হাসপাতালে অস্ত্রপচারের পর কিছুটা শ্বাসকষ্ট শুরু হলেও এখন ভালো আছেন ৮৮ বছর বয়সী সাহিত্যিক।
Published : 18 Jun 2024, 11:12 AM
বাংলা সাহিত্যের অন্যতম জনপ্রিয় কথা সাহিত্যিক শীর্ষেন্দু মুখোপাধ্যায় হাসপাতালে আছেন। পেসমেকার পাল্টানোর জন্য কলকাতার একটি বেসরকারি হাসপাতালে অস্ত্রোপচার হয়েছে তার।
পরিবারের সদস্যদের বরাতে কলকাতার বাংলা দৈনিক আনন্দ বাজার বলছে, তিন দিন আগে শীর্ষেন্দুকে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। তবে কোনো অসুস্থতার জন্য নয়।
হৃদযন্ত্রের জটিলতা এড়াতে শীর্ষেন্দুর বুকে পেসমেকার বসানো রয়েছে অনেকদিন ধরেই । চিকিৎসার নিয়ম অনুযায়ী নির্দিষ্ট সময় পরপর সেই পেসমেকার বদলাতেও হয়। লেখকের পেসমেকারটি পুরনো হয়ে গিয়েছিল।
সেই পেসমেকার পাল্টানোর অস্ত্রোপচারের জন্যই এবার তিনি হাসপাতালে ভর্তি হন। সেই অস্ত্রোপাচার সফল হয়েছে। মাঝে কিছুটা শ্বাসকষ্ট শুরু হলেও এখন ভালো আছেন ৮৮ বছর বয়সী সাহিত্যিক।
হাসপাতাল থেকে জানানো হয়েছে, তার অবস্থা এখন স্থিতিশীল। কয়েকদিন পরেই ছেড়ে দেওয়া হবে দুই বাংলার জনপ্রিয় বর্ষীয়ান এই সাহিত্যিককে।
শীর্ষেন্দু মুখোপাধ্যায় জন্ম ময়মনসিংহে। সেখানেই তার জীবনের প্রথম এগারো বছর কাটে। পরে বাবার রেলের চাকরির সুবাদে শৈশবে ময়নমনসিংহ থেকে শীর্ষেন্দুর পরিবার ভারত চলে যায় এবং শৈশব-কৈশরের একটা সময়ে ভারতের নানা জায়গা ঘুরে তারা থিতু হন কলকাতায়।
এছাড়া দেশভাগের সময় ময়মনসিংহ থেকে বাস উঠিয়ে এই লেখকের পরিবারের অন্য সদস্যরাও কলকাতায় চলে আসেন।
কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বাংলায় স্নাতকোত্তর শীর্ষেন্দু প্রথম জীবনে স্কুল শিক্ষক হিসেবে তার কর্মজীবন শুরু করেছিলেন। তার লেখালেখি শুরু গল্প দিয়ে।
শীর্ষেন্দুর জীবনের প্রথম দুটি গল্প ফেরত এসেছিল দেশ পত্রিকার দপ্তর থেকে। তৃতীয়টি পাঠানোর পর তিনি সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন, যদি এটি ছাপা না হয়, তাহলে লেখালেখিই ছেড়ে দেবেন। ‘জলতরঙ্গ’ নামে সেই তৃতীয় গল্পটিই ছিল শীর্ষেন্দু মুখোপাধ্যায়ের ছাপা হওয়া প্রথম লেখা। প্রকাশ হয় ১৯৫৯ সালে।
এর সাত বছর পরে একই পত্রিকার পূজাবার্ষিকীতে তার প্রথম উপন্যাস ‘ঘুণপোকা’ প্রকাশিত হয়। আর ছোটদের জন্য লেখা শীর্ষেন্দুর প্রথম গল্প ‘মনোজদের অদ্ভুত বাড়ি’, যা তিনি লিখেছিলেন আনন্দমেলার তৎকালীন সম্পাদক ও কবি নীরেন্দ্রনাথ চক্রবর্তীর অনুরোধে, অনেকটা অনিচ্ছায়। কিন্তু তার প্রথম কিশোর উপন্যাসই লুফে নেয় প্রায় সব বয়সের পাঠক।
এরপর 'ঝিলের ধারে বাড়ি', 'চক্রপুরের চক্করে', গোঁসাইবাগানের ভূত, 'ছায়াময়','গোলমাল. 'ঢেকুর', 'দুই পালোয়ান', 'জয় পালোয়ান', 'কৌটার ভূত'সহ আরো অনেক লেখা শীর্ষেন্দু শিশু-কিশোরদের জন্য লিখেছেন গত ছয় দশক ধরে। বিশেষ করে পূজায় প্রতিবছর প্রকাশিত 'আনন্দমেলা পূজা সংখ্যায়' শীর্ষেন্দুর ছোটদের গল্প-উপন্যায় প্রকাশ হয়ে পড়ে অবধারিত।
ছোটদের জন্য লেখাগুলোয় একটি ভূত, থানার দারোগা, ডাকাত বা চোর, ব্যায়ামবীর এবং বৈজ্ঞানিক এই কয়েকটি চরিত্রকে শীর্ষেন্দু করেছেন স্থায়ী।
তার তিন বিখ্যাত কিশোর উপন্যাস গোঁসাইবাগানের ভূত, ছায়াময় ও মনোজদের অদ্ভুত বাড়ি নিয়ে বানানো হয়েছে তিনটি সিনেমা এবং তিনটিই বক্স অফিসে বাজিমাত করেছে
'মানবজমিন', 'পারাপার', 'উজান', 'দূরবীন', 'পার্থিব', 'যাও পাখি', 'গয়নার বাক্স' এই লেখকের পাঠকনন্দিত উপন্যাস। এই উপন্যাসগুলোর মধ্যে 'উজান' এ উঠে এসেছে লেখকের শৈশবের ছাপ। এই আত্মজীবনী মূলক লেখা না হলেও 'উজান' উপন্যাসে শীর্ষেন্দু তার ছেলেবেলার মনমনসিংহকে তুলে ধরেছেন স্পষ্টভাবে।
এসবের পাশাপাশি ছোটগল্পও শীর্ষেন্দু লিখে গেছেন সমানতালে। গোয়েন্দা শবর দাশগুপ্ত শীর্ষেন্দুর একটি অন্যতম চরিত্র। এছাড়া 'ঘুণপোকা'র শ্যামল চরিত্রটি অনেকটা তার নিজের আদলেই গড়া বলেও বিভিন্ন সাক্ষাৎকারে বলেছেন শীর্ষেন্দু।
একবার চট্টগ্রামের বই বিপণীকেন্দ্র বাতিঘর আয়োজিত এক পাঠক আড্ডায় এসে শীর্ষেন্দু বলেছিলেন যৌবনে ভয়ানকভাবে বিষণ্নতায় আক্রান্ত হন তিনি, জীবনের প্রতি আস্থা হারিয়ে ফেলেন এবং একসময় আত্মহত্যার সিদ্ধান্তও নেন। শেষ পর্যন্ত তার মা–বাবা তাকে বাংলাদেশের উত্তরের জেলা পাবনায় ধর্মগুরু শ্রীশ্রী অনুকূলচন্দ্র ঠাকুরের কাছে নিয়ে যান। এবং ঠাকুরের সান্নিধ্যে জীবন বদলে যায় তার।
২০১০ সালের পরবর্তী সময়েও কয়েক বছর পর্যন্ত অনুকূল ঠাকুরের জন্মতিথিতে পাবনায় তার আশ্রমে নিয়মিত আসতেন শীর্ষেন্দু।
এখন উপন্যাসে এই লেখকে তেমনভাবে পাওয়া না গেলেও গল্প প্রকাশ করে তিনি যুক্ত আছেন আনন্দবাজার ও দেশ পত্রিকার সঙ্গে।