সুনো গত বছর নিজেদের প্রথম পণ্য প্রকাশ করে। এখন পর্যন্ত এক কোটির বেশি মানুষ তাদের টুলের মাধ্যমে সংগীত তৈরি করেছেন বলে দাবি কোম্পানির।
Published : 25 Jun 2024, 06:36 PM
দুই কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা স্টার্ট-আপ কোম্পানির বিরুদ্ধে গানের কপিরাইট লঙ্ঘনের অভিযোগে মামলা করেছে বিশ্বের বৃহত্তম কিছু রেকর্ড লেবেল।
সনি মিউজিক, ওয়ার্নার রেকর্ডস, ও ইউনিভার্সাল মিউজিক গ্রুপসহ লেবেলগুলোর অভিযোগ, সুনো ও উডিও নামের দুটি স্টার্ট-আপ কোম্পানি “প্রায় অকল্পনীয় মাত্রায়” কপিরাইট লঙ্ঘন করেছে।
এটিকে ‘সম্ভাব্য যুগান্তকারী’ এক মামলা হিসেবে প্রতিবেদনে আখ্যা দিয়েছে বিবিসি।
এ কোম্পানি দুটির সফটওয়্যার, সংগীত চুরি করে ও তাদের গানের অনুরূপ কাজ তৈরি করেছে বলে দাবি লেবেলগুলোর। আর প্রতিটি লঙ্ঘনের জন্য দেড় লাখ ডলার করে ক্ষতিপূরণ চাইছে তারা।
বিবিসি’র মন্তব্যের অনুরোধে তাৎক্ষণিকভাবে সাড়া দেয়নি সুনো ও উডিও।
সোমবার এ মামলার বিষয়ে ঘোষণা করেছে আমেরিকার ‘রেকর্ডিং ইন্ডাস্ট্রি অ্যাসোসিয়েশন’। বর্তমানে বিভিন্ন লেখক, সংবাদ সংস্থা, ও অন্যান্য গোষ্ঠি এআই কোম্পানির বিরুদ্ধে বেআইনি ভাবে তাদের কাজ ব্যবহারের অভিযোগ তুলছে, সেখানে নতুন করে যুক্ত হল এ মামলাটি।
মার্কিন অঙ্গরাজ্য ম্যাসাচুসেটসভিত্তিক কোম্পানি সুনো, গত বছর নিজেদের প্রথম পণ্য প্রকাশ করে। এখন পর্যন্ত এক কোটির বেশি মানুষ তাদের টুলের মাধ্যমে সংগীত তৈরি করেছেন বলে দাবি কোম্পানির।
পাশাপাশি, সফটওয়্যারে জায়ান্ট মাইক্রোসফটের সঙ্গে অংশীদারিত্ব রয়েছে তাদের। এ পরিষেবার জন্য একটি মাসিক ফি নেয় কোম্পানিটি, এবং সম্প্রতি বিনিয়োগকারীদের কাছ থেকে সাড়ে ১২ কোটি ডলার সংগ্রহ করেছে বলেও ঘোষণা করেছে সুনো।
অন্যদিকে, ‘আনচার্টেড ল্যাবস’ নামে পরিচিত নিউ ইয়র্কভিত্তিক এআই কোম্পানি উডিও’র পেছনে রয়েছে ‘অ্যান্ড্রেসেন হরোউইটজ’-এর মতো উঁচু প্রোফাইলের ভেঞ্চার ক্যাপিটালের বিনিয়োগ কোম্পানির সমর্থন।
এপ্রিল মাসে নিজেদের প্রথম অ্যাপ প্রকাশ করে কোম্পানিটি। এর পরপরই ‘বিবিএল ড্রিজি’ নামের প্যারোডি বা ব্যাঙ্গাত্মক গানটি তৈরি করে জনপ্রিয়তা পেয়ে যায় টুলটি। মার্কিন র্যাপার কেন্ড্রিক লামার ও কানাডিয়ান র্যাপার ড্রেক এর মধ্যে বিবাদ সম্পর্কিত একটি প্যারোডি গান এটি।
এর আগে, বিভিন্ন এআই কোম্পানি যুক্তি দিয়েছিল, ন্যায্য ব্যবহারের বিভিন্ন মতবাদের অধীনে তাদের এসব উপাদানের ব্যবহার বৈধ, যা কপিরাইটযুক্ত বিভিন্ন কাজকে কিছু শর্তের অধীনে, ও বিশেষ ক্ষেত্রে লাইসেন্স ছাড়া ব্যবহারের সুযোগ দেয় বলে লিখেছে বিবিসি।
পাশাপাশি, মেশিন লার্নিংয়ের মাধ্যমে একটি এআই টুলের শেখার বিষয়টিকে, মানুষ যেভাবে পড়ে, শোনে ও আগের কাজ দেখে শেখে তার সঙ্গে তুলনা করেছেন এর সমর্থকরা।
তবে, এসব এআই কোম্পানি শুধু গানগুলোর অনুলিপি তৈরি করেই অর্থ উপার্জন করছে; ম্যাসাচুসেটস ও নিউইয়র্কের ফেডারেল আদালতে দায়ের করা মামলায় বলেছে রেকর্ড লেবেলগুলো।
“এর ব্যবহার রূপান্তরমূলক নয়। কারণ কপিরাইটযুক্ত ফাইল ব্যবহার করে নতুন সংগীত তৈরি ছাড়া এআই মডেল ব্যবহারের কার্যকরী উদ্দেশ্য নেই।” – অভিযোগ অনুসারে লিখেছে বিবিসি।
অভিযোগে আরও রয়েছে সুনো ও উডিও, “প্র্যান্সিং কুইন”-এর মতো গান তৈরি করছে, যা সুইডেনভিত্তিক ব্যান্ড ‘অ্যাবা’-এর একনিষ্ঠ ভক্তদেরও, ব্যান্ডের ‘ডান্সিং কুইনে’র থেকে আলাদা করতে বেগ পেতে হবে।
ইউডিও’র বিরুদ্ধে মামলায় উল্লিখিত গানগুলোর মধ্যে রয়েছে মার্কিং সংগীতশিল্পী মারায়া ক্যারির “অল আই ওয়ান্ট ফর ক্রিসমাস ইজ ইউ” এবং মার্কিং ব্যান্ড দ্য টেম্পটেশন-এর “মাই গার্ল” গানগুলো।
“উদ্দেশ্যটি একেবারেই বাণিজ্যিক এবং এটি কপিরাইট সুরক্ষার কেন্দ্রবিন্দুতে থাকা মূল শিল্পীদেরকে হুমকির মুখে ফেলে দেয়।” – মামলায় বলেছে রেকর্ড লেবেলগুলো।
পাশাপাশি, এআই-এর মধ্যে এমনকিছু নেই যার জন্য কোম্পানিগুলোর নিয়মভঙ্গ থেকে ক্ষমা করা যায়, এবং রেকর্ডিংয়ের এমন চুরি গোটা সংগীত খাতকেই হুমকি দেয় বলেও উল্লেখ করা হয়েছে অভিযোগে।
জনপ্রিয় মার্কিন তারকা বিলি আইলিশ ও নিকি মিনাজসহ অন্তত দুইশ জন শিল্পী, সঙ্গীত খাতে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার ব্যবহার বন্ধ করার আহ্বান জানিয়ে একটি চিঠিতে স্বাক্ষর করার কয়েক মাস পরেই নতুন এ মামলা দায়ের করা হল বলে প্রতিবেদনে উল্লেখ করেছে বিবিসি।