স্বামী হাশিম বাবা তাকে সাংকেতিক ভাষার প্রশিক্ষণ দিয়েছিলেন।
Published : 21 Feb 2025, 07:20 PM
বছরের পর বছর ধরাছোঁয়ার বাইরে থাকা দিল্লির ‘লেডি ডন’ জয়া খান অবশেষে ধরা পড়েছেন।
কুখ্যাত গ্যাংস্টার হাশিম বাবার স্ত্রী জয়াকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে ২৭০ গ্রাম হেরোইন বহনের জন্য, যার আন্তর্জাতিক বাজার মূল্য প্রায় এক কোটি রুপি।
এনডিটিভি লিখেছে, ৩৩ বছর বয়সী জয়া দীর্ঘদিন ধরে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর নজরদারিতে থাকলেও বরাবরই গ্রেপ্তার এড়াতে পেরেছেন। কারাগারে থাকা স্বামীর অপরাধ সাম্রাজ্য পরিচালনা করলেও এই নারী তার অবৈধ কর্মকাণ্ডের প্রত্যক্ষ প্রমাণ রাখেননি।
জয়ার ভূমিকা নিয়ে সন্দেহ থাকলেও পুলিশ এখন পর্যন্ত তার বিরুদ্ধে শক্ত কোনো মামলা দাঁড় করাতে পারেনি।
হাশিম বাবার বিরুদ্ধে খুন, চাঁদাবাজি থেকে শুরু করে অস্ত্র চোরাচালানের মত ডজনখানেক মামলা রয়েছে। জয়া খান তার তৃতীয় স্ত্রী।
২০১৭ সালে হাশিম বাবাকে বিয়ে করার আগে অন্য একজনকে বিয়ে করেছিলেন জয়া। বিচ্ছেদের পর হাশিম বাবার সংস্পর্শে আসেন তিনি। উত্তর-পূর্ব দিল্লির এই দুই প্রতিবেশী পরে প্রেম-পরিণয়ে জড়ান।
যেভাবে অপরাধ সাম্রাজ্যে
হাশিম বাবা জেলে যাওয়ার পর গ্যাং পরিচালনার দায়িত্ব জয়া নেন জানিয়ে এনডিটিভি সূত্রের বরাতে লিখেছে, তার ভূমিকাকে দেখা হয় আন্ডারওয়ার্ল্ড ডন দাউদ ইব্রাহিমের বোন হাসিনা পারকারের মত, যিনি ভাইয়ের অবৈধ অপরাধ সাম্রাজ্য দেখভাল করতেন। দিল্লি পুলিশের বিশেষ শাখা বলছে, জয়া চাঁদাবাজি এবং মাদক কারবারের সঙ্গে গভীরভাবে জড়িত।
আর দশটা অপরাধী নেতার মত নয়, জয়া একটি নির্দিষ্ট ভাবমূর্তি বজায় রেখে চলতেন। তিনি অভিজাত পার্টিতে দামি পোশাক পরে যেতেন এবং বিলাসবহুল ব্র্যান্ডের পণ্য ব্যবহার করেন। সোশাল মিডিয়ার উপস্থিতি থেকে এটা স্পষ্ট যে সেখান তার বিপুল সংখ্যক অনুসারী রয়েছে।
জয়া প্রায়ই তিহার জেলে স্বামীর সঙ্গে দেখা করতে যান। পুলিশ বলছে, হাশিম বাবা তাকে সাংকেতিক ভাষার প্রশিক্ষণ দিয়েছিলেন। কীভাবে গ্যাং পরিচালনা করতে হবে তার পরামর্শও দিয়েছিলেন কুখ্যাত গ্যাংস্টার হাশিম। জয়া কারাগারের বাইরে তার সহযোগীদের পাশাপাশি অন্যান্য অপরাধীদের সঙ্গেও সরাসরি যোগাযোগ রক্ষা করতেন।
এনডিটিভি লিখেছে, কয়েক বছর ধরে দিল্লি পুলিশের বিশেষ শাখা তাকে ধরতে হিমশিম খাচ্ছিল। এবার অবশ্য তারা সফল হয়েছে।
গোয়েন্দা সূত্রে খবর পেয়ে উত্তর-পূর্ব দিল্লির ওয়েলকাম এলাকা থেকে জয়াকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। তার কাছে মেলে উত্তরপ্রদেশের মুজফফরনগর থেকে আনা বিপুল পরিমাণ হেরোইন।
পুলিশের ধারণা, নাদির শাহ হত্যা মামলার শ্যুটারদের আশ্রয় দিয়েছিলেন জয়া। ২০২৪ সালের সেপ্টেম্বরে দক্ষিণ দিল্লির অভিজাত কৈলাশ-১ এলাকার জিমের মালিক নাদিরকে গুলি করে হত্যা করা হয়। ওই মামলায় গত মাসে পুলিশের বিশেষ শাখার লোধি কলোনি কার্যালয়ে তাকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়।
পারিবারিক পটভূমি
জয়ার পরিবারও অপরাধমূলক কর্মকাণ্ডে সম্পৃক্ত। একটি নারী পাচার চক্রে জড়িত থাকার অভিযোগে ২০২৪ সালে তার মাকে কারাগারে পাঠানো হয়েছিল। বর্তমানে তিনি জামিনে রয়েছেন।
জয়ার বাবা মাদক কারবারের সঙ্গে ছিলেন। জয়া উত্তর-পূর্ব দিল্লির বিভিন্ন জায়গা, বিশেষ করে উসমানপুর থেকে অপরাধ সাম্রাজ্য চালাতেন। আর তার নিরাপত্তায় থাকত হাশিম বাবার বিশ্বস্ত চার-পাঁচজন সশস্ত্র অনুসারী।
এনডিটিভি লিখেছে, উত্তর-পূর্ব দিল্লি অঞ্চলে চেনু গ্যাং, হাশিম বাবা গ্যাং এবং নাসির পালোয়ান গ্যাংয়ের মত অপরাধী চক্র সক্রিয়। এই চক্রগুলো শুরুতে মাদক পাচারে মনোযোগী ছিল, যে কারবারের দ্বন্দ্বে ২০০৭ পরে বেশ কয়েকটি নৃশংস হত্যাকাণ্ড ঘটে।
হাশিমের গ্যাং প্রচুর চাঁদাবাজি করত, যার বেশিরভাগ অংশ দেওয়া হত জয়াকে।
লরেন্স বিষ্ণোই যোগ
গত বছর নাদির শাহ হত্যা মামলায় হাশিম বাবার নাম উঠে আসে। তিহার জেলে থাকাকালে হত্যাকাণ্ডে ভূমিকার কথা তিনি স্বীকার করেন এবং ওই হত্যায় লরেন্স বিষ্ণোই জড়িত বলে জানান।
লরেন্স বিষ্ণোইও কারাবন্দি, যিনি সংগীতশিল্পী সিধু মুসে ওয়ালা হত্যা এবং বলিউড অভিনেতা সালমান খানের মুম্বাইয়ের বাসভবনের বাইরে গুলি চালানোর ঘটনায় জড়িত বলে অভিযোগ রয়েছে। তার বিপুল সংখ্যক বন্দুকবাজের নেটওয়ার্ক রয়েছে।
পুলিশ বলছে, ২০২১ সালে জেলে থাকাকালে হাশিম বাবা ও লরেন্স বিষ্ণোইয়ের মধ্যে সম্পর্ক গড়ে ওঠে। আলাদা কারাগারে থাকলেও তারা অবৈধ ফোন লাইন ও ভিডিও কলের মাধ্যমে যোগাযোগ রক্ষা করতেন, যাতে সেখান থেকে অপরাধমূলক কর্মকাণ্ডের সমন্বয় করা যায়।