মঙ্গল গ্রহ থেকে প্রাপ্ত বিভিন্ন অনুসন্ধান ভবিষ্যতে সেখানে রোবট এমনকি মানুষ পাঠানোর নানা মিশনের সুরক্ষার কাজকেও প্রভাবিত করতে পারে।
Published : 03 Jul 2024, 02:26 PM
উল্কাপিণ্ডের আঘাতে প্রতিনিয়ত ক্ষতবিক্ষত হচ্ছে পৃথিবীর প্রতিবেশী গ্রহ মঙ্গল— এমনই তথ্য উঠে এসেছে সাম্প্রতিক এক গবেষণায়।
নতুন তথ্য বলছে, মঙ্গলে প্রতিনিয়ত উল্কাপিণ্ড আঘাত হানছে। প্রায় প্রতিদিনই কোনো না কোনো ধরনের উল্কাপিণ্ডের ধাক্কা পাচ্ছে লাল গ্রহটি, যা বিজ্ঞানীদের আগের অনুমানের চেয়েও ১০ গুণ বেশি।
এ গবেষণায় যুক্তরাষ্টের মহাকাশ গবেষণা সংস্থা নাসার ‘ইনসাইট’ মিশন থেকে নেওয়া ডেটা ব্যবহার করা হয়েছে, যা গ্রহটির ‘মার্সকোয়েক’ বা এর ভূমিকম্পের গতিবিধি সম্পর্কে আরও ভালভাবে বোঝার ক্ষেত্রে সহায়ক ছিল।
এ গবেষণায় দেখা গেছে, মঙ্গলে প্রতি বছর ২৮০ থেকে ৩৬০টি উল্কাপিণ্ড আঘাত হেনেছে। এগুলো মঙ্গলের আট মিটারেরও বেশি জায়গা জুড়ে গর্ত করার পাশাপাশি গ্রহটির পৃষ্ঠকেও রীতিমতো কাঁপিয়ে তুলেছে।
মঙ্গল ও অন্যান্য গ্রহ কীভাবে সময়ের সঙ্গে সঙ্গে পরিবর্তিত হয়েছে এ গবেষণাটি আমাদের তা বুঝতে সাহায্য করতে পারে বলে প্রতিবেদনে লিখেছে ব্রিটিশ দৈনিক ইন্ডিপেনডেন্ট।
“উল্কাপিণ্ড নিয়ে আমাদের প্রচলিত ধারণা ভুল ছিল এমন ইঙ্গিতও এ গবেষণা থেকে মিলতে পারে। কারণ মঙ্গলের বিভিন্ন গর্তের উপর উল্কাপিণ্ডের প্রভাব এত বেশি নির্ভর করে, আমরা যা ধারণা করেছিলাম এটি তার চেয়েও অনেক বেশি সাধারণ বিষয়।”
“মঙ্গল গ্রহে কতবার উল্কাপিণ্ড আঘাত হানে ও এর পৃষ্ঠকে কীভাবে পরিবর্তন করে তা আরও ভালভাবে বোঝার জন্য ভূকম্পন সংক্রান্ত তথ্য ব্যবহার করে লাল গ্রহটির ভূতাত্ত্বিক ইতিহাস ও বিবর্তনের একটি সময়কাল সম্পর্কে জানার সম্ভাবনা আছে,” বলেছেন এ গবেষণার অন্যতম লেখক ও ‘ইম্পেরিয়াল কলেজ লন্ডন’-এর নাতালিয়া ওজসিকা।
“আপনি এটিকে এক ধরনের ‘মহাজাগতিক ঘড়ি’ হিসাবে ভাবতে পারেন, যা আমাদের মঙ্গল গ্রহের উপরিভাগ ও সম্ভবত এর আরও গভীরে সৌরজগতের অন্যান্য গ্রহের সময়কাল নির্ধারণে সহায়তা করবে।”
পৃথিবীতে উল্কাপিণ্ডের ঝুঁকি বুঝতেও এ গবেষণাটি সহায়ক হতে পারে। পাশাপাশি মঙ্গল গ্রহ থেকে প্রাপ্ত বিভিন্ন অনুসন্ধান ভবিষ্যতে সেখানে রোবট এমনকি মানুষ পাঠানোর নানা মিশনের সুরক্ষার কাজকেও প্রভাবিত করতে পারে।
“সৌরজগতের সবখানেই কোনো না কোনো কিছুর প্রভাব পড়ছে গ্রহের উপর। আমরা মঙ্গল গ্রহে এ নিয়ে গবেষণা করতে আগ্রহী। কারণ এর মাধ্যমে পৃথিবীতে যা ঘটছে এর সঙ্গে মঙ্গল গ্রহে যা ঘটছে তার তুলনা করতে পারি,” বলেছেন ‘ব্রাউন ইউনিভার্সিটি’-এর গবেষক ইনগ্রিড ডাউবার।
“সৌরজগতে কী আছে ও এতে প্রভাব ফেলতে পারে এমন সব বস্তুর সংখ্যা কতো তা বোঝার জন্য এ গবেষণাটি গুরুত্বপূর্ণ। কারণ পৃথিবী ও অন্যান্য গ্রহ উভয়ের জন্যেই এসব প্রভাব বিস্তারকারী বস্তু বিপজ্জনক।
এ নতুন গবেষণাটি ‘এ নিউ এস্টিমেট অফ দ্য ইমপ্যাক্ট রেট অন মার্স ফ্রম ভেরি হাই ফ্রিকোয়েন্সি মার্সকোয়েক স্ট্যাটিসটিকস’ শীর্ষক শিরোনামে প্রকাশ পেয়েছে বিজ্ঞানভিত্তিক জার্নাল ‘নেচার অ্যাস্ট্রোনমি’তে।