এটি বিভিন্ন এমন সব বিষয় প্রকাশ করতে পারে, যার ওপর পরীক্ষা চালানো হয়েছে সেই ব্যক্তি হয়তো নিজেই সেগুলো জানেন না।
Published : 08 Jun 2023, 02:43 PM
ভবিষ্যতে ‘ব্রেইন মনিটরিং’ প্রযুক্তি ব্যবহার করে বিভিন্ন কোম্পানি তাদের কর্মীর ওপর নজরদারি করবে বা নিয়োগ দেবে, এমনই সতর্কবার্তা দিলেন ডেটা নিয়ন্ত্রকরা।
ব্রিটিশ তথ্য কমিশনারের অফিস (আইসিও) বলছে, এই প্রযুক্তি সঠিকভাবে বিকাশ বা ব্যবহার না করলে ‘বৈষম্যের’ মতো ঝুঁকি থাকতে পারে।
‘নিউরোডেটা’ বা মস্তিষ্ক ও স্নায়ুতন্ত্র সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন তথ্য নিয়ে ‘টেক ফিউচারস: নিউরোটেকনলজি’ নামে নিজেদের প্রথম প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে সংস্থাটি।
ইলন মাস্কের নিউরালিংকের মতো কোম্পানিগুলো মানব মস্তিষ্কে কম্পিউটার সংযোগের বিভিন্ন নতুন উপায় খোঁজার মধ্যেই এটি প্রকাশ পেলো।
‘সাইক্লিং দুর্ঘটনা’
“আমাদের দেখা বিভিন্ন সূচকের ভিত্তিতে দেখা যাচ্ছে এই খাতে বিনিয়োগ ও পেটেন্ট উভয় ক্ষেত্রেই বেশ দ্রুত বাড়ছে।” --বলেন আইসিও’র নির্বাহী পরিচালক স্টিফেন আমন্ড।
আইসিও বলছে, এরইমধ্যে স্বাস্থ্যসেবা খাত, যেখানে কঠোর নীতিমালা রয়েছে, সেখানে ‘নিউরোটেকের’ ব্যবহার লক্ষ্য করা গেছে।
১২ বছর আগে সাইক্লিং দুর্ঘটনায় পা হারানো গার্ট-জ্যান অসকামের মস্তিষ্কে বৈদ্যুতিক ইমপ্ল্যান্ট বসানোর পর তিনি নিজের হাঁটার সক্ষমতা পুনরায় ফিরে পান।
আর এই প্রযুক্তিতে বাণিজ্যিক আগ্রহও বেড়েছে।
মানুষের ওপর স্থাপনযোগ্য ‘ব্রেইন-কম্পিউটার ইন্টারফেইস’ পরীক্ষার অনুমতি পেয়েছে নিউরালিংক। এরইমধ্যে এই প্রযুক্তির বাণিজ্যিক পণ্য উন্মোচনের কোনো সম্ভাবনা না থাকলেও কোম্পানির বাজারমূল্য গিয়ে ঠেকেছে পাঁচশ কোটি ডলারে।
‘কর্মক্ষেত্রে চাপ’
এদিকে, কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার কারণেও বিভিন্ন নতুন সম্ভাবনার পথ খুলছে। বিভিন্ন গবেষণা প্রকল্পের সহায়তায় এখন মস্তিষ্ক স্ক্যান করার মাধ্যমেই শব্দ বা বাক্য ‘ডিকোড’ করা যায়। পরবর্তীতে গিয়ে এটি ‘লক-ইন সিন্ড্রোম’ থাকা রোগীদের সাহায্য করতে পারে বলে প্রতিবেদনে লিখেছে বিবিসি। এটি এমন এক রোগ, যেখানে রোগী সচেতন থাকলেও নড়চড়া করতে বা কথা বলতে পারেন না।
তবে এই প্রতিবেদনে দৃষ্টি আকর্ষণ করা হয় সেইসব প্রযুক্তির ওপর, যেগুলো ভবিষ্যতে আসার সম্ভাবনা রয়েছে। আর এগুলো নিউরোডেটার সমস্যাগুলো খোঁজার ‘অনুমানমূলক উদাহরণ’ হিসেবে ব্যবহৃত হয়েছে বলে প্রতিবেদনে উল্লেখ করেছে বিবিসি।
আইসিও’র অনুমান বলছে, চার থেকে পাঁচ বছরে ‘কর্মী ট্র্যাক করার’ ব্যবস্থা বিস্তৃত হলে কর্মক্ষেত্রে নিয়মিত নিরাপত্তা, উৎপাদনশীলতা ও নিয়োগের বেলাতেও ‘নিউরো’ প্রযুক্তি ব্যবহারের সম্ভাবনা আছে।
