‘মাদকের বিরুদ্ধে যুদ্ধে’ মানবতাবিরোধী অপরাধ সংঘটিত হয়েছে অভিযোগে আইসিসি এই গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করেছিল।
Published : 11 Mar 2025, 01:04 PM
ফিলিপিন্সের সাবেক প্রেসিডেন্ট রদরিগো দুতার্তেকে আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালতের (আইসিসি) পরোয়ানায় গ্রেপ্তার করেছে দেশটির পুলিশ।
দুতার্তের ‘মাদকের বিরুদ্ধে যুদ্ধে’ মানবতাবিরোধী অপরাধ সংঘটিত হয়েছে অভিযোগে আইসিসি এই গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করেছিল।
হংকং থেকে দেশে ফেরার পর মঙ্গলবার সাবেক এ প্রেসিডেন্টকে ম্যানিলা বিমানবন্দর থেকে পুলিশ হেফাজতে নেওয়া হয়, জানিয়েছে বিবিসি।
দুতার্তে যখন প্রেসিডেন্ট ছিলেন, সেই ২০১৬ থেকে ২০২২ সালের মধ্যে হওয়া এই মাদকবিরোধী অভিযানে দক্ষিণ পূর্ব এশিয়ার দেশটি হাজারের বেশি মানুষের মৃত্যু দেখেছিল।
গ্রেপ্তার হতে পারেন, এমন সম্ভাবনার প্রেক্ষিতে ৭৯ বছর বয়সী এ সাবেক প্রেসিডেন্ট আগেই বলেছিলেন, তিনি জেলে যাওয়ার জন্য প্রস্তুত।
গ্রেপ্তারের পর প্রথম প্রতিক্রিয়ায় তিনি বলেছেন, “কী অপরাধ করেছি আমি?”
ফিলিপিন্সের মানবাধিকার বিষয়ক আন্তর্জাতিক জোট (আইসিএইচআরপি) এই গ্রেপ্তারকে ‘ঐতিহাসিক মুহূর্ত’ অ্যাখ্যা দিয়েছে।
“নৈতিক জগতের বৃত্ত দীর্ঘ, কিন্তু আজ এটি ন্যায়বিচারের দিকে হেলেছে। যে গণহত্যা দিয়ে দুর্তাতের শাসনকালকে বোঝা যাবে তার জবাবদিহিতা নিশ্চিতের শুরু এই গ্রেপ্তার,” বলেছেন আইসিএইচআরপি-র চেয়ারপারসন পিটার মারফি।
তবে দুতার্তের প্রেসিডেন্টকালীন সাবেক মুখপাত্র সালভাদর পানেলো এই গ্রেপ্তারের কড়া সমালোচনা করে বলেছেন, ফিলিপিন্স আগেই আইসিসি থেকে নিজেকে প্রত্যাহার করে নেওয়ায় এই গ্রেপ্তার ‘বেআইনি’।
আইসিসি এর আগে বলেছিল, অপরাধ যেসময় সংঘটিত হয়েছিল বলে অভিযোগ সেসময় দক্ষিণপূর্ব এশিয়ার দেশটি তাদের সদস্য থাকায় এই বিচারের এখতিয়ার তাদের আছে।
আগামী ১২ মে-তে হতে যাওয়া মধ্যবর্তী নির্বাচনে তার দলের সেনেটর প্রার্থীদের প্রচারণায় হংকং গিয়েছিলেন তিনি। সেখান থেকে ফেরার পরপরই তাকে গ্রেপ্তার করা হয়।
দুতার্তে নিজেও ফের দাভাওয়ের মেয়র পদে নির্বাচনের পরিকল্পনা করছিলেন।
