প্রথমবারের মতো এমনটি পর্যবেক্ষণ করা হয়েছিল ২০২৩ সালের ১৪ই অক্টোবর উত্তর আমেরিকার বলয়গ্রাস সূর্যগ্রহণের সময়।
Published : 09 Sep 2024, 02:38 PM
গ্রহণই পৃথিবীর বায়ুমণ্ডলীয় তরঙ্গ তৈরির জন্য দায়ী বলে সম্প্রতি নিশ্চিত করেছেন বিজ্ঞানীরা।
এ যুগান্তকারী আবিষ্কারটি করেছেন যুক্তরাষ্ট্রের তিনটি ইউনিভার্সিটি’র শিক্ষার্থীরা। তারা বলছেন, পৃথিবীর বায়ুমণ্ডলে তরঙ্গ তৈরি করতে পারে গ্রহণই, যা ‘অ্যাটমোসফেরিক গ্র্যাভিটি ওয়েভস বা বায়ুমণ্ডলীয় মাধ্যাকর্ষণ তরঙ্গ’ নামে পরিচিত।
এ ঘটনাটি নিয়ে দীর্ঘদিন ধরে অনুমান ছিল বিজ্ঞানীদের। তবে এতদিন তারা এ বিষয়ে নিশ্চিত হতে পারেননি। প্রথমবারের মতো এমনটি পর্যবেক্ষণ করা হয়েছিল ২০২৩ সালের ১৪ই অক্টোবর উত্তর আমেরিকার বলয়গ্রাস সূর্যগ্রহণের সময়।
যুক্তরাষ্ট্রের মহাকাশ গবেষণা সংস্থা নাসা’র ‘নেশনওয়াইড এক্লিপস বেলুনিং প্রজেক্ট (এনইবিপি)’-এর অংশ ছিলেন শিক্ষার্থীরা, যা তাদের এমন তথ্য ধারণ করতে সাহায্য করেছে। পৃথিবীর বায়ুমণ্ডলীয় বিভিন্ন তরঙ্গ এতে স্পষ্টভাবে দেখা গিয়েছে।
যুক্তরাষ্ট্রের একাধিক অঙ্গরাজ্যজুড়ে গ্রহণের পথে অবস্থিত হাই স্কুল ও ইউনিভার্সিটি’র শিক্ষার্থীদের বিভিন্ন দলকে যুক্ত করেছে এনবিপি প্রকল্পটি। পৃথিবীর বিভিন্ন বায়ুমণ্ডলীয় পরিবর্তন পরিমাপ করতে পারে এমন যন্ত্র বহনকারী আবহাওয়ার নানা বেলুন ওড়ানোই ছিল শিক্ষার্থীদের কাজ।
অবশেষে এই তরঙ্গ তৈরির সঙ্গে গ্রহণকে যুক্ত করার তথ্য সংগ্রহ করেছে দেশটির নিউ মেক্সিকো অঙ্গরাজ্যে কর্মরত একদল শিক্ষার্থী। এটি এমন একটি অনুসন্ধান, যা ভবিষ্যতে আবহাওয়ার পূর্বাভাস উন্নত করতে সহায়তা করতে পারে বলে প্রতিবেদনে লিখেছে বিজ্ঞানভিত্তিক সাইট নোরিজ।
“পৃথিবীর বায়ুমণ্ডল কীভাবে কাজ করে, গ্রহণের সময় বায়ুমণ্ডলের প্রতিক্রিয়া কেমন হয়, গবেষণার মাধ্যমে সে সম্পর্কে আমরা আরও ভাল ধারণা পেতে পারি। এই জ্ঞান জলবায়ু পরিবর্তনের তথ্য, আরও সঠিক আবহাওয়ার পূর্বাভাস ও ধারণা পেতে সাহায্য করবে,” বলেন গবেষক।
এর আগে নাসা ও ‘ন্যাশনাল সায়েন্স ফাউন্ডেশন’-এর সহায়তায় বিভিন্ন গবেষক দল আগের বিভিন্ন গ্রহণের সময় একই তথ্য ধারণ করার চেষ্টা করেছেন।
২০১৯ সালে চিলিতে গবেষকদের একটি দল কিছু আশাব্যঞ্জক ফলাফল সংগ্রহ করেছে। তবে ঘটনাটি নিশ্চিত করার জন্য তাদের কাছে সে সময় পর্যাপ্ত তথ্য ছিল না। এর পরের বার, ২০২০ সালে এ পরীক্ষার পুনরাবৃত্তি করার প্রচেষ্টা কোভিড-১৯ মহামারী ও খারাপ আবহাওয়ার কারণে বাধার মুখে পড়ে।
এই অতীত অভিজ্ঞতা থেকে শিক্ষা নিয়ে ২০২৩ সালে এনইবিপি প্রকল্পের দলটি আরও ভালভাবে প্রস্তুতি নেয়। প্রতি ১৫ মিনিট পর পর আবহাওয়া বেলুন চালু করার সিদ্ধান্ত নেন শিক্ষার্থীরা।
পরীক্ষার জন্য প্রাথমিক অবস্থান বা ‘সুপারসাইট’ হিসাবে বেছে নেওয়া হয় যুক্তরাষ্ট্রের নিউ মেক্সিকো অঙ্গরাজ্যকে। কারণ বায়ুমণ্ডলীয় মাধ্যাকর্ষণ তরঙ্গের অন্যান্য সম্ভাব্য বিভিন্ন বিষয় যেমন পর্বত ও নানা আবহাওয়া ব্যবস্থা দূর করার জন্য এখানে ভাল পরিস্থিতি রয়েছে।
নিউ হ্যাম্পশায়ারের ‘প্লাইমাউথ স্টেট ইউনিভার্সিটি’ ও নিউ ইয়র্কের ‘সানি আলবানি’ এবং ‘সানি ওসওয়েগো’-এর শিক্ষার্থীরা গ্রহণের আগের দিন সকাল ১০টা থেকে বেলুন ওড়ানোর জন্য নিউ মেক্সিকোর মরিয়ার্টি শহরে জড়ো হতে থাকেন। তