নাসা’র ‘চন্দ্র এক্স-রে অবজারভেটরি’ ব্যবহার করে গবেষকরা ব্ল্যাক হোল থেকে দূরে থাকা সুপারহিটেড বা অতি উত্তপ্ত গ্যাসের একটি লম্বা চিমনি পর্যবেক্ষণ করেছেন।
Published : 22 May 2024, 03:39 PM
সম্প্রতি মিল্কিওয়ের বিশালাকার ব্ল্যাক হোলের ‘একজস্ট ভেন্ট’ বা নিষ্কাশন ব্যবস্থা খুঁজে পাওয়ার দাবি করেছেন বিজ্ঞানীরা।
আমাদের ছায়াপথ মিল্কিওয়ের কেন্দ্রে ‘স্যাজিটেরিয়াস এ*’ নামে একটি সুপারম্যাসিভ ব্ল্যাক হোল রয়েছে।
পৃথিবী থেকে প্রায় ২৬ হাজার আলোকবর্ষ দূরে অবস্থিত ব্ল্যাক হোলটি নিজের ভেতরের বিষ্ফোরণকে বাইরের দিকে বের করে দিচ্ছে। সম্প্রতি এমনটি ঘটার কারণ খুঁজে পেয়েছেন জ্যোতির্বিজ্ঞানীরা, যেটিকে ব্লাক হোলের ‘একজস্ট ভেন্ট’ বলে ধারণা করা হচ্ছে।
নাসা’র ‘চন্দ্র এক্স-রে অবজারভেটরি’র সহায়তায় ব্ল্যাক হোল থেকে দূরে সরতে থাকা অতি উত্তপ্ত গ্যাসের একটি লম্বা চিমনি শনাক্ত করেছেন গবেষকরা।
তাদের দাবি, এইসব কাঠামো সুপারম্যাসিভ ব্ল্যাক হোল থেকে সৃষ্ট অগ্ন্যুৎপাতের মাধ্যমে তৈরি হয়েছে।
এ গবেষণাটি বিজ্ঞানীদের বুঝতে সাহায্য করছে, এ ধরনের বিশাল ব্ল্যাক হোলের আশপাশে আসলে কী ঘটছে ও এরা কীভাবে এদের আশপাশের উপাদান গ্রাস করে ও শক্তি বের করে দেয়।
“আমাদের ছায়াপথ ও বিভিন্ন ছায়াপথ কীভাবে বিবর্তিত হয়, সে সম্পর্কে আরও তথ্য জানতে সাহায্য করে মিল্কিওয়ের কেন্দ্র ও এর ব্ল্যাক হোল থেকে বিভিন্ন উপাদান ও শক্তির গতিবিধি বোঝার বিষয়টি,” বলেছেন ‘ইউনিভার্সিটি অফ শিকাগো’র বিজ্ঞানী ও এ গবেষণার নেতৃত্বে থাকা স্কট ম্যাকি।
“আমরা এমন নতুন ধাঁধার টুকরা পেয়ে সত্যিই রোমাঞ্চিত।”
ব্ল্যাক হোল কিভাবে কাজ করে
প্রায় সব ছায়াপথের কেন্দ্রেই বিশাল ব্ল্যাক হোল থাকে। প্রচলিত তত্ত্বের বিপরীত তত্ত্ব হল, ব্ল্যাক হোলের কাজ শুধু এর আশপাশের সবকিছু শুষে নেওয়া নয়।
ব্ল্যাক হোলের কাছাকাছি কিছু উপাদান উচ্চ গতিতে বিস্ফোরিত হয়। বিজ্ঞানীরা জানতে চান, এতে করে ব্লাক হোল থেকে কী পরিমাণ উপাদান বের হয়, এমনটি কত সময় পরপর ঘটে ও কোন প্রক্রিয়ায় এটি ঘটে থাকে।
এ বিষয়ে আরও তথ্য জানতে নাসার ‘চন্দ্র এক্স-রে’ নামের টেলিস্কোপ ব্যবহার করেছেন ম্যাকি ও তার গবেষণা দল, যা পৃথিবীকে প্রদক্ষিণ করে ও মহাকাশে এক্স রশ্মি শনাক্ত করার উদ্দেশ্যে নকশা করা।
এক্স-রে মূলত খুব ছোট তরঙ্গদৈর্ঘ্যের উচ্চ-শক্তির আলো।
