গবেষকরা আরও খুঁজে পান, ২০২৩ সালে সরকার কর্তৃক জারি করা ইন্টারনেট বিভ্রাটের প্রায় অর্ধেকই ঘটেছে মানবাধিকার লঙ্ঘনের দায়ে। এর মধ্যে সবচেয়ে বেশি নিষেধাজ্ঞা এসেছে জনসমাবেশ করার ক্ষেত্রে।
Published : 13 Jan 2024, 01:31 PM
ইনস্টাগ্রাম, ফেইসবুক ও এক্স-এর মতো শীর্ষ সামাজিক মাধ্যমগুলো ব্যবহারে নিষেধাজ্ঞা দেওয়ায় গত বছর চারশ কোটি ডলারের লোকসান গুনেছে রাশিয়া --এমনই উঠে এসেছে স্বাধীন এক প্রতিবেদনে।
এ নিষেধাজ্ঞার সূচনা ২০২২ সালের মার্চ মাসে, যখন রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন ইউক্রেইনে সামরিক আগ্রাসন শুরুর নির্দেশ দেন। বৈশ্বিক ডেটা বিশ্লেষক সাইট ‘টপ ১০ ভিপিএন’-এর তথ্য অনুসারে, ২০২৩ সালে বৈশ্বিকভাবে ইন্টারনেট সংশ্লিষ্ট সবচেয়ে বিপজ্জনক নিষেধাজ্ঞা এটি।
সাইটটির বার্ষিক প্রতিবেদনে উঠে আসে, ২০২৩ সালে সরকার কর্তৃক জারি করা ইন্টারনেট নিষেধাজ্ঞার কারণে বৈশ্বিক অর্থনীতিতে নয়শ কোটি ডলারের ধাক্কা লেগেছে, যেখানে বিশ্লেষণ করা হয়েছে ২৫টি দেশের ১৯৬টি ইন্টারনেট বিভ্রাটের ঘটনা।
এর মধ্যে সবচেয়ে বড় ধাক্কা লেগেছে রাশিয়ার ওপর। এর পরবর্তী অবস্থানে রয়েছে ইথিওপিয়া ও ইরান, যেখানে ইন্টারনেট বিভ্রাটের কারণে আনুমানিক লোকসান যথাক্রমে প্রায় ১৯৬ কোটি ডলার ও ৯২ কোটি ডলার।
২০২২ সালের ফেব্রুয়ারিতে সামাজিক মাধ্যম ইনস্টাগ্রাম, ফেইসবুক ও এক্স (তৎকালীন টুইটার)-এর ওপর প্রথম নিষেধাজ্ঞা দিয়েছিল রাশিয়া, যা গোটা ২০২৩ সালজুড়ে অব্যাহত ছিল। পাশাপাশি, ফেইসবুক ও ইনস্টাগ্রামের মালিক কোম্পানি মেটাকে ‘চরমপন্থী’ হিসেবেও চিহ্নিত করেছিল দেশটি।
এর সূত্রপাত ঘটে যখন ভুল তথ্যের বিস্তার ঠেকানোকে কারণ দেখিয়ে ইউরোপের দেশগুলোতে টেলিভিশন নেটওয়ার্ক ‘রাশিয়া টুডে (আরটি)’ ও রেডিও নেটওয়ার্ক স্পুটনিক’সহ রাশিয়ার বেশ কিছু রাষ্ট্রায়ত্ত গণমাধ্যমের অ্যাকাউন্ট রেস্ট্রিক্ট করে দিয়েছিল বিভিন্ন পশ্চিমা সামাজিক মাধ্যম।
তবে, ২০২৩ সালে সবচেয়ে দীর্ঘ সময়ের জন্য পুরোপুরি ইন্টারনেট শাটডাউন ঘটেছিল ভারতের মনিপুর অঙ্গরাজ্যে। গত বছরের মে মাসে দেশটির সরকারি কর্তৃপক্ষের জারি করা এ নিষেধাজ্ঞার স্থায়িত্ব ছিল পাঁচ হাজার ঘণ্টার বেশি, যেখানে ভারতের উত্তর-পুর্বাংশে অবস্থিত অঙ্গরাজ্যটির পাহাড়ি সংখ্যালঘু আদিবাসি কুকি ও সংখ্যাগরিষ্ঠ মৈতৈ সম্প্রদায়ের মধ্যে জাতিগত সংঘর্ষ বাঁধার পর সে অঞ্চলের মোবাইল ইন্টারনেট সেবা বন্ধ হয়ে যায়।
মণিপুরের জনসংখ্যার প্রায় ৫৩ শতাংশই মৈতৈ সম্প্রদায়ের লোকজন। তবে, সংখ্যালঘু হিসেবে বিশেষ অধিকার দাবি করা কুকি সম্প্রদায় মণিপুর অঞ্চলে মাতেই সম্প্রদায়ের বিস্তার থামাতে প্রতিবাদ শুরু করেন।
এমনটি করলে ভারতের চাকরি ও শিক্ষা খাতে সংখ্যালঘু হিসেবে যে বিশেষ কোটা ও সুবিধাগুলো রয়েছে, তাতে কুকি সম্প্রদায়ের মতো একই ধরনের সুবিধা পেতেন মৈতৈ সম্প্রদায়ের লোকজন।
এ সংঘর্ষ শুরুর পর থেকে এখন পর্যন্ত প্রায় দুইশ জন নিহত হয়েছেন। এর পাশাপাশি, ঘর ছেড়ে পালাতে বাধ্য হয়েছেন প্রায় ৬০ হাজার।
প্রতিবেদন অনুযায়ী, ২০২২ সালের তুলনায় ২০২৩ সালে ইন্টারনেটের খরচ ৬৭ শতাংশ কমলেও এর ব্যবহারের সময়কাল ১৮ শতাংশ বেড়েছে গিয়ে ঠেকেছে ৭৯ হাজার দুইশ ৩৮ ঘণ্টায়।
গবেষকরা আরও দেখেছেন, ২০২৩ সালে সরকার কর্তৃক জারি করা ইন্টারনেট বিভ্রাটের প্রায় অর্ধেকই ঘটেছে মানবাধিকার লঙ্ঘনের দায়ে। এর মধ্যে সবচেয়ে বেশি নিষেধাজ্ঞা এসেছে জনসমাবেশ করার ক্ষেত্রে।