সারাদিনের কাজ শেষে বই পড়া কেবল নিজেকে খানিকটা স্বাধীনতা দেওয়ার উপায়ই নয়, বরং মানুষের জীবনের কিছু বড় প্রশ্ন বোঝার ক্ষেত্রেও এমন অভ্যাস সহায়ক ভূমিকা রাখতে পারে।
Published : 27 May 2024, 02:10 PM
বহুল আলোচিত চ্য্যাটবট চ্যাটজিপিটি’র নির্মাতা ওপেনএআইয়ের সহ-প্রতিষ্ঠাতা স্যাম অল্টম্যান এমন নয়টি বই পড়ার সুপারিশ করেছেন, যা সবার পড়া উচিৎ।
মানুষের জ্ঞান ও ব্যক্তিত্ব বিকাশের অন্যতম শক্তিশালী উপায় হল কিছু পড়া। আর স্যাম অল্টম্যান এ বিষয়টি খুব ভালভাবেই জানেন। দীর্ঘদিন ধরেই বইয়ের প্রতি নিজের অনুরাগের কথা বলে আসছেন তিনি। তার বিশ্বাস, সারাদিনের কাজ শেষে বই পড়া কেবল নিজেকে খানিকটা স্বাধীনতা দেওয়ার উপায়ই নয়, বরং মানুষের জীবনের কিছু বড় প্রশ্ন বোঝার ক্ষেত্রেও এমন অভ্যাস সহায়ক ভূমিকা রাখতে পারে।
স্যামের ব্যক্তিগত বই পড়ার তালিকাটি বিভিন্ন এমন বিস্ময়কর বইয়ে ভরপুর, যেখানে এআইয়ের ব্যবহারকে ঘিরে আইনস্টাইনের ব্যক্তিগত সংগ্রাম থেকে শুরু করে প্রচলিত ননফিকশন, সবই আছে। আর এ প্রযুক্তির দুনিয়ায় মানবতার জন্য সামনে কী অপেক্ষা করছে, সে সম্পর্কে বিভিন্ন চিন্তামূলক প্রশ্ন উত্থাপন করার সঙ্গে সঙ্গে বইগুলো মনের দরজাও খুলে দেয় বলে প্রতিবেদনে লিখেছে ‘ব্লিঙ্কিস্ট ম্যাগাজিন’।
জেনে নিতে পারেন এই নয়টি বই সম্পর্কে—
১. ম্যান’স সার্চ ফর মিনিং
ভিক্টর ফ্রাঙ্কলের লেখা বই ‘ম্যান’স সার্চ ফর মিনিং’ একটি মনস্তাত্ত্বিক ক্লাসিক, যা অকল্পনীয় দুঃখ ভোগ করা সত্ত্বেও জীবনের অর্থ খোঁজার ধারণাকে প্রতিনিয়ত পরীক্ষা করে। বইটিতে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় ইউরোপীয় ইহুদিদের গণহত্যার বিষয়টি নিজস্ব অভিজ্ঞতার আলোকে তুলে ধরেছেন ফ্র্যাঙ্কল। আর মানুষ কীভাবে যে কোনো পরিস্থিতিতে নিজের অনন্য উদ্দেশ্য খুঁজে পেতে পারে, বইটিতে তার নমুনাও দেখিয়েছেন তিনি।
২. থিঙ্কিং, ফাস্ট অ্যান্ড স্লো
মানব মস্তিষ্ক কীভাবে চিন্তা করে ও সিদ্ধান্ত নেয়, তা খুঁজে বের করতে সাহায্য করে ড্যানিয়েল কাহনেম্যানের ‘থিঙ্কিং, ফাস্ট অ্যান্ড স্লো’ বইটি। এতে তিনি নিজের নোবেল পুরস্কারজয়ী এক গবেষণা তুলে ধরেছেন, যেখানে কীভাবে মানুষ তথ্য প্রক্রিয়া করে ও অনুমান কখনও কখনও কেন বিশ্লেষণ ক্ষমতার চেয়ে কম নির্ভরযোগ্য হয়, সে বিষয়টি উল্লেখ করা হয়েছে।
৩. জিরো টু ওয়ান
পিটার থিয়েলের লেখা ‘জিরো টু ওয়ান’ বইতে উদ্ভাবনের জন্য এক অপ্রচলিত পদ্ধতি তুলে ধরা হয়েছে। এতে থিয়েল যুক্তি দেন, এরইমধ্যে প্রচলিত কিছু উন্নত করার চেয়ে নতুন কিছু তৈরি করা বেশি গুরুত্বপূর্ণ। বইটি মানুষের উদ্ভাবন ও সৃজনশীলতা সম্পর্কে ভেবে দেখার উপায় একেবারে বদলে দিতে পারে বলে প্রতিবেদনে লিখেছে ব্লিঙ্কিস্ট।
৪. ব্রেভ নিউ ওয়ার্ল্ড
