ম্যানচেস্টার ইউনাইটেডের কোচ হিসেবে এখনও নিজেকেই উপযুক্ত মনে করেন এরিক টেন হাগ, চরম এই বিপর্যয় কাটিয়ে উঠতে লড়াইয়ের প্রত্যয় শোনালেন তিনি।
Published : 07 May 2024, 12:31 PM
একদম তলানিতে পৌঁছে যাওয়ার পর কেবল ওপরের দিকেই তাকানে যায়। এরিক টেন হাগ এখন সেই চেষ্টাই করছেন। চরম দুঃসময়ে থাকা দল আরও বিধ্বস্ত হয়েছে আরও একটি ম্যাচে। ম্যানচেস্টার ইউনাইটেড কোচের চোখে যা মৌসুমের সবচেয়ে বাজে ম্যাচ। কোচ হিসেবে তবু নিজের ওপর আস্থা রেখে তিনি শোনাচ্ছেন লড়াই করে ঘুরে দাঁড়ানোর প্রত্যয়।
ইংলিশ প্রিমিয়ার লিগের ম্যাচে সোমবার ক্রিস্টাল প্যালেসের মাঠে ৪-০ গোলে হেরেছে ম্যানচেস্টার ইউনাইটেড। পয়েন্ট তালিকায় তাদের অবস্থান এখন অষ্টম।
চ্যাম্পিয়ন্স লিগ বা ইউরোপা লিগে খেলা তো বহুদূর, কনফারেন্স লিগে খেলার যোগ্যতা অর্জন করাই এখন শঙ্কায় ইউনাইটেডের জন্য।
এই মৌসুমে লিগে ইউনাইটেডের ত্রয়োদশ হার এটি। প্রিমিয়ার লিগে এক মৌসুমে ক্লাবটির ইতিহাসে সবচেয়ে বেশি হারের রেকর্ড এটি। সব প্রতিযোগিতা মিলিয়ে এই মৌসুমে ৮১ গোল হজম করেছে তারা, গত ৪৭ বছরের মধ্যে তাদের জন্য যা সর্বোচ্চ।
সব মিলিয়ে গত কিছুদিনে অনেকবার উচ্চারিত প্রশ্নটি আরও একবার উঠে যাচ্ছে, ইউনাইটেডের দায়িত্বে টেন হাগ কি উপযুক্ত? ক্রিস্টাল প্যালেসের বিপক্ষে ম্যাচ শেষে স্কাই স্পোর্টসে সরাসরিই জিজ্ঞেস করা হলো তাকে। টেন হাগের অকপট জবাব, “অবশ্যই… উপযুক্ত ফুটবলারও আছে। ভালো একটি স্কোয়াড আছে আমাদের।”
এই ম্যাচের জন্য দলকে দারুণভাবে তৈরি করেছিলেন বলেই দাবি টেন হাগের। কিন্তু মাঠের পারফরম্যান্স হতাশ করেছে কোচকে।
“আমরা যেভাবে গোলগুলি উপহার দিয়েছি, খুবই বাজে ছিল তা। বিশেষ করতে, দলকে এত ভালোভাবে তৈরি করার পর যেভাবে প্রথম গোলটি খেয়েছি… কতটা সহজেই আমরা দিয়েছি সুযোগ!”
“এরকম হওয়াটা উচিত হয়নি। অবশ্যই আমরা সমস্যায় আছি, তবে এসব মুহূর্তেই তো পরস্পরকে সহায়তা করতে হবে।
ইউনাইটেড কোচের মতে, মৌসুমে দলের সবচেয়ে বাজে ম্যাচ ছিল এটিই। আঙুল তুললেন তিনি ফুটবলারদের দিকেই, কোচের পরিকল্পনা মাঠে অনুসরণ করতে পারেনি দল।
“খুবই হতাশাজনক। প্রত্যাশার অনেক নীচে। অবশ্যই সবচেয়ে বাজে পরাজয়। আরও ভালো করা উচিত ছিল আমাদের। আমরা জানি যে, দল হিসেবে আমরা ঠিকঠাক খেলতে পারিনি, বড় বড় ভুল করেছি এবং দলের পরিকল্পনা ও ছক অনুসরণ করিনি। দলীয় নিয়ম আমরা মানতে পারিনি।”
“ব্যক্তিগত ভুল তো হয়েছেই অনেকের। তখন প্রয়োজন একজন আরেকজনেরটা পুষিয়ে দেওয়া। সেটিও আমরা করিনি। আমরা পরস্পরকে ডুবিয়েছি এবং সবচেয়ে বাজে পরাজয়ে ডুবেছি।”
যথারীতি এ দিনই চোট-জর্জর স্কোয়াড থেকে জোড়াতালি দিয়ে একাদশ সাজাতে হয়েছে টেন হাগকে। একগাদা খেলোয়াড়ের অনুপস্থিতিতে রক্ষণভাগে খেলাতে হয়েছে কাসোমিরো ও সদ্য চোট কাটিয়ে ফেরা জনি ইভান্সকে। তারা দুজনই ছিলেন বিবর্ণ। কাসেমিরোকে তো চেনাই যায়নি। অভিজ্ঞ হিসেবে তাকে বেশি দায় দিচ্ছেন অনেকে।
তবে শুধু কাসেমিরোকে কাঠগড়ায় তুলতে নারাজ টেন হাগ।
“একজনের ওপর এটা চাপিয়ে দেওয়া যাবে না। বিভিন্ন পরিস্থিতির সঙ্গে মানিয়ে নিতে পারিনি আমরা। এটা পরিষ্কার যে, আমরা যেভাবে খেলতে চাই, তা পারিনি।”
“সবকিছুর পেছনেই কারণ আছে। আজকে আমাদের রক্ষণভাগ সবাই দেখেছেন, অবশ্যই সেখানে বড় সমস্যা ছিল। তবে দিনশেষে, এসবের সঙ্গে মানিয়ে নিয়েই চলতে হয় এবং আমাদের অবশ্যই আরও ভালো করা উচিত ছিল।”
তবে এই হতাশার আঁধার পেরিয়ে আশার আলোয় নিজেদের রাঙাতেও আত্মবিশ্বাসী টেন হাগ। এই ম্যাচে হারের দায় তিনি নিচ্ছেন। পাশপাশি সামনেই ঘুরে দাঁড়ানোর স্বপ্ন দলকে দেখাচ্ছেন।
“আমরা লড়াই চালিয়ে যাব। যতটা ভালোভাবে সম্ভব, দলকে প্রস্তুত করেছিলাম আমি। তবে যা যথেষ্ট হয়নি। যথেষ্টর ধারে কাছে ছিল না। সেটির দায় আমাকে নিতেই হবে। তবে আবার প্রাণশক্তি খুঁজে নেব আমি এবং রোববারের ম্যাচের জন্য দলকে তৈরি করব।”
কাজটি যদিও সহজ হবে না টেন হাগের জন্য। রোববার তাদের প্রতিপক্ষ আর্সেনাল, পয়েন্ট তালিকার শীর্ষে থেকে তারা শিরোপার আশায় ছুটছে।