পর্বত গঠনের এই সময়ের কারণে পৃথিবীর পৃষ্ঠে ম্যাগমা বেড়ে গিয়েছে, যার ফলে বায়ুমণ্ডলে প্রচুর পরিমাণে গ্রিনহাউস গ্যাস জমা হয়েছে এবং এসবের ফলে দ্রুতগতিতে তখন জলবায়ু পরিবর্তন ঘটেছে।
Published : 04 Jun 2024, 05:35 PM
৫০ কোটি বছর আগের বড় বিলুপ্তির সঙ্গে যোগসূত্র রয়েছে পর্বত গঠনের– এমন তথ্যই উঠে এসেছে সাম্প্রতিক এক গবেষণায়।
৫০ কোটিরও বেশি বছর আগে ক্যামব্রিয়ান বিস্ফোরণের সময় পৃথিবীতে প্রাণ বৈচিত্র্য নতুন করে গতি পেয়েছিল। ওই সময়েই বিভিন্ন টেকটোনিক প্লেটের মধ্যে সংঘর্ষ ঘটার ফলে পর্বত গঠিত হয় এবং এটি নানারকম ঘটনার জন্যও উদ্দিপক হিসাবে কাজ করেছে, ফলে পৃথিবীতে অনেক বিলুপ্তির ঘটনাও ঘটেছে।
পর্বত গঠনের এই সময়ের কারণে পৃথিবীর পৃষ্ঠে ম্যাগমা বেড়ে গিয়েছে, যার ফলে বায়ুমণ্ডলে প্রচুর পরিমাণে গ্রিনহাউস গ্যাস জমা হয়েছে এবং এসবের ফলে দ্রুতগতিতে তখন জলবায়ু পরিবর্তন ঘটেছে।
বিশাল এ বিলুপ্তি সে সময় পৃথিবীতে বাস করা অনেক প্রাণীর গোত্রকে নিশ্চিহ্ন করে দিয়েছে। যার মধ্যে রয়েছে সামুদ্রিক স্পঞ্জ ‘আর্কিওসাইথিডস’ ও ‘হাইলিথ’ নামে পরিচিত এক ছোট আকারের প্রাণী।
“বিলুপ্তির ঘটনার জন্য টেকটোনিক প্লেট’কে কারণ হিসেবে নির্দেশ করার বিষয়টি অস্বাভাবিক হলেও এসব প্রমাণ জোরালোভাবে তাই’ই বলছে,” বলেছেন ‘ইউনিভার্সিটি অফ মিনেসোটা ডুলুথ’-এর অধ্যাপক ড. জন গুজ।
এজন্য অধ্যাপক গুজ ও তার সহকর্মীরা অ্যান্টার্কটিকা ও দক্ষিণ অস্ট্রেলিয়া থেকে পাওয়া মাঠ পযায়ের তথ্য তুলনা করে বিভিন্ন প্লেট টেকটোনিকের সঙ্গে সংযোগ তৈরি করেন।
সুপারমহাদেশ গন্ডোয়ানার অংশ হিসেবে, নিরক্ষরেখার চারপাশে একে অপরের কাছাকাছি থাকা এইসব অবস্থান, বিলুপ্তির ঠিক আগে পর্বত তৈরির প্রায় অভিন্ন রেকর্ড দেখিয়েছে বলে প্রতিবেদনে লিখেছে যুক্তরাষ্ট্রের সরকারি সংস্থা ‘ন্যাশনাল সায়েন্স ফাউন্ডেশন’।
১৯৯০ এর দশকে শুরু হওয়া গবেষণাটি বিজ্ঞানভিত্তিক জার্নাল ‘সায়েন্স অ্যাডভান্সেস’-এ প্রকাশিত হয়েছে। গুজ ও তার সহযোগী বিজ্ঞানীরা অ্যান্টার্কটিকার তুষার-ঢাকা হিমবাহের মধ্যে নিজেদের হলুদ ও নীল তাবু স্থাপন করার মাধ্যমে এ গবেষণা কাজটি শুরু করেন।
এ গবেষণার দুটি ক্ষেত্রে ভিন্ন ঋতুতে গবেষকরা হেলিকপ্টার ও স্নোমোবাইলে (বরফে ভ্রমণের জন্য একটি ছোট মোটর যান) করে যুক্তরাষ্ট্রের ম্যাসাচুসেটসের ‘কানেকটিকাট’ নদী উপত্যকায় অবস্থিত ট্র্যাপ্রক পর্বতশ্রেণী বা হোলিওক রেঞ্জ-এ ভ্রমণ করেন।
পাশাপাশি বিলুপ্তির বিষয়টি চিহ্নিত করতে ‘কার্বনেট রিফ’ কাঠামো থেকে জীবাশ্ম পরীক্ষা করেন। ভিন্ন আরেকটি দল ২০১১ সালে অস্ট্রেলিয়ায় একই ধরনের রেকর্ড খুঁজে পান।
“আপনি আগে থেকে কখনই বুঝতে পারবেন না যে, কয়েক দশক আগে করেছিলেন এমন কিছু গবেষণা একসঙ্গে জুড়ে দিলে একেবারেই নতুন বিশ্লেষণ দেয়,” বলেছেন অধ্যাপক গুজ।
এ গবেষণায় ইঙ্গিত মেলে, কীভাবে টেকটোনিক কার্যকলাপ পৃথিবীর জলবায়ু ও প্রাণের উপর গভীর প্রভাব ফেলতে পারে, যার ফলে স্বাভাবিকের চেয়ে অনেক বেশি বিলুপ্তির ঘটনা ঘটে।