গ্রহটিতে একসময় কার্বন ডাই-অক্সাইডের ঘন বায়ুমণ্ডল ছিল, যা গ্রহটিকে উষ্ণ রাখা ও এর পৃষ্ঠে পানির অস্তিত্ব ধরে রাখার জন্য যথেষ্ট গুরুত্বপূর্ণ।
Published : 22 Apr 2025, 01:08 PM
মঙ্গল গ্রহের হারিয়ে যাওয়া বায়ুমণ্ডলের সূত্র উন্মোচন করেছে যুক্তরাষ্ট্রের মহাকাশ গবেষণা সংস্থা নাসার পাঠানো কিউরিওসিটি রোভার।
নাসার দাবি, মঙ্গল গ্রহের প্রাচীন বায়ুমণ্ডলে কী ঘটেছিল এবং কেন গ্রহটি এত শুষ্ক ও প্রাণহীন হয়ে পড়েছিল তা ব্যাখ্যা করতে সাহায্য করেছে কিউরিওসিটি রোভারের এই আবিষ্কার।
বহু বছর ধরেই বিজ্ঞানীদের অনুমান ছিল, আদি মঙ্গল গ্রহে কার্বন ডাই অক্সাইডের ঘন বায়ুমণ্ডল ও এর পৃষ্ঠে তরল পানি ছিল। এই পরিস্থিতিতে বাতাসে থাকা কার্বন ডাই অক্সাইড ও পানি মঙ্গলের বিভিন্ন শিলার সঙ্গে বিক্রিয়া করে কার্বনেট নামে এক ধরনের খনিজ গঠন করা উচিত ছিল।
তবে বিস্ময়করভাবে এখন পর্যন্ত বিজ্ঞানীরা এই তত্ত্বের সমর্থনে মঙ্গল গ্রহে পর্যাপ্ত কার্বনেট খুঁজে পাননি। সেই রহস্যের সমাধান হতে পারে এখন বিজ্ঞানভিত্তিক জার্নাল ‘সায়েন্স’-এ প্রকাশিত নতুন এ গবেষণার দৌলতে।
মঙ্গলের ‘গেইল’ গর্তে থাকা ‘মাউন্ট শার্প’ নামের তিনটি ড্রিল সাইটের তথ্য ব্যবহার করে গবেষকরা ‘সাইডারাইট’ নামের এক বিশেষ ধরনের কার্বনেট আবিষ্কার করেছেন, যার মধ্যে লোহা রয়েছে বলে প্রতিবেদনে লিখেছে বিজ্ঞানভিত্তিক সাইট নোরিজ।
খনিজটি সালফেটওয়ালা শিলার বিভিন্ন স্তরে পাওয়া গিয়েছে এবং এগুলো প্রায় সাড়ে তিনশ কোটি বছর আগে মঙ্গল পৃষ্ঠের কাছাকাছি গঠিত হয়েছিল বলে বিজ্ঞানীদের অনুমান।
গবেষকরা বলছেন, মঙ্গলে কোনো কঠিন খনিজ থাকার বিষয়ে এটিই প্রথম প্রমাণ। যার থেকে ইঙ্গিত মিলেছে, মঙ্গলে একসময় ঘন কার্বন ডাই-অক্সাইডের বায়ুমণ্ডল ছিল, যা গ্রহটিকে উষ্ণ রাখা ও এর পৃষ্ঠে পানির অস্তিত্ব ধরে রাখার জন্য যথেষ্ট গুরুত্বপূর্ণ।
গবেষকরা বলেছেন, এটি একটি গুরুত্বপূর্ণ আবিষ্কার। কারণ, জীবনের জন্য পানি গুরুত্বপূর্ণ এবং মঙ্গলে পানির অতীত জানতে পারার বিষয়টি বিজ্ঞানীদের বুঝতে সাহায্য করবে সেখানে একসময় প্রাণের অস্তিত্ব থাকা সম্ভব ছিল কি না।
‘ইউনিভার্সিটি অফ শিকাগো’র গবেষক ও এ গবেষণার অন্যতম লেখক ড. এডউইন কাইট বলেছেন, পৃথিবী ও মঙ্গল গ্রহ একসময় একইরকম ছিল। কিন্তু কেন এরা এত ভিন্ন পথে গিয়েছিল সে সম্পর্কেও ধারণা দিয়েছে এই আবিষ্কার। পৃথিবী কোটি কোটি বছর ধরে বসবাসের উপযোগী থাকলেও মঙ্গল দিন দিন ঠাণ্ডা ও অনুর্বর হয়ে উঠেছে।
এ আবিষ্কারের জন্য মঙ্গল পৃষ্ঠের প্রায় এক থেকে দেড় ইঞ্চির সমান গভীর ছোট গর্ত ড্রিল করে ও পাথরের গুড়ার নমুনা সংগ্রহ করে নাসার কিউরিওসিটি রোভার। এরপর ‘চেমিন’ নামের এক যন্ত্র ব্যবহার করে রোভারের ভেতরেই এগুলো বিশ্লেষণ করে, যেখানে এক্স-রে ব্যবহার করে খনিজ পদার্থ শনাক্ত করে রোভারটি।
নাসার বিজ্ঞানী টমাস ব্রিস্টো বলেছেন, “গ্রহটির পৃষ্ঠে ড্রিল করার বিষয়টি অনেকটা মঙ্গলের ইতিহাস বইয়ের পাতা পড়ার মতো। কেবল কয়েক সেন্টিমিটার নিচে বিজ্ঞানীরা দেখতে পাচ্ছেন কোটি কোটি বছর আগে মঙ্গলের পরিস্থিতি কেমন ছিল।”
এর আগে কক্ষপথ থেকে কার্বনেট অনুসন্ধানের জন্য ইনফ্রারেড স্যাটেলাইট ব্যবহার করতেন গবেষকরা। তবে সেইসব টুল অন্যান্য পদার্থের নীচে লুকানো বিভিন্ন খনিজ শনাক্ত করতে পারেনি। সম্ভবত এ কারণেই কিউরিওসিটি শিলাতে ড্রিল না করা পর্যন্ত কার্বনেটওয়ালা খনিজ এতদিন শনাক্ত করা যায়নি।
এ আবিষ্কারকে ‘বিস্ময়কর ও গুরুত্বপূর্ণ উভয়ই’ বলে বর্ণনা করেছেন এ গবেষণার প্রধান লেখক ‘ইউনিভার্সিটি অফ ক্যালগারি’র ড. বেঞ্জামিন টুটোলো। কারণ এটি সময়ের সঙ্গে সঙ্গে মঙ্গল গ্রহের বায়ুমণ্ডল কীভাবে ধীরে ধীরে পাথরে পরিণত হয়েছে তার একটি স্পষ্ট দিয়েছে বলে দাবি তার।