Published : 29 Apr 2025, 03:06 PM
কল্পনা করা যায় এমন এক অবস্থা, যেখানে উদ্ভিদ বা গাছ কৃষককে সতর্ক করে বলছে, তার পানি দরকার বা সামনের শুষ্ক আবহাওয়ার কারণে তার জন্য আগে থেকে যথেষ্ট পরিমাণ পানি প্রস্তুত রাখা জরুরী? এর জন্য গাছ সংকেতও পাঠাবে?
বৈজ্ঞানিক কল্পকাহিনীর মতো শোনালেও উদ্ভিদের সঙ্গে এমন দ্বিমুখী যোগাযোগকে বাস্তবে পরিণত করার দিকে বড় এক পদক্ষেপ হিসেবে দেখছেন ‘সেন্টার ফর রিসার্চ অন প্রোগ্রামেবল প্ল্যান্ট সিস্টেমস’ বা সিআরওপিপিএস-এর গবেষকরা।
এ নতুন গবেষণায় এমন এক রহস্য সমাধানের দাবি করেছেন বিজ্ঞানীরা, যা এক শতাব্দীরও বেশি সময় ধরে তাদের বিভ্রান্ত করে রেখেছে তাদের। সেই প্রশ্ন হলো, গাছপালা যখন চাপের মধ্যে থাকে তখন কীভাবে এরা নিজেদের ভেতরে সংকেত পাঠায়?
এই প্রাকৃতিক যোগাযোগ ব্যবস্থাটি বোঝার মাধ্যমে এমন উদ্ভিদের বিকাশের দ্বার খুলে যেতে পারে, যেখানে মানুষের সঙ্গে ‘কথা বলতে’ পারে গাছ, এমনকি নির্দেশাবলীর প্রতি সাড়াও দিতে পারে বলে প্রতিবেদনে লিখেছে বিজ্ঞানভিত্তিক সাইট নোরিজ।
গবেষকরা বলছেন, এর মূল চাবিকাঠি হচ্ছে ‘অন্তর্মুখী চাপ’, যা গাছপালাকে শুকনো অবস্থায়ও এদের কাণ্ড, শিকড় ও পাতার ভেতরে পানি ধরে রাখতে সাহায্য করে। যখন একটি গাছ চাপ অনুভব করে বিশেষ করে পোকামাকড়ের কামড়ে আহত বা খরার মুখে পড়া তখন এদের এই সূক্ষ্ম চাপের ভারসাম্য বদলে যায়।
এসব পরিবর্তনের ফলে উদ্ভিদের ভেতরের তরল পদার্থ চলাচল করে, যা যান্ত্রিক ও রাসায়নিক উভয় সংকেত বহন করে। আর এ বিষয়টি উদ্ভিদের অন্যান্য অংশকে পদক্ষেপ নিতে ও ভারসাম্য ফিরিয়ে আনতে সতর্ক করে।
এ গবেষণার প্রধান গবেষক ও সিআরওপিপিএস-এর পোস্টডক্টরাল সহযোগী ও ‘শ্মিট সায়েন্স ফেলো’ ভেসনা বাচেভা বলেছেন, “উদ্ভিদের মধ্যে যোগাযোগ কীভাবে ঘটে সে সম্পর্কে একটি মৌলিক ধারণা তৈরির চেষ্টা করছি আমরা।”
‘কর্নেল ইউনিভার্সিটি’র অধ্যাপক আবে স্ট্রোক ও মার্গারেট ফ্রাঙ্কের সঙ্গে উদ্ভিদের ভাস্কুলার সিস্টেমের মধ্য দিয়ে এদের বিভিন্ন স্ট্রেস সিগন্যাল কীভাবে চলাচল করে তা উন্মোচনের জন্য কাজ করেছেন গবেষক বাচেভা। ভাস্কুলার সিস্টেম মূলত গাছের ক্ষুদ্র আকারের টিউবের নেটওয়ার্ক, যার সাহায্যে পানি ও পুষ্টি পরিবহন করে এরা।
উদ্ভিদ অভ্যন্তরীণভাবে যোগাযোগ করতে পারে এই ধারণাটি একশ বছরেরও বেশি সময় ধরে চলে আসছে। কিছু বিজ্ঞানীর অনুমান, উদ্ভিদ বার্তা পাঠানোর জন্য হরমোন বা রাসায়নিক উপাদান ব্যবহার করে। আবার অন্য বিজ্ঞানীদের অনুমান ছিল, এজন্য কোনো যান্ত্রিক শক্তি কাজ করছে।
নতুন গবেষণায় উঠে এসেছে, এ দুটি কারণই হতে পারে। গাছের অভ্যন্তরীণ চাপের বিভিন্ন পরিবর্তন রাসায়নিক সংকেত বহন করে এমন পানি প্রবাহ চালু করতে পারে। অন্যদিকে চাপের পরিবর্তন গাছের বিভিন্ন সেন্সরকেও সচল করতে পারে, যা বিভিন্ন ক্যালসিয়াম আয়নের মতো পদার্থ নির্গত করে, যা পরে উদ্ভিদের বিভিন্ন প্রতিরক্ষা প্রতিক্রিয়াকে সক্রিয় করে তোলে।
উদাহরণ হিসাবে বলা যায়, যখন কোনও শুঁয়োপোকা পাতায় কামড় দেয় তখন গাছের চাপের পরিবর্তনটি এমন রাসায়নিক বহন করতে পারে, যা এর বাকি অংশকে একটি তিক্ত অ্যাসিড তৈরি করতে বলে এবং এর মাধ্যমে গাছ পোকামাকড়ের আক্রমণ থেকে নিজেকে ঠেকায়। একইভাবে চাপের ফলে তৈরি বিভিন্ন ক্যালসিয়াম সংকেত গাছের জিনের কার্যকলাপে পরিবর্তন আনতে পারে, যা উদ্ভিদের প্রতিরক্ষা ব্যবস্থাকে জোরদার করে।
অধ্যাপক স্ট্রোক বলেছেন, “আমরা জীববিজ্ঞান, পদার্থবিজ্ঞান, প্রকৌশল ও কৃষিকাজকে একসঙ্গে করে সম্পূর্ণ নতুন কিছু তৈরি করছি। এই আবিষ্কার সত্যিকার অর্থে কৃষির ভবিষ্যৎকে বদলে দিতে পারে।”
গবেষণাটি প্রকাশ পেয়েছে বিজ্ঞানভিত্তিক জার্নাল ‘প্রসিডিংস অফ দ্য ন্যাশনাল অ্যাকাডেমি অফ সায়েন্সেস’-এ।