ভবিষ্যতে হেলমেট বা এই ধরনের কোনো নিরাপত্তা যন্ত্র উচ্চ ঝুঁকিপূর্ণ পরিবেশে কোনো কর্মীর মনযোগের মাত্রা পরিমাপ করতে পারবে বলে প্রতিবেদনে লিখেছে বিবিসি।
আমন্ড আরও বলেন, কর্মক্ষেত্রে চাপের বিপরীতে কর্মীরা কীভাবে প্রতিক্রিয়া দেখান, সেটি মূল্যায়নেও কোম্পানির কর্মকর্তারা এটি ব্যবহার করতে পারেন।
দীর্ঘ মেয়াদে শিক্ষা খাতে, শিক্ষার্থীর মনযোগ ও চাপের মাত্রা পরিমাপে বিভিন্ন পরিধানযোগ্য মস্তিষ্ক পর্যবেক্ষক ডিভাইস ব্যবহারের সম্ভাবনা রয়েছে।
এরইমধ্যে আকারে ছোট ও তুলনামূলক নিয়ন্ত্রিত গবেষণা ব্যবস্থায় সীমিত পরিসরে ‘নিউরোমার্কেটিংয়ের’ ব্যবহার রয়েছে, যেখানে মস্তিষ্কের কার্যক্রম পরিমাপ করতে পারে এমন মেডিকেল ডিভাইস ব্যবহার করে গ্রাহকদের প্রতিক্রিয়া মূল্যায়ন করা হয়। তবে, এর যোগ্যতা নিয়ে এখনও প্রশ্ন রয়েছে।
আইসিও বলছে, ভবিষ্যতে ঘরে বসে গ্রাহকের পছন্দমতো মস্তিষ্কের প্রতিক্রিয়া পড়তে পারে, এমন ‘নন-ইনভেসিভ ডিভাইস’ ব্যবহারের সম্ভাবনাও আছে।
প্রতিবেদনের এক ‘সুদূরপ্রসারী উদাহরণে’ এমন কল্পনার কথা উঠে আসে যে, ভবিষ্যতে বিজ্ঞাপন দেখানোর উদ্দেশ্যে নিউরো প্রযুক্তি থাকা হেডফোনের সংরক্ষিত ডেটা ব্যবহৃত হতে পারে।
গেইমিং ও বিনোদন খাতেও এটি ব্যবহারের সম্ভাবনা আছে। কোনো কোনো গেইম ও ড্রোন এরইমধ্যে মস্তিষ্ক পড়তে পারে এমন ডিভাইসের মাধ্যমে নিয়ন্ত্রিত হয়।
তবে আইসিও’র শঙ্কা হলো, সাবধানতা অবলম্বণ করে বিকাশ না করলে কিছু ক্ষেত্রে এই প্রযুক্তি ‘বৈষম্য’ সৃষ্টি করতে পারে।
কৌশলী প্রশ্ন
আমন্ড বলেন, নির্দিষ্ট কিছু ক্ষেত্রে ভুল জবাব দেওয়ার মাধ্যমে এই প্রযুক্তি নিজেও পক্ষপাতমূলক আচরণ করতে পারে।
তবে, ‘নিউরোডাইভার্জেন্ট’ অর্থাৎ কিছুটা ভিন্ন আচরণ করা ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে বৈষম্যের উদ্দেশ্যে কোম্পানির শীর্ষ কর্তারা এটি ব্যবহার করতে পারেন, এমন ঝুঁকির কথাও বলেছে সংস্থাটি।
আর এটি বিভিন্ন এমন সব বিষয় প্রকাশ করতে পারে, যার ওপর পরীক্ষা চালানো হয়েছে সেই ব্যক্তি হয়তো নিজেই জানেন না।
আর এতে ‘কনসেন্ট’-এর বিষয়টি নিয়েও প্রশ্ন উঠেছে। প্রতিবেদন বলছে, নিউরোডেটা অবচেতনভাবে তৈরি হয় ও প্রকাশ পাওয়া তথ্যের ওপর মানুষের সরাসরি কোনো নিয়ন্ত্রণ নেই।
“এই প্রযুক্তি আপনার সম্পর্কে কী প্রকাশ করতে চলেছে, সেটি না জানলে আপনি কি সতিই নিজের সম্পর্কে ব্যক্তিগত ডেটা প্রক্রিয়াকরণের আগাম অনুমতি দেবেন?” --বলেন আমন্ড।
“কারণ, একবার প্রকাশ হয়ে যাওয়া ডেটার ওপর কম নিয়ন্ত্রণ থাকবে আপনার।”
২০২৫ সাল নাগাদ নতুন নিউরোডেটা নির্দেশিকা তৈরির কাজ শেষ করতে চায় আইসিও।