এর আগে জ্যোতির্বিজ্ঞানীরা এমন গরম উপাদানের একটি ‘চিমনি’ শনাক্ত করেছিলেন, যা ছায়াপথের কেন্দ্র থেকে শুরু হয়ে মিল্কিওয়ের সর্পিল ডিস্কে লম্বাভাবে প্রসারিত হয়। তারা সন্দেহ করেছিলেন, বিভিন্ন শক্তিশালী চৌম্বকীয় ক্ষেত্র চিমনিটির দেয়াল হিসাবে কাজ করে ও এর মধ্য দিয়ে গরম গ্যাস ধোঁয়ার মতো করে প্রবাহিত হয়।
“আমরা এখন জানি চিমনির ওপর একটি ‘একজস্ট ভেন্ট’ আছে,” বলেন ম্যাকি। নতুন সন্ধান পাওয়া এ ভেন্টটি ছায়াপথের কেন্দ্র থেকে প্রায় সাতশ আলোকবর্ষ দূরে অবস্থিত। এর মানে, গ্যাসটি ব্ল্যাক হোল থেকে অনেক দূরে চলে গেছে, যার তুলনা করা যায় কোনো পিঁপড়াকে এভারেস্টের উচ্চতায় ভ্রমণ করার সঙ্গে।
ব্ল্যাক হোলের খাদ্যাভ্যাস
প্রক্রিয়াটি কীভাবে কাজ করে সে সম্পর্কে বিজ্ঞানীদের ধারণা হল, কখনও কখনও তারাও ব্ল্যাক হোলের মধ্যে পড়ে যায়। কিন্তু এটি অগোছালো ভক্ষক হওয়ায় কিছু কিছু উপাদান এর থেকে দূরে সরে যায়।
এ অতি উত্তপ্ত গ্যাস অত্যন্ত উচ্চ গতিতে চিমনির দিকে ভ্রমণ করে ও ‘একজস্ট ভেন্টে’র মাধ্যমে বাইরে বেরিয়ে আসে। গরম গ্যাসের নড়াচড়ার সঙ্গে সঙ্গে এটি চিমনির শীতল গ্যাসের সঙ্গে সংঘর্ষ করার মাধ্যমে এক ধরনের ‘শক ওয়েভ’ তৈরি করে, যা থেকে উজ্জ্বল এক্সরে নির্গত হয়। আর এ বিষয়টিই শনাক্ত হয়েছে টেলিস্কোপটি।
তবে, ব্ল্যাক হোল কত সময় পরপর নিজের আশপাশের উপাদান গিলে খায়, সেটি নিয়ে বিজ্ঞানীরা এখনও অনিশ্চিত।
“স্যাজিটারিয়াস এ* (মিল্কিওয়ের ব্ল্যাক হোল)’-এ আগুনের গুচ্ছের মতো প্রচুর পরিমাণ উপাদান ফেলে দেওয়ার কারণে এই শক্তি ও তাপ সৃষ্টি হয় কি না, তা আমরা জানি না,” বলেন ‘ইউনিভার্সিটি অফ ক্যালিফোর্নিয়া লস এঞ্জেলেস’-এর গবেষক ও এ গবেষণার সহ-লেখক মার্ক মরিস।
“অথবা এমনও হতে পারে যে, ব্ল্যাক হোলের ছোট ছোট উপাদান খেয়ে ফেলার কারণে এমনটি ঘটছে, যেমন কোনো অগ্নিশিখা থেকে নিয়মিত আগুন নিক্ষেপ করার ফলে ঘটে থাকে।”
বিজ্ঞানভিত্তিক সাইট নোরিজ বলছে, মিল্কিওয়ের কেন্দ্রের কাছাকাছি থাকা দুটি বড় কাঠামো, যেগুলো ‘ফার্মি বাবলস’ ও ‘ইরোসিটা বাবলস’ নামে পরিচিত, সে সম্পর্কেও তথ্য মেলার সম্ভাবনা দেখাচ্ছে এ ভেন্টটি। আর এ কাঠামোগুলোর নামকরণ হয়েছে যে টেলিস্কোপ দিয়ে এদের শনাক্ত করা হয়েছিল, সেগুলোর নামানুসারে।
মহাজাগতিক রশ্মি ও গ্যাসে পরিপূর্ণ এইসিভ বিশাল আকারের বাবল অনেক আগে ‘স্যাজিটারিয়াস এ*’-এর আশপাশে ঘটে যাওয়া শক্তিশালী বিস্ফোরণের প্রমাণ হতে পারে। পাশাপাশি, ছায়াপথের কেন্দ্র এখনকার তুলনায় অতীতে বেশি সক্রিয় ছিল, এমন সম্ভাবনাও আছে।