Published : 04 May 2025, 08:04 PM
স্টিভ জবস, বিল গেটস ও মার্ক জাকারবার্গের মতো বিখ্যাত এসব ব্যক্তি আজকের প্রযুক্তি জগতে অসম্ভব প্রভাবশালী। এর বাইরে, তাদের মধ্যে আরও একটি মিল রয়েছে। এরা সকলে বাঁহাতি।
পৃথিবীর কেবল ১০ শতাংশ মানুষ বাঁহাতি হলেও বিস্ময়কর বিষয় হচ্ছে অনেক সফল প্রযুক্তি উদ্ভাবক এই ছোট অংশের মধ্যে রয়েছেন। বাঁহাতিদের মধ্যে কিছু আলাদা গুণ থাকতে পারে, যা তাদের সাফল্যে সাহায্য করে বলে প্রতিবেদনে লিখেছে বিজ্ঞানভিত্তিক সাইট নোরিজ।
বাঁহাতিদের মধ্যে রয়েছেন, স্টিভ ফোর্বস, হেনরি ফোর্ড, রতন টাটা ও জন ডি রকফেলারের মতো ঐতিহাসিক ব্যক্তিরাও।
দীর্ঘদিন ধরে প্রচলিত একটি ধারণা হচ্ছে, বামহাতি লোকেরা বেশি সৃজনশীল হন। এর সম্ভাব্য কারণ, বাম হাত মস্তিষ্কের ডান পাশের অংশের মাধ্যমে নিয়ন্ত্রিত হয়। আর, মস্তিষ্কের এ অংশটি মানুষের সৃজনশীল চিন্তাভাবনার সঙ্গে যুক্ত।
তবে এখনও পর্যন্ত বামহাতি আচরণের সঙ্গে ব্যবসায়িক উদ্ভাবন সংযোগের খুব একটা বৈজ্ঞানিক প্রমাণ ছিল না।
হংকংয়ের ‘ইউনিভার্সিটি অফ সায়েন্স অ্যান্ড টেকনোলজি’র অধ্যাপক লং চেন, জুন উ পার্ক ও তাদের সহকর্মীদের করা নতুন এক গবেষণায় এমন পরিস্থিতির বদল ঘটেছে। তারা দেখার চেষ্টা করেছেন, বাঁহাতি প্রযুক্তি সিইওরা আসলে কোম্পানি পরিচালনায় আরও উদ্ভাবনী কি না।
শুরুতে ‘এস অ্যান্ড পি ৫০০’-এর অন্তর্ভুক্ত কোম্পানির এক হাজারেও বেশি সিইও’র মধ্যে কতজন ডানহাতি আর কতজন বাঁহাতি তা খুঁজে বের করার জন্য ছবি, ভিডিও ও অন্যান্য সূত্র ব্যবহার করেন গবেষকরা। যেমন– তারা কোন হাতে ঘড়ি পরেন বা কীভাবে গলফ ক্লাব ধরেন এমনসব বিষয়। প্রয়োজনে এসব কোম্পানির সঙ্গে সরাসরি যোগাযোগও করেছেন তারা।
কে বামহাতি বা ডানহাতি তা শনাক্তের পর প্রতিটি কোম্পানির উদ্ভাবনী কর্মসক্ষমতা পরীক্ষা করে দেখেছে গবেষণা দলটি।
এজন্য ১৯৯২ থেকে ২০১৫ সালের মধ্যে সেসব কোম্পানি কতগুলো পেটেন্ট বা নতুন আবিষ্কারের স্বত্ব পেয়েছে ও সেসব পেটেন্ট কতবার অন্যরা উদ্ধৃত করেছে বা ব্যবহার করেছে তাও খতিয়ে দেখেছেন তারা। এতে করে সিইওদের নেতৃত্বে এসব কোম্পানি আসলে কতটা উদ্ভাবনী ছিল তা জানা সম্ভব হয়েছে।
প্রত্যেক সিইও’র ব্যাকগ্রাউন্ড দেখার পাশাপাশি তাদের বয়স, শিক্ষা ও তারা কোম্পানির প্রতিষ্ঠাতা কি না তাও দেখেছে গবেষণা দলটি। যাতে নিশ্চিত হওয়া যায় যে গবেষণার ফলাফল অন্য কোনো কারণে হয়নি।
গবেষণায় উঠে এসেছে, বামহাতি সিইওদের নেতৃত্বে কেবল প্রচলিত প্রযুক্তির বৈচিত্র্য নয়, বরং বেশি সংখ্যক উদ্ভাবনী ও মৌলিক পেটেন্টও তৈরি করেছে এসব কোম্পানি।
এই সিইও’রা দক্ষ কর্মী নিয়োগের দিকেও বেশি মনোযোগী ছিলেন, বিশেষ করে স্টেম বা বিজ্ঞান, প্রযুক্তি, প্রকৌশল ও গণিত খাতে এবং ‘এইচ-১বি’ ভিসার মাধ্যমে বিদেশি উদ্ভাবকদেরও নিয়োগ দিতেন তারা। মূলত মেধা ও উদ্ভাবনাকে অনেক গুরুত্ব দিয়েছেন এরা। মজার ব্যাপার হচ্ছে, বাঁহাতি সিইওদের মধ্যে অনেকেই নিজেরাই উদ্ভাবকও ছিলেন।
উদ্ভাবন ভালো বিষয় তবে বড় প্রশ্ন হচ্ছে, এটা কি সত্যিই ব্যবসার উন্নতিতে সাহায্য করে? গবেষণায় উঠে এসেছে, করে। ডানহাতি সিইওদের তুলনায় যেসব কোম্পানির নেতৃত্বে বাঁহাতি সিইওরা রয়েছেন সেগুলোর সম্পদের ওপর লাভ বেশি এবং দীর্ঘমেয়াদে তাদের শেয়ার বাজারের কর্মক্ষমতাও ভালো। এ উদ্ভাবন আসলে আর্থিক ফলেও ইতিবাচক প্রভাব ফেলেছে।
এর মানে এই নয় যে, ডানহাতি সিইওরা উদ্ভাবনী হতে পারেন না। গবেষকরা জোর দিয়ে বলেছেন, একজন নেতার সাফল্য অনেক বিষয়ের মাধ্যমে প্রভাবিত হতে পারে, কেবল হাতের দিক দিয়ে নয়।
তবে এ গবেষণায় ইঙ্গিত মিলেছে, বাঁহাতি হওয়ার মতো ব্যক্তিগত একটি বৈশিষ্ট্যও একজন সিইও’র সিদ্ধান্ত নেওয়ার ধরন ও শেষ পর্যন্ত কোম্পানির সাফল্যের ওপরও প্রভাব ফেলতে পারে।
গবেষণাটি প্রকাশ পেয়েছে বিজ্ঞানভিত্তিক জার্নাল ‘সায়েন্সডাইরেক্ট’-এ।