আপনি যতই অভিনেতা ম্যাথিউ ম্যাকানহের মতো ‘অলরাইট, অলরাইট, অলরাইট’ বলুন না কেন, কিছুই আর ফেরে না ওই না ফেরার বিন্দু থেকে!
Published : 15 Apr 2023, 05:11 PM
আগে প্রকাশিত এক ব্ল্যাক হোলের ছবি তুলনামূলক ভালোভাবে ফুটিয়ে তুলতে মেশিন লার্নিং পদ্ধতি ব্যবহার করেছেন গবেষকরা।
এই পদ্ধতি ব্যবহারের কারণে পৃথিবী থেকে পাঁচ কোটি ৩০ লাখ আলোকবর্ষ দূরের ‘মেসিয়ার ৮৭’ নামে পরিচিত ছায়াপথের কেন্দ্রে অবস্থিত ব্ল্যাক হোলের ছবিতে আলোর এক পাতলা বলয় ও এর কেন্দ্র ঘিরে থাকা পদার্থ দেখতে পাওয়ার বিষয়টি বৃহস্পতিবার উঠে এসেছে ‘দ্য অ্যাস্ট্রোফিজিকাল জার্নাল লেটার্স’ জার্নালে প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে।
২০১৭ সালে এর মূল ছবিগুলো তোলা হয় ‘ইভেন্ট হরাইজন টেলিস্কোপ (ইএইচটি)’তে। এটি পৃথিবীর চারপাশে থাকা বিভিন্ন রেডিও টেলিস্কোপের এমন নেটওয়ার্ক, যা এমন এক ‘সুপার-ইমেজিং’ টুল হিসাবে কাজ করে যার আকার একটি গ্রহের সমান।
মার্কিন রেডিও ‘এনপিএর’-এর ব্যাখ্যা অনুসারে, এর মূল ছবি দেখতে কিছুটা ‘ঝাপসা ডোনাট’-এর মতো। তবে, গবেষকরা ‘প্রিমো’ নামে এক নতুন পদ্ধতি ব্যবহার করে তুলনামূলক নির্ভুল ছবি পুনর্গঠনের চেষ্টা করেছেন।
প্রিমো এমন এক অভিনব ‘ডিকশনারি-লার্নিং অ্যালগরিদম’, যা ৩০ হাজারের বেশি ব্ল্যাক হোল থেকে তৈরি সিমুলেশনে প্রশিক্ষণের মাধ্যমে ‘বিক্ষিপ্ত পরিধির উপস্থিতিতেও উচ্চমানের ছবি পুনরুদ্ধার করতে পারে। আর নতুন এই ছবির জন্য আগে পাওয়া ডেটাসেটই ব্যবহার করেছেন গবেষকরা।
অন্য কথায়, এটি ২০১৭ সালের মূল ডেটা থেকে তথ্য নিয়ে দেখতে তুলনামূলক ভালো ও নির্ভুল ছবির শট তৈরির জন্য মহাবিশ্বের ভৌত আইন- আর বিশেষ করে ব্ল্যাক হোল সম্পর্কে আমরা যা জানি, তার ওপর ভিত্তি করে বিভিন্ন মেশিন লার্নিং ডেটা ব্যবহার করে।
কৃষ্ণগহ্বর বা ‘ব্ল্যাক হোল’ মহাবিশ্বের এমন রহস্যময় ও অদ্ভুত জায়গা, যেখানে এর প্রবল আকর্ষণ বলের প্রভাবে কোনো কিছুই এটি থেকে বেরিয়ে আসতে পারে না। বিভিন্ন মৃত নক্ষত্র নিজ অভিকর্ষের অধীনে যখন নিজেদের ওপর ভেঙে পড়ে, তখন এগুলোর উৎপত্তি ঘটে। ফলাফল হিসেবে, এই পতনে নক্ষত্রে ভর ছোট এক জায়গায় সংকুচিত হয়ে আসে।
ব্ল্যাক হোল ও এর আশপাশের ভরের মধ্যে সীমানাকে ‘ইভেন্ট হরাইজন’ বলা হয়। প্রযুক্তিবিষয়ক সাইট এনগ্যাজেটের প্রতিবেদন অনুযায়ী, এটি এমন এক ‘না ফেরার বিন্দু’, যেখানে একে অতিক্রম করে কোনো কিছুই ফিরে আসতে পারে না।
রসিকতা করে এনগ্যাজেট বলেছে, আপনি যতই অভিনেতা ম্যাথিউ ম্যাকানহের মতো ‘অলরাইট, অলরাইট, অলরাইট’ বলুন না কেন, কিছুই আর ফেরে না সেখান থেকে!
“আমরা আসলে যা করি তা হলো, ছবির বিভিন্ন অংশের মধ্যে থাকা পারস্পরিক সম্পর্কের বিষয়টি শিখি। তাই বিভিন্ন সিমুলেশন থেকে হাজার হাজার উচ্চ রেজুলিউশনের ছবি বিশ্লেষণ করে এটি তৈরি করি।” --এনপিআর’কে বলেন প্রিন্সটন নিউ জার্সিতে অবস্থিত ‘ইনস্টিটিউট ফর অ্যাডভান্সড স্টাডি’র জ্যোতির্পদার্থর্বিদ ও গবেষণাপত্রের লেখক লিয়া মেডিইরোজ।
“আপনার কাছে যদি কোনো ছবি থাকে, তবে যে কোনো প্রদত্ত পিক্সেলের কাছাকাছি থাকা পিক্সেলগুলো একেবারে বিচ্ছিন্ন, বিষয়টি এমন নয়। আর প্রতিটি পিক্সেল পুরোপুরি স্বতন্ত্র উপায়ে কাজ করছে, এমনও নয়।
গবেষকরা বলছেন, অ্যালবার্ট আইনস্টাইনের অনুমানের সঙ্গে নতুন ছবির মিল খুঁজে পাওয়া যায়। তবে তাদের প্রত্যাশা, মেশিন লার্নিং ও টেলিস্কোপ হার্ডওয়্যার নিয়ে আরও গবেষণা চালালে তা একে অতিরিক্ত সংশোধনের দিকে নিয়ে যাবে।
“২০ বছরের মধ্যে আমার আজকের দেখানো ছবি সঠিক নাও হতে পারে।” --বলেন তিনি।
“আবার এর চেয়ে ভালো কিছুও হতে পারে।”