‘ব্রেভ নিউ ওয়ার্ল্ড’ বইয়ে লেখক অ্যালডাস হাক্সলি এমন ভবিষ্যৎ প্রেক্ষাপট তুলে ধরেছেন, যেখানে সুখ যান্ত্রিকভাবেই তৈরি হয় ও এতে মানুষের ব্যক্তিত্ব হারিয়ে যায়। বইতে উল্লেখ রয়েছে, এমন কারও পথ অনুসরণ করুন, যিনি সিস্টেমকে প্রশ্ন করার সাহস রাখেন, যেখানে তিনি আপনাকে এ চটকদার, জটিল সমাজের প্রেক্ষাপট ও এর বিভিন্ন প্রভাবে প্রতিফলণ ঘটানোর আমন্ত্রণ জানাচ্ছেন।
৫. দ্য বিগিনিং অফ ইনফিনিটি
ডেভিড ডয়েচের ‘দ্য বিগিনিং অফ ইনফিনিটি’ বইটি মানুষের যুক্তি ও কল্পনা শক্তি নিয়ে লেখা। এতে ডয়েচ যুক্তি দেন, মানুষ যদি পূর্ণ সক্ষমতা দিয়ে নিজের মনকে ব্যবহার করতে পারে, তবে তাদের অর্জনের কোনো সীমা থাকবে না। বইটি মানুষের নিজস্ব ও বৈশ্বিক সম্ভাবনা নিয়ে প্রচলিত ধারণায় পরিবর্তন আনতে পারে বলে প্রতিবেদনে লিখেছে ব্লিঙ্কিস্ট ম্যাগাজিন।
৬. ব্লিটসস্কেলিং
রিড হফম্যান নিজের লেখা ‘ব্লিটসস্কেলিং’ বইটিতে ব্যাখ্যা করেছেন, কীভাবে বিভিন্ন স্টার্টআপ কোম্পানি পণ্যের গুণমান বা দীর্ঘমেয়াদী স্থায়িত্বকে বাদ না দিয়েই দ্রুত বিকশিত হতে পারে। এতে এয়ারবিএনবি, ফেইসবুক ও গুগল’সহ ইতিহাসে সবচেয়ে সফল কিছু প্রযুক্তি কোম্পানি নিয়ে গবেষণা করে হফম্যান তুলে ধরেছেন, কীভাবে কোম্পানিগুলো এত বেশি এগিয়ে গিয়েছে।
৭. সুপারইন্টেলিজেন্স
নিক বোস্ট্রমের লেখা ‘সুপারইন্টেলিজেন্স’ বইটি মানবজাতির ভবিষ্যতে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার ইতিবাচক ও নেতিবাচক প্রভাব উভয়ই দেখিয়েছে। একইসঙ্গে এ মুহুর্তে এআই নিয়ে মানুষ কী করতে পারে, বিভিন্ন মেশিন মানুষের চেয়ে স্মার্ট হয়ে গেলে কী ঘটতে পারে, বইটিতে সেইসব প্রেক্ষাপটের বিভিন্ন প্রভাব খুঁজে দেখার পাশাপাশি এআই’কে মানুষের নিয়ন্ত্রণে রাখতে পারার বিষয়টি নিশ্চিত করার বিভিন্ন উপায়ও দেখিয়েছেন বোস্ট্রম।
৮. উইনিং
জ্যাক ওয়েলচের লেখা ‘উইনিং’ বইটিতে ইতিহাসের অন্যতম সফল সিইও’দের পরামর্শ তুলে ধরা হয়েছে। এতে কীভাবে এমন এক উদ্ভাবনী সংস্থা তৈরি করা যায়, যার অংশ সবাই হতে চায়, তার ব্যবহারিক পরামর্শ দেওয়া হয়েছে। এ ছাড়া, কোনো কোম্পানির মধ্যে কীভাবে বিজয়ী দল ও সংস্কৃতি গড়ে তুলতে কী লাগে, সে সম্পর্কেও ধারণা মিলেছে বইটিতে।ব্লিঙ্কিস্ট ম্যাগাজিন বলছে, এটি এমন এক চ্যালেঞ্জিং বই, যা মানুষকে নেতৃত্ব দেওয়া ও কোম্পানি ব্যবস্থাপনা সংশ্লিষ্ট প্রচলিত ধারণার বিপরীতে নতুন করে ভেবে দেখতে বাধ্য করবে।
৯. সিক্রেটস অফ স্যান্ড হিল রোড
‘সিক্রেটস অফ স্যান্ড হিল রোড’ বইটি সিলিকন ভ্যালির সবচেয়ে বিখ্যাত ঠিকানা অর্থাৎ ‘স্যান্ড হিল রোড’-এর পর্দার আড়ালে কী ঘটে, সে সম্পর্কে ধারণা দেয়। এতে শীর্ষ পর্যায়ের নীতিনির্ধারকরা কীভাবে কাজ করেন ও অনুদান খোঁজা বিভিন্ন স্টার্টআপে তারা কী খুঁজছে, তার ভেতরের খবর জানা যাবে। এমনকি কয়েকজন শীর্ষস্থানীয় বিনিয়োগকারীর দৃষ্টিভঙ্গিও তুলে ধরা হয়েছে বইটিতে। এ ছাড়া, কোনও উদ্যোক্তার মূলধন বাড়ানো ও বিনিয়োগকারীদের কাছে প্রস্তাব দেওয়ার প্রচলিত ধারণাতেও পরিবর্তন আনতে পারে বইটি।