স্থানীয় টেলিভিশনের ফুটেজে দুতার্তেকে ছড়ি হাতে বিমানবন্দর থেকে বের হতে দেখা গেছে। কর্তৃপক্ষ বলেছে, তার শরীর ভালো আছে এবং সরকারি চিকিৎসকরা তার দেখভাল করছেন।
ফিলিপিন্সের অন্যতম বড় শহর দাভাওয়ের এক সময়কার মেয়র দুতার্তে কঠোর হাতে অপরাধ দমনের প্রতিশ্রুতি দিয়ে ক্ষমতার চূড়ায় উঠেছিলেন।
প্রেসিডেন্ট হওয়ার পর তার মাদকবিরোধী যুদ্ধে পুলিশ ও অজ্ঞাত হামলাকারীরা ৬ হাজারের বেশি সন্দেহভাজন মাদক বিক্রেতা ও চোরাচালানিকে গুলি করে হত্যা করে। নিহতের এই সংখ্যা এর চেয়েও অনেক বেশি বলে সন্দেহ মানবাধিকার সংগঠনগুলোর।
“হিটলার ত্রিশ লাখ ইহুদিকে হত্যা করেছিল। এখন ফিলিপিন্সে ত্রিশ লাখ মাদকাসক্ত। তাদেরকে নিশ্চিহ্ন করে দিতে পারলে আমি খুশি হবো,” প্রেসিডেন্ট হওয়ার কয়েক মাস পরেই বলেছিলেন দুতার্তে।
সমালোচকরা বলছেন, ওই ‘মাদকবিরোধী যুদ্ধে’ পুলিশ ব্যাপক নির্যাতন চালিয়েছে এবং সেসময় অনেকে সন্দেহভাজনকে তাড়াহুড়ো করে মৃত্যুদণ্ড দেওয়া হয়েছিল।
সন্দেহভাজন মাদক অপরাধীদের নিশানা করতে অর্থ বা পুরস্কারের বিনিময়ে কাজ করা ছায়া ‘ডেথ স্কোয়াডও’ ছিল বলে ফিলিপিন্সের পার্লামেন্টের করা তদন্তে ইঙ্গিত দেওয়া হয়েছিল।
দুতার্তে এ সব অভিযোগ অস্বীকার করেছেন।
আইসিসি প্রথম তার বিরুদ্ধে অভিযোগ নেয় ২০১৬ সালে, তদন্ত শুরু করে ২০২১-এ। তারা ২০১১ সালের নভেম্বর থেকে শুরু করে ২০১৯ সালের মাচ পর্যন্ত নানান ঘটনা আমলে নেয়। ২০১১ সালে দুতার্তে দাভাওয়ের মেয়র ছিলেন, আর ২০১৯ সালেই ফিলিপিন্স আইসিসি থেকে নিজেদের প্রত্যাহার করে নেয়।
দুতার্তের মেয়ে সারা এখন ফিলিপিন্সের ভাইস প্রেসিডেন্ট; ২০২৮ সালের নির্বাচনে তিনি প্রেসিডেন্ট পদে লড়বেন বলে অনেকেই ধারণা করছেন।
বর্তমান প্রেসিডেন্ট ফার্দিনান্দ মার্কোসের সঙ্গে সারার জোট ২০২২ সালে বিপুল ভোটে জয়লাভ করলেও সাম্প্রতিক মাসগুলোতে এই দুজনের মধ্যে বেশ বিরোধ দেখা যাচ্ছে।
মার্কোস শুরুর দিকে আইসিসির তদন্তে সহযোগিতা করতে রাজি হননি, তবে দুতার্তে পরিবারের সঙ্গে সম্পর্ক খারাপ হওয়ার পর তিনি অবস্থান বদলান।
অবশ্য গ্রেপ্তার দুতার্তেকে বিচারের মুখোমুখি করতে নেদারল্যান্ডসের হেগে পাঠানোর মতো সিদ্ধান্ত শেষ পর্যন্ত তিনি নেবেন কিনা, তা এখনও অস্পষ্ট। হেগেই আইসিসির সদরদপ্তর।