কিছু গবেষণায় ইঙ্গিত মিলেছে, অতি প্রক্রিয়াজাত মাংস খাওয়া এবং ফল ও শাকসবজি কম খাওয়ার কারণে মস্তিষ্কের টিউমার হওয়ার ঝুঁকি বেশি।
Published : 31 Oct 2024, 04:43 PM
মস্তিষ্কের ক্যান্সার মূলত এক ধরনের জটিল রোগ, যা সহজে ধরা পড়ে না, এমনকি বোঝাও কঠিন। সাম্প্রতিক সময়ে চিকিৎসা ক্ষেত্রে গবেষণায় উন্নতি হলেও মস্তিষ্কের ক্যান্সারের কারণ কী তা পুরোপুরিভাবে বোঝার চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন বিজ্ঞানীরা।
সম্প্রতি বেশ কয়েকটি কারণ চিহ্নিত করেছেন বিজ্ঞানীরা, যা কোনও ব্যক্তির এই ধরনের ক্যান্সারে আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকি বাড়িয়ে তুলতে পারে বলে ধারণা তাদের।
মস্তিষ্কের ক্যান্সার হওয়ার একটি পরিচিত ঝুঁকি হচ্ছে, আয়নাইজিং রেডিয়েশনের সংস্পর্শ। এ ধরনের বিকিরণ প্রচুর শক্তি বহন করে ও মানব কোষের ডিএনএ’কে ক্ষতিগ্রস্ত করতে সক্ষম। মানবদেহের ডিএনএ’র ক্ষতি হলে তা কখনও কখনও মস্তিষ্কের ক্যান্সারে রূপ নিতে পারে।
যারা অন্যান্য ক্যান্সারের জন্য রেডিয়েশন থেরাপি নিয়েছেন বিশেষ করে মাথা বা ঘাড়ের মতো অংশে তাদের পরবর্তী জীবনে মস্তিষ্কের টিউমার হওয়ার ঝুঁকি বেশি থাকে বলে প্রতিবেদনে লিখেছে বিজ্ঞানভিত্তিক সাইট নোরিজ।
গবেষণাটি প্রকাশ পেয়েছে বিজ্ঞানভিত্তিক জার্নাল ‘ল্যানসেট অনকোলজি’-তে। এতে দেখা গেছে, লিউকেমিয়ায় আক্রান্ত শিশুদের বিকিরণের মাধ্যমে চিকিৎসা দেওয়ার ফলে তারা যখন প্রাপ্তবয়স্ক হয়, তখন মস্তিষ্কের টিউমার হওয়ার ঝুঁকি বেশি। যা থেকে ইঙ্গিত মেলে, বিকিরণের বিভিন্ন প্রভাব দীর্ঘস্থায়ী হতে পারে।
দেহের জেনেটিক ফ্যাক্টরও মস্তিষ্কের ক্যান্সারের ঝুঁকি বাড়াতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। কিছু পরিবারের ক্ষেত্রে দেখা যায়, নির্দিষ্ট কিছু জিন ধারাবাহিকভাবে পরিবারের অন্যান্য সদস্যদের দেহে চলে আসে, যা মানুষের মস্তিষ্কের টিউমার হওয়ার ঝুঁকি বাড়িয়ে তোলে।
এ ধরনের জিনগত রোগের মধ্যে রয়েছে নিউরোফাইব্রোমাটোসিস, লি-ফ্রাউমেনি ও টিউবারাস স্ক্লেরোসিস। যেমন– ‘লি-ফ্রাউমেনি’ রোগে আক্রান্ত ব্যক্তিদের ‘টিপি৫৩’ নামের জিনে রূপান্তর বা মিউটেশন ঘটে। আর এই জিনটি সাধারণত মানবদেহের বিভিন্ন কোষকে ক্যান্সারে আক্রান্ত হওয়া ঠেকাতে সহায়তা করে।
তবে এই জিনের মিউটেশন ঘটার ফলে এটি দেহের সুরক্ষা ব্যবস্থা হারায়, যা সহজ করে তোলে মস্তিষ্কের টিউমার গঠনকে। ফলে অন্যদের তুলনায় এই জিনগত অবস্থায় আক্রান্তদের মস্তিষ্কের ক্যান্সার হওয়ার ঝুঁকি বেশি।
মস্তিষ্কের ক্যান্সারের সম্ভাব্য কারণ হিসাবে পরিবেশগত বিভিন্ন কারণও দেখেছেন বিজ্ঞানীরা। এসব কারণ, বিকিরণ বা জিনগত বিভিন্ন কারণের মতো শক্তিশালী না হলেও পরিবেশগত কিছু নির্দিষ্ট রাসায়নিকের সংস্পর্শে এলে বাড়তে পারে মানুষের মস্তিষ্কের ক্যান্সারের ঝুঁকি।
‘এনভায়রনমেন্টাল হেলথ পারস্পেকটিভস’ জার্নালে প্রকাশিত এক সমীক্ষায় দেখা গেছে, কাজের ক্ষেত্রে যারা কীটনাশকের সংস্পর্শে আসেন তাদের মস্তিষ্কের টিউমার হওয়ার ঝুঁকি কিছুটা বেশি। তবে, এসব বিষয় নিশ্চিত করতে ও কীভাবে এসব রাসায়নিক উপাদান ক্যান্সারের কারণ হতে পারে তা বোঝার জন্য আরও গবেষণার প্রয়োজন।
মস্তিষ্কের ক্যান্সারে আক্রান্ত হওয়ার আরেকটি কারণ হচ্ছে, সংক্রমণ ও ভাইরাস। কিছু ভাইরাস নিজেদের জিনগত বিভিন্ন উপাদান মানব ডিএনএ’তে ঢোকানোর মাধ্যমে তা কখনও কখনও ক্যান্সারে পরিণত করে দেহের বিভিন্ন কোষকে।
ডায়েট বা খাদ্যাভাস ও শারীরিক কার্যকলাপের মতো জীবনযাত্রার বিভিন্ন কারণও মস্তিষ্কের ক্যান্সারের ঝুঁকিকে বাড়িয়ে দিতে পারে। কিছু গবেষণায় ইঙ্গিত মিলেছে, উচ্চ মাত্রায় প্রক্রিয়াজাত মাংস খাওয়া এবং ফল ও শাকসবজি কম খাওয়ার কারণে মস্তিষ্কের টিউমার হওয়ার ঝুঁকি বেশি।
অন্যদিকে অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট সমৃদ্ধ খাবার অর্থাৎ ফল ও শাকসবজি খেলে তা ক্যান্সার ঠেকাতে সহায়তা করে।
এসব চিহ্নিত ঝুঁকি না থাকলেও মস্তিষ্কের ক্যান্সার স্পষ্ট কোনো কারণ ছাড়াও ঘটতে পারে। অতীতেও দেখা গেছে, মস্তিষ্কের ক্যান্সারে আক্রান্ত অনেকেরই এসব ঝুঁকির কোনোটিই নেই। আর এই অনিশ্চয়তার বিষয়টিই মানুষের মস্তিষ্কের ক্যান্সার নিয়ে গবেষণা ও চিকিৎসাকে চ্যালেঞ্জিং করে তুলেছে।