গ্রামে গ্রামে হবে ডিজিটাল সেন্টার: পলক

নারী উদ্যোক্তাদের দীর্ঘ মেয়াদে ধরে রাখতে বিশেষ কর্মসূচি গ্রহণের আহ্বান জানিয়েছেন ই-ক্যাব প্রেসিডেন্ট শমী কায়সার।

নিজস্ব প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 11 Nov 2022, 03:47 PM
Updated : 11 Nov 2022, 03:47 PM

সরকারি-বেসরকারি সেবা জনগণের আরও কাছে নিয়ে যেতে দেশের প্রতিটি গ্রামে ডিজিটাল সেন্টার প্রতিষ্ঠার পরিকল্পনার কথা জানিয়েছেন আইসিটি প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহমেদ পলক।

তিনি বলেছেন, “দেশের ৮৭ হাজার গ্রামে একটি করে ডিজিটাল সেন্টার স্থাপন করা হবে, যাতে প্রতি ৫ কিলোমিটারের পরিবর্তে প্রতি ২ কিলোমিটারের মধ্যে একটি করে ডিজিটাল সেন্টার প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে জনগণের হাতের নাগালে সকল সেবা পৌঁছে দেওয়া সম্ভব হয়।”

এসপায়ার টু ইনোভেট-এটুআই কর্মসূচির অধীনে সারাদেশে ডিজিটাল সেন্টার প্রতিষ্ঠার যুগ পূর্তিতে আইসিটি টাওয়ারে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে এ পরিকল্পনার কথা জানান তিনি।

২০১০ সালের ১১ নভেম্বর সারা দেশের সাড়ে ৪ হাজার ইউনিয়নে একযোগে ‘ইউনিয়ন তথ্য ও সেবা কেন্দ্র’ উদ্বোধন করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।

সময়ের ধারাবাহিকতায় সেটির নাম ‘ইউনিয়ন ডিজিটাল সেন্টার’ হিসাবে পরিবর্তিত হয়। নগর ও প্রবাসে একই মডেলের সেন্টার করার ধারাবাহিকতায় এখন তা কেবল ‘ডিজিটাল সেন্টার’ হিসেবে পরিচিতি পাচ্ছে এসব সেবা কেন্দ্র।

দেশের বিভিন্ন প্রান্তে এবং প্রবাসে বর্তমানে ৮ হাজার ৮০৫টি ডিজিটাল সেন্টার রয়েছে বলে সংবাদ সম্মেলনে জানান এটুআই’র প্রকল্প পরিচালক দেওয়ান মুহাম্মদ হুমায়ূন কবীর। প্রবাসে ডিজিটাল সেন্টারের সংখ্যা ১৫টি।

“এসব সেন্টারের ১৬ হাজারের বেশি উদ্যোক্তা রয়েছেন। প্রতিমাসে গড়ে ৭০ লাখেরও অধিক সেবা দিচ্ছে। সেবার তালিকায় সব মিলিযে তিন শতাধিক সরকারি-বেসরকারি সেবা রয়েছে।”

সংবাদ সম্মেলনের মাধ্যমে এক ‍যুগ পূর্তি উপলক্ষে ডিজিটাল সেন্টার ঘিরে ‘স্মার্ট বাংলাদেশ ২০৪১: সবার জন্য স্মার্ট সেবা’ শীর্ষক ক্যাম্পেইন চালু করেছে এটুআই।

তৃণমূল পর্যায়ের উদ্যোক্তাদের এগিয়ে নিতে সরকার কাজ করছে উল্লেখ করে তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি প্রতিমন্ত্রী পলক বলেন, “ইন-লাইনের সেবা অনলাইনে, শহরের সেবা গ্রামে এবং দেশের সেবা বিদেশে নিয়ে যেতে কাজ করেছে ডিজিটাল সেন্টার।

“তরুণদেরকে কেবল ‘চাকরি প্রত্যাশী’ হিসাবে না রেখে ‘চাকরিদাতা’ হিসাবে প্রতিষ্ঠার কাজটি ডিজিটাল সেন্টার করতে পেরেছে।”

ডিজিটাল সেন্টার নিয়ে পরিকল্পনার কথা জানিয়ে তিনি বলেন, “নারী-পুরুষের মধ্যে অংশীদারিত্বমূলক পরিবেশ তৈরির মাধ্যমে প্রতিটি ডিজিটাল সেন্টারকে গ্রামীণ অর্থনৈতিক হাব হিসেবে প্রতিষ্ঠায় উদ্যোক্তারা যেন কাজ করতে পারেন, সেজন্য আমাদের উদ্যোগ গ্রহণ করতে হবে।

“প্রয়োজনে শেখ রাসেল ডিজিটাল ল্যাবের অবকাঠামোকে কাজে লাগিয়ে ডিজিটাল সেন্টারের উদ্যোক্তাদের প্রশিক্ষণ কেন্দ্র হিসেবে এগুলোকে ব্যবহারের সুযোগ প্রদান করা হবে।”

অনুষ্ঠানে এটুআই’র পলিসি অ্যাডভাইজার আনীর চৌধুরী বলেন, “সারাদেশের ডিজিটাল সেন্টারগুলোকে দেশের সব উপজেলার কুটির, অতি ক্ষুদ্র, ক্ষুদ্র ও মাঝারি (সিএমএসএমই) শিল্প হাব হিসেবে তৈরি করতে আমরা ইতোমধ্যে কার্যক্রম শুরু করেছি।”

বাংলাদেশে প্রতিষ্ঠিত ডিজিটাল সেন্টার মডেলটি ভবিষ্যতে বিদেশের মাটিতে প্রতিস্থাপনের উদ্যোগ নেওয়া হচ্ছে জানিয়ে তিনি বলেন, “আগামী তিন বছরের মধ্যে জাতিসংঘের সহায়তায় এর অধিভুক্ত ১৭০টি সদস্য দেশের মধ্যে অন্তত ৫০টি দেশে বাংলাদেশের ডিজিটাল সেন্টারের মডেলটি প্রতিস্থাপনের পরিকল্পনা রয়েছে।”

তৃণমূলে নারী উদ্যোক্তারা নানা কারণে ঝরে পড়ে জানিয়ে অনুষ্ঠানে ই-কমার্স অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (ই-ক্যাব) প্রেসিডেন্ট শমী কায়সার বলেন, “নারী উদ্যোক্তাদের দীর্ঘ মেয়াদে ধরে রাখতে বিশেষ কর্মসূচি গ্রহণের আহ্বান জানাচ্ছি।”

ইউএনডিপি’র সহায়তায় মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ এবং তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি বিভাগের আওতায় বাস্তবায়ন হচ্ছে ‘এটুআই’ কর্মসূচি। এটু্আইকে স্বায়ত্তশাসিত সংস্থায় রূপ দিতে ইতোমধ্যে আইনের খসড়া অনুমোদন দিয়েছে সরকার।

ডিজিটাল সেন্টারের যুগ পূর্তির অনুষ্ঠানে অন্যদের মধ্যে বক্তব্য দেন আইসিটি বিভাগের জ্যেষ্ঠ সচিব এন এম জিয়াউল আলম, স্থানীয় সরকার বিভাগের অতিরিক্ত সচিব মহ. শের আলী, বাংলাদেশ কম্পিউটার সমিতির (বিসিএস) সভাপতি সুব্রত সরকার, বাংলাদেশ ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান সমিতির সভাপতি মো. বেলায়েত হোসেন গাজী বিল্লাল।