ইস্টার দ্বীপের নীচে থাকা সামুদ্রিক প্লেটটিও এত পুরোনো নয়। ফলে, ওই দ্বীপে এমন আদিম খনিজ কীভাবে এল, সেটাই বড় প্রশ্ন।
Published : 20 Oct 2024, 03:49 PM
অনেক বছর ধরেই বিজ্ঞানীদের প্রচলিত ধারণা ছিল, ভূপৃষ্ঠের নীচের স্তর অর্থাৎ ম্যান্টল বিশাল এক পরিবাহক বেল্টের মতো চলাফেরা করে, যেখানে এটি এমন উত্তপ্ত উপাদান বহন করে, যা তৈরি করে আগ্নেয়গিরি।
তবে, চিলি’র ইস্টার দ্বীপ নিয়ে পরিচালিত নতুন এক গবেষণা এই ধারণাকে চ্যালেঞ্জ করে ইঙ্গিত দিয়েছে, পৃথিবীর ম্যান্টলের আচরণ হয়ত একেবারেই ভিন্ন।
ইস্টার দ্বীপ, যা নিজের বিশাল সব পাথরের ভাস্কর্যের জন্য সুপরিচিত, তা তৈরি হয়েছে বেশ কিছু বিলুপ্ত আগ্নেয়গিরি থেকে।
ভূতাত্ত্বিকদের মতে, এ দ্বীপে লাভা জমা হওয়ার সবচেয়ে পুরোনো ঘটনাটি প্রায় ২৫ লাখ বছর আগে ঘটেছিল। তবে সাম্প্রতিক এই গবেষণার ফলাফলে যা উঠে এসেছে, তা কিছুটা রোমাঞ্চকর।
কিউবান ও কলম্বিয়ান ভূতাত্ত্বিকদের নিয়ে গঠিত এই গবেষণা দলের নেতৃত্বে ছিলেন ড. রোহাস-আগ্রামন্টে, যিনি ২০১৯ সালে ইস্টার দ্বীপের অগ্ন্যুৎপাতের ইতিহাস নিয়ে গবেষণা করতে সেখানে পাড়ি জমিয়েছিলেন।
তারা এতে এমন এক পদ্ধতি ব্যবহার করেছেন, যেখানে লাভায় পাওয়া জিরকন খনিজ থেকে জানা সম্ভব হয়েছে, ওই দ্বীপে অগ্ন্যুৎপাত কখন ঘটেছিল।
জিরকন খনিজ খুবই বিশেষ ধরনের উপাদান কারণ এতে ইউরেনিয়াম থাকে, যা সময়ের সঙ্গে সঙ্গে ধীরে ধীরে সীসায় রূপান্তরিত হয়। ওই খনিজের মধ্যে থাকা ইউরেনিয়াম ও সীসার অনুপাত পরিমাপ করে বিজ্ঞানীরা এদের সম্ভাব্য বয়স নির্ধারণ করেছেন বলে প্রতিবেদনে লিখেছে বিজ্ঞানভিত্তিক সাইট নোরিজ।
এতে গবেষণা দলটি এমন জিরকন খুঁজে পেতে চেয়েছে, যেগুলো প্রায় ২৫ লাখ বছর পুরোনো। তবে, এর বদলে তারা কয়েকটি এমন জিরকন খুঁজে পেয়েছেন, যেগুলো সাড়ে ১৬ কোটি বছর পর্যন্ত পুরোনো।
গবেষকদের ধারণা ছাড়িয়ে গেছে এ আবিষ্কার। কারণ ইস্টার দ্বীপের নীচে থাকা সামুদ্রিক প্লেটটিও এত পুরোনো নয়। ফলে, ওই দ্বীপে এমন আদিম খনিজ কীভাবে এল হয়েছে? সেটাই বড় প্রশ্ন।
পরবর্তীতে এর রাসায়নিক বিশ্লেষণে উঠে আসে, পুরোনো ও নতুন জিরকনের গঠনপ্রক্রিয়া একই। ফলে এর থেকে ইঙ্গিত মেলে, এগুলো সবই একই ধরনের ম্যাগমা থেকে এসেছে।
এর মানে, সেইসব জিরকন সম্ভবত তৈরি হয়েছে পৃথিবীর গভীরে থাকা ম্যান্টল থেকে, তাও ইস্টার দ্বীপের আগ্নেয়গিরি গঠনের অনেক আগে।
গবেষণা দলটির মতে, এইসব প্রাচীন খনিজ সম্ভবত পৃথিবীর ম্যান্টল থেকে এসেছে, যেখানে ম্যাগমা থেকে সক্রিয় আগ্নেয়গিরি গঠিত হয়। আর পৃথিবীর ম্যান্টলের গভীর থেকে বড় বড় পাথর ভূপৃষ্ঠের ওপর উঠে আসার মাধ্যমে ইস্টার ও হাওয়াই দ্বীপের সক্রিয় আগ্নেয়গিরি তৈরি হয়েছে বলে প্রতিবেদনে লিখেছে নোরিজ।
তবে ইস্টার দ্বীপে আদিম জিরকনের খোঁজ বড় এক প্রশ্ন উত্থাপন করেছে, তা হল, সাড়ে ১৬ কোটি বছরেরও বেশি সময় ধরে এ দ্বীপের নীচে ম্যান্টল সক্রিয় ছিল কি না?
এর জবাব পেতে নেদারল্যান্ডসের ‘ইউট্রেখট ইউনিভার্সিটি’র ভূতাত্ত্বিক ডাউয়ে ভ্যান হিন্সবার্গেনের সঙ্গে কাজ করেছেন ড. রোহাস-আগ্রামন্টে।
নতুন এ আবিষ্কার প্রচলিত ‘কনভেয়র বেল্ট’ তত্ত্বে উল্লেখিত ম্যান্টলের গতিবিধি সংশ্লিষ্ট ধারণাকে চ্যালেঞ্জ করে। এমনকি পৃথিবীর অভ্যন্তরীণ অবস্থা সম্পর্কে বিজ্ঞানীদের চিন্তাভাবনায়ও পরিবর্তন আনার সম্ভাবনা দেখাচ্ছে গবেষণাটি।
ইস্টার দ্বীপ নিয়ে দলটির গবেষণা পৃথিবীর ম্যান্টল কীভাবে আচরণ করে, সে সম্পর্কেও নতুন তথ্য প্রকাশে সাহায্য করছে। এমনকি গ্যালাপাগোস দ্বীপপুঞ্জ ও নিউ গিনি’র মতো আগ্নেয়গিরি অঞ্চল সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন প্রশ্নের জবাব মিলতে পারে এ গবেষণায়।