লেখা একটি বই প্রকাশিত হবে।
শ্রীলঙ্কার দক্ষিণাঞ্চলীয় শহর গলে জন্মগ্রহণকারী নিমেশার বয়স যখন ১৪ বছর তখন ১৯৮৯ সালে তার বাবা এক রাজনৈতিক বিদ্রোহে নিহত হন। পরবর্তীতে তিনি কলম্বোতে চলে যান। তারপর থেকে নিজের রক্ষণশীল পরিবারের সঙ্গে আর কেনো যোগাযোগ নেই তার। তিনি বলেন, “আমার সঙ্গে তাদের সম্পর্ক ছিন্ন করার কারণ আমি বুঝতে পারছি। এই কারণেই আমি অন্তর্ভুক্তিমূলক রাজনীতির প্রয়োজনীয়তা সম্পর্কে এত উত্সাহী। আমাদের একে অপরের প্রতি মানবিক হতে হবে। সব প্রতিকূলতা মেনেই একে অপরকে গ্রহণ করতে হবে। এভাবেই আমরা একটি বৈষম্যহীন সমাজ গড়ে তুলতে পারব।”
একটি টেবিলে তার মেকআপগুলো পরিপাটি করে সাজানো। পাশেই বইয়ে ভরা একটি বুকশেলফ। এসব বইয়ের অধিকাংশই সমাজতান্ত্রিক ও বামপন্থি আদর্শ বিষয়ক।
আরও পড়ুন: