হোয়াইট হাউজ ও মার্কিন বিচার বিভাগ ভিডিও অ্যাপটি চালু রাখতে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা ও নিশ্চয়তা দিতে ব্যর্থ হওয়ায় এটি বন্ধ করে দেওয়া ছাড়া উপায় নেই, বলেছে এ সোশাল মিডিয়া প্ল্যাটফর্ম।
Published : 18 Jan 2025, 01:52 PM
যুক্তরাষ্ট্রের সরকার কোনো পদক্ষেপ না নিলে দেশটিতে রোববার থেকেই অ্যাপ বন্ধ করে দেওয়া হবে বলে জানিয়েছে টিকটক।
শুক্রবার এক বিবৃতিতে বিশ্বব্যাপী জনপ্রিয় এ সামাজিক মাধ্যমটি জানায়, হোয়াইট হাউজ ও মার্কিন বিচার বিভাগ ভিডিও অ্যাপটি চালু রাখতে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা ও নিশ্চয়তা দিতে ব্যর্থ হওয়ায় এটি বন্ধ করে দেওয়া ছাড়া তাদের আর উপায় নেই।
নিষেধাজ্ঞা লঙ্ঘনে শাস্তির মুখোমুখি হতে হবে না, সরকার যদি দ্রুত এ ধরনের আশ্বাস না দেয় তাহলে ১৯ জানুয়ারি থেকে অ্যাপটি বন্ধ করতে বাধ্য হবে তারা।
টিকটক নিয়ে শুক্রবার সুপ্রিস কোর্টের রায়ের কয়েক ঘণ্টা পর অ্যাপটি এ বিবৃতি দেয় বলে জানিয়েছে বিবিসি।
মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন ২০২৪ সালের ২৪ এপ্রিল ‘প্রটেকটিং আমেরিকানস ফ্রম ফরেন অ্যাডভারসারি কন্ট্রোলড অ্যাপলিকেশন অ্যাক্ট’ নামের একটি বিলে সই করলে যুক্তরাষ্ট্রে হুমকির মুখে পড়ে টিকটক।
ওই আইনে বলা হয়, চীনা মূল কোম্পানি বাইটড্যান্স টিকটকে তাদের অংশীদারত্ব ছয় মাসের মধ্যে কোনো আমেরিকান কোম্পানির কাছে বিক্রি করে দেবে, নয়ত যুক্তরাষ্ট্রে এই অ্যাপ নিষিদ্ধ করা হবে।
টিকটক ওই আইন আটকাতে ৭ মে আদালতে যায়, তাদের আবেদনে বলা হয়, এ ধরনের আইন বাকস্বাধীনতার অধিকারের ওপর হস্তক্ষেপ এবং যুক্তরাষ্ট্রের সংবিধানের প্রথম সংশোধনীর সঙ্গে সাংঘর্ষিক।
এরপর ২ অগাস্ট যুক্তরাষ্ট্র সরকার টিকটকের বিরুদ্ধে একটি মামলা করে। সেখানে অভিযোগ করা হয়, চীনা এই সোশ্যাল মিডিয়া কোম্পানি অবৈধভাবে শিশুদের তথ্য সংগ্রহ করছে এবং অভিভাবকরা তাদের সন্তানদের অ্যাকাউন্ট মুছে ফেলার চেষ্টা করলে তাতে সাড়া দিচ্ছে না।
৬ ডিসেম্বর ফেডারেল আপিল আদালত টিকটকের মামলা খারিজ করে দেয়। ফলে ২০২৫ সালের ১৯ জানুয়ারির মধ্যে বাইটড্যান্সের শেয়ার বিক্রি না করলে টিকটক বন্ধ হয়ে যাওয়ার ঝুঁকি আরো জোরালো হয়।
যুক্তরাষ্ট্রের নবনির্বাচিত প্রেসিডেন্ট ডনাল্ড ট্রাম্প ২৭ ডিসেম্বর সুপ্রিম কোর্টকে তার শপথ না হওয়া পর্যন্ত টিকটক নিষিদ্ধের আইনটি পেছানোর অনুরোধ করেন। তার আইনজীবী বলেন, প্রেসিডেন্ট ‘রাজনৈতিক উপায়ে’ এ সমস্যা সমাধানের একটি সুযোগ চান।
এর মধ্যে নিষেধাজ্ঞা এড়াতে সুপ্রিম কোর্টে আপিল করে টিকটক। টিকটক এবং কন্টেন্ট নির্মাতাদের আইনজীবীরা শুনানিতে বলেন, টিকটকের ওপর নিষেধাজ্ঞা জারি হলে যুক্তরাষ্ট্রে এ প্ল্যাটফর্মের ১৭ কোটির বেশি ব্যবহারকারীর বাকস্বাধীনতা লঙ্ঘিত হবে।
কিন্তু শুক্রবার দেওয়া রায়ে সুপ্রিম কোর্ট বাইডেনের করা আইনকে সমর্থন দিলে যুক্তরাষ্ট্রে টিকটক বন্ধ হয়ে যাওয়া অনেকটা নিশ্চিত হয়ে যায়।
আইনটি কার্যকর হওয়ার কথা ১৯ জানুয়ারি; অর্থাৎ ট্রাম্পের নতুন মেয়াদ শুরুর ঠিক আগের দিন।
শুক্রবার রায়ের পর ট্রাম্প বলেছেন, টিকটক নিষিদ্ধ হবে কি না সে সিদ্ধান্ত তিনিই নেবেন। আর সেজন্য তার অবশ্যই সময় পাওয়া উচিত।
সোশাল মিডিয়ায় এক পোস্টে তিনি বলে, “সুপ্রিম কোর্টের এই রায় প্রত্যাশিতই ছিল। সবারই এটা সম্মান করা উচিত। এ বিষয়ে আমার সিদ্ধান্ত নিতে খুব বেশি দেরি হবে না। পরিস্থিতি পর্যালোচনা করতে সেই সময়টা আমার পাওয়া উচিত।”
বর্তমানে টিকটক নিয়ে ট্রাম্পের অবস্থান তার প্রথম মেয়াদের থেকে আলাদা। তিনি নিজেই ২০২০ সালে টিকটক নিষিদ্ধ করতে চেয়েছিলেন। এমনকি, সফটওয়্যার জায়ান্ট মাইক্রোসফটের টিকটক কিনে নেওয়ার বিষয়েও তিনি রাজি ছিলেন। দ্বিতীয় মেয়াদের নির্বাচনী প্রচারের সময় ট্রাম্প টিকটক নিয়ে তার মতামত বদলে ফেলন।
এদিকে যুক্তরাষ্ট্রের টিকটক ব্যবহারকারীরা এখন রেডনোট নামে আরেকটি চীনা অ্যাপের দিকে ঝুঁকেছেন। নিজেদের 'টিকটক রিফিউজি' বলে পরিচয় দেওয়া ওই ব্যবহারকারীরা ব্যাপক পরিমাণে রেডনোট ডাউনলোড করছেন। আর তাতে অ্যাপলের মার্কিন অ্যাপ স্টোরে সবচেয়ে বেশি ডাউনলোড হওয়া অ্যাপের তালিকায় চলে আসে রেডনোট।
চীন, তাইওয়ান এবং অন্যান্য ম্যান্ডারিন-ভাষী জনগোষ্ঠীর তরুণদের কাছে আগে থেকেই জনপ্রিয় রেডনোট টিকটকের প্রতিদ্বন্দ্বী। বলা যায়, রেডনোট হল টিকটক ও ইনস্টাগ্রামের মিশেলে। এর ব্যবহারকারীর সংখ্যা মাসে প্রায় ৩০ কোটি।
কিন্তু টিকটকের ওপর নিষেধাজ্ঞা বাস্তবে কীভাবে কার্যকর হবে, তা নিয়ে অনেক প্রশ্ন রয়ে গেছে, কারণ যুক্তরাষ্ট্রে গুরুত্বপূর্ণ কোনো সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম এভাবে বন্ধ করে দেওয়ার নজির নেই। সরকার ঠিক কীভাবে আইন প্রয়োগ করবে তা এখনও স্পষ্ট নয়।
বিবিসি লিখেছে, টিকটক স্রেফ সংযোগ বন্ধ করে দিতে পারে। অর্থাৎ,যুক্তরাষ্ট্রের ব্যবহারকারীদের টিকটক অকার্যকর হয়ে যেতে পারে। সেক্ষেত্রে নতুন কেউও আর যুক্তরাষ্ট্র থেকে এই অ্যাপ ডাউনলোড করতে পারবেন না।
এখন টিকটকের বন্ধ হওয়া ঠেকাতে পারে রাজনৈতিক হস্তক্ষেপ।
প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন অবশ্য বলেছেন, হোয়াইট হাইজের শেষ দিনে এ বিষয়ে হস্তক্ষেপ করার কোনো ইচ্ছা তার প্রশাসনের নেই।
অন্যদিকে ট্রাম্প বলেছেন, চীনের প্রেসিডেন্ট শি জিনপিংয়ের সঙ্গে তার যে আলোচনা হয়েছে, সেখানে টিকটকের প্রসঙ্গও ছিল।