“একে একটি ভাল সিনেমার প্লট হিসেবে ভাবলে সাই-ফাই মুভির প্রেক্ষাপটে এটি একটি ক্রিয়েচার। তবে আপনি চ্যাটজিপিটি ব্যবহার করলেই বুঝতে পারবেন, এটি স্রেফ একটি টুল।”
Published : 04 Mar 2024, 01:40 PM
চ্যাটজিপিটি’র নির্মাতা ওপেনএআই কোনো এআই ‘ক্রিয়েচার’ বানাচ্ছে না– সম্প্রতি এমনটাই বলেছেন কোম্পানিটির সিইও স্যাম অল্টম্যান।
সম্প্রতি ওপেনএআইয়ের সিইও স্যাম অল্টম্যানের একটি সাক্ষাৎকার নিয়েছে মার্কিন প্রকাশনা ‘অ্যাডভোকেট’, যেখানে সবচেয়ে আকর্ষণীয় মুহূর্তটি ছিল যখন এআই নিয়ে মানুষের সবচেয়ে বড় ভুল ধারণা সম্পর্কে প্রশ্ন করা হয় অল্টম্যানকে।
আর এ সুযোগ লুফে নেন তিনি। এআই নিয়ে নিজস্ব ধারণা বর্ণনা করে অল্টম্যান বলেন, অনেকেই বিভ্রান্ত হন যে, এআই জ্যান্ত কিছু, না কি স্রেফ একটি টুল। এটি আসলেই মজার বিষয়।
তার কথায় – “আমি মনে করি এআই সম্পর্কে সবচেয়ে বড় ভুল ধারণা হল, এআই ক্রিয়েচার না কি টুল, তা নিয়ে বিভ্রান্তি রয়েছে। উদাহরণস্বরূপ, একে একটি ভাল সিনেমার প্লট হিসেবে ভাবলে সাই-ফাই মুভির প্রেক্ষাপটে এটি একটি ক্রিয়েচার। তবে আপনি চ্যাটজিপিটি ব্যবহার করলেই বুঝতে পারবেন, এটি স্রেফ একটি টুল।”
এআই টুল নিয়ে এখনও নিশ্চিত ঝুঁকি রয়েছে। তবে ঝুঁকিগুলো বিভিন্ন আকৃতির ও ভিন্ন আঙ্গিকের। পাশাপাশি সাই-ফাই হিসাবে এআইয়ের জনপ্রিয় এ ভুল ধারণার সিংহভাগই এমন মানুষদের কাছ থেকে আসে, যারা অনেকদিন ধরে একে একটি ক্রিয়েচার হিসেবে বিবেচনা করে আসছেন।
যাইহোক, আমার ধারণা, এটি দুর্দান্ত বিষয় যে আমরা যা তৈরি করেছি তা একটি ক্রিয়েচারের মতো। কারণ, আপনি মানুষকে এর চেয়ে আরও যত ভাল টুলই দেন না কেন, কেউ কেই আপনাকে অবাক করার জন্য অদ্ভুত কাণ্ডই ঘটাবে, যেটি আমাদের সকলের জন্য এ ধরনের নতুন মান তৈরি করবে।”
তবে অল্টম্যান যা বলেছেন, তা বুঝতে পারা বেশ কঠিন বলে প্রতিবেদনে লিখেছে সংবাদমাধ্যম ‘বাইট’।
এক্ষেত্রে, এআই একটি টুল শ্রেণির মধ্যে পড়ে এমন সোজাসাপ্টা জবাব দিয়ে বেরিয়ে আসতে পারতেন অল্টম্যান। তিনি তা করেননি। তবে তিনি বিশেষভাবে বলেছেন, ওপেনএআইয়ের চ্যাটজিপিটি’কে একটি ফ্ল্যাগশিপ ভোক্তা-মুখী পণ্য হিসেবে দেখেন তিনি।
তিনি আরও যোগ করেন, “আমরা যা তৈরি করেছি”, তা স্রেফ একটি টুল। এর মানে, অল্টম্যানের নজর কোম্পানির প্রযুক্তির দিকে, ক্রিয়েচারের প্রতি নয়।
পাশাপাশি অল্টম্যান বলেছেন, আপাতত এআই হল একগুচ্ছ ডেটা ও গণিতের সমন্বিত রূপ, যা পরিসংখ্যানের ভিত্তিতে সম্ভাব্য আউটপুট তৈরি করে থাকে।
বাস্তবিক অর্থে, ওপেনএআই ও গোটা এআই শিল্প মানুষের চাকরি প্রতিস্থাপনে প্রস্তুত কি না তা নিয়ে আরও বেশি উদ্বেগের মুহুর্তে অল্টম্যানের এই বর্ণনাটি মোটামুটি সুবিধাজনক বলে প্রতিবেদনে লিখেছে বাইট।
এআইকে একটি ক্রিয়েচার হিসেবে ধারণা করা হলে, এটি ব্যক্তিগত কম্পিউটারের মতো মানুষকে তাদের কাজগুলো আরও ভালভাবে করতে পারে, যেটি এআইয়ের স্বাধীন সত্তার ধারণার চেয়ে অনেক কম ভীতিকর। কারণ এআইয়ের স্বাধীন সত্তা ব্যবহারকারীর পরিবর্তে তার কাজ করতে পারে, এমন ঝুঁকিও রয়েছে।
তবে অল্টম্যান যে গল্প বলেছেন তা পুরোপুরি সত্যি নয়। কয়েক মাস আগেই তিনি ভবিষ্যদ্বাণী দিয়েছিলেন, শিগগিরই এআই মধ্যম পর্যায়ের মানব কর্মীদের জায়গা নিতে সক্ষম হবে, যার ফলে কর্মসংস্থানে ব্যাপক ঘাটতি দেখা যাবে।
এদিকে, সংবাদ সাইট ‘অ্যাডভোকেট’-এর এআইবিষয়ক সম্পূরক প্রশ্নের জবাবে নিখুঁত কোনো উদাহরণ উপস্থাপন করতে পারেননি অল্টম্যান।
এ প্রযুক্তিতে প্রায়ই ক্রিয়েচারের অনুভূতি পাওয়া যায়। ওপেনএআইয়ের যুগান্তকারী পণ্য চ্যাটজিপিটি এমনভাবে নকশা করা যাতে এর সঙ্গে কথোপকথনের সুবিধা পান ব্যবহারকারী। এমনকি এর প্রতিযোগী কোম্পানিগুলোও তাদের এ পদ্ধতি ব্যাপকভাবে অনুকরণ করছে।
বর্তমানে ভাল বা মন্দ কাজে অনেকেই এআইয়ের সঙ্গে সামাজিক সম্পর্ক গড়ে তুলছেন। এদিকে, বিভিন্ন এআই ‘এজেন্ট’ সম্পর্কে এমন গুঞ্জন রয়েছে, এগুলো আপেক্ষিকভাবে নিজে নিজেই কাজ করতে পারবে — আর এমন প্রকল্পগুলো নিঃসন্দেহে ওপেনএআইয়ের প্রযুক্তির মাধ্যমেই চালিত হবে বলে প্রতিবেদনে লিখেছে বাইট।
অল্টম্যানের পরিভাষায় এমন বিভিন্ন অ্যাপ্লিকেশন ক্রিয়েচার না টুল, সেটা বলা কঠিন। তবে অল্টম্যান সম্পর্কে একটি বিষয় নির্দ্বিধায় বলা যায়— এ সম্পর্কিত পুরনো দৃষ্টান্তগুলো সঠিকভাবে আঁকড়ে ধরার আগেই নতুন কিছুর সূচনা করবেন তিনি।