সন্ধ্যার দিকে গুজরাটের কচ্ছ জেলার উপকূল দিয়ে অতি প্রবল ঘূর্ণিঝড় ‘বিপর্যয়’ স্থলে উঠে আসবে বলে ধারণা করা হচ্ছে।
Published : 15 Jun 2023, 12:48 PM
আরব সাগরে সৃষ্ট অতি প্রবল ঘূর্ণিঝড় ‘বিপর্যয়’এর পথ বরাবর থাকা এক লাখের বেশি মানুষকে সরিয়ে নিয়ে দুর্যোগ মোকাবেলার প্রস্তুতি নিয়েছে ভারত ও পাকিস্তান।
বৃহস্পতিবার স্থানীয় সময় সন্ধ্যায় গুজরাটের কচ্ছ জেলার জখৌ বন্দরের কাছ দিয়ে ‘বিপর্যয়’ স্থলে উঠে আসবে বলে ধারণা করা হচ্ছে। এগিয়ে যাওয়ার পথে এটি ঘরবাড়ি ও ফসলের ব্যাপক ক্ষতি করবে বলে আবহওয়ার পূর্বাভাসে সতর্ক করা হয়েছে।
পূর্বসতর্কতা হিসেবে গুজরাট রাজ্য প্রশাসন উপকূলীয় এলাকাগুলো থেকে ৭৪ হাজারেরও বেশি মানুষকে নিরাপদ স্থানে সরিয়ে নিয়েছে। ওই এলাকাগুলোতে উদ্ধার ও ত্রাণ কার্যক্রম চালাতে দুর্যোগ মোকাবেলা ইউনিটগুলোকে মোতায়েন করা হয়েছে বলে স্থানীয় কর্মকর্তারা জানিয়েছেন।
ভারতীয় আবহাওয়া বিভাগ জানিয়েছে, ‘বিপর্যয়’ আরব সাগর থেকে গুজরাট উপকূলের দিকে এগিয়ে যাচ্ছে আর সৌরাষ্ট্র-কচ্ছ অঞ্চলের কিছু অংশে ভারি বৃষ্টির সঙ্গে তীব্র বাতাস বইছে। এ দুটি জেলায় রেড অ্যালার্ট জারি করা হয়েছে।
এই ঘূর্ণিঝড়ের প্রভাবে এরইমধ্যে ভারতে অন্তত সাতজনের মৃত্যু হয়েছে। ঝড়বৃষ্টি চলার সময় দেয়াল ধসে দুই শিশুর মৃত্যু হয়েছে আর উপড়ে পড়া গাছের নিচে চাপা পড়ে মোটরসাইকেল আরোহী এক নারী মারা গেছেন।
‘বিপর্যয়’ এর একটি অংশ পাকিস্তানের সিন্ধু প্রদেশের উপকূলীয় অঞ্চলেও আঘাত হানবে বলে ধারণা করা হচ্ছে। স্থানীয় কর্তৃপক্ষ ইতোমধ্যে দেশটির দক্ষিণপূর্বাঞ্চলীয় উপকূল থেকে ৬২ হাজার বাসিন্দাকে সরিয়ে নিয়েছে এবং স্কুলগুলোতে ৭৫টি ত্রাণশিবির স্থাপন করেছে বলে বিবিসি জানিয়েছে।
পাকিস্তানের জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রী শেরি রেহমান জানান, সিন্ধু প্রদেশের প্রধান শহর করাচি ঘূর্ণিঝড়ের সরাসরি হুমকির মুখে না থাকলেও সেখানেও জরুরি পরিস্থিতি মোকাবেলার প্রস্তুতি নেওয়া হয়েছে। পাকিস্তানের বৃহত্তম এই শহরটিতে দুই কোটিরও বেশি মানুষ বসবাস করে।
আবহাওয়াবিদরা জানিয়েছেন, এই ‘অতি প্রবল ঘূর্ণিঝড়টি’ ঘণ্টায় সর্বোচ্চ ১৩৫ কিলোমিটার বাতাসের একটানা গতিবেগ নিয়ে এগিয়ে আসছে, যা দমকা বা ঝড়ো হওয়া আকারে ঘণ্টায় ১৫০ কিলোমিটার পর্যন্ত বৃদ্ধি পাচ্ছে। স্থলে উঠে আসার সময় এর প্রভাবে সৃষ্ট জলোচ্ছ্বাসে উপকূল সংলগ্ন নিচু এলাকাগুলো ডুবে যেতে পারে বলে সতর্ক করেছেন তারা।
গুজরাটের আবহাওয়া বিভাগের প্রধান জানিয়েছেন, স্থানীয় সময় বিকাল ৪টা থেকে রাত ৮টার মধ্যে ‘বিপর্যয়’ গুজরাটের মান্ডবি ও পাকিস্তানের করাচির মধ্যবর্তী জখৌ বন্দরের কাছ দিয়ে স্থলে উঠে আসবে বলে ধারণা করা হচ্ছে।
বৃহস্পতিবার সকালে মান্ডবিতে প্রবল ঝড়ো বাতাস বইছিল এবং সাগরে উত্তাল ঢেউয়ের নাচন চলছিল বলে জানা গেছে।
কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, গুজরাট অঞ্চলে ট্রেন চলাচল বন্ধ রাখা হয়েছে। গুজরাটের কচ্ছ জেলার কান্ডলা ও মুন্দ্রা বন্দরের কাযক্রমও বন্ধ রাখা হয়েছে। ভারতের বৃহত্তম বন্দরগুলোর মধ্যে এ দুটি অন্যতম।
গুজরাট, প্রতিবেশী রাজ্য মহারাষ্ট্রের উপকূলজুড়ে মাছ ধরা পুরোপুরি বন্ধ রাখা হয়েছে। পাকিস্তানেও উপকূলীয় অঞ্চলের জেলেদের সাগরে যেতে নিধেষ করা হয়েছে।
ভারতের আবহাওয়া দপ্তরের ধারণা, স্থলে উঠে আসার পর ‘বিপর্যয়’ এর কারণে গুজরাট ও পাকিস্তানের উপকূলবর্তী অঞ্চলগুলোর উপর দিয়ে ঘণ্টায় ১৫০ কিলোমিটার বেগে ঝড় বইতে পারে, এরপর এর তীব্রতা হ্রাস পাবে।
কিন্তু পরবর্তী চার দিন এর প্রভাবে রাজস্থান, পাঞ্জাব, হরিয়ানা, নয়াদিল্লি ও উত্তর প্রদেশে বৃষ্টি হতে পারে।
আরও পড়ুন:
ঘূর্ণিঝড় ‘বিপর্যয়’: ভারত, পাকিস্তানের লাখো মানুষকে সরানো হচ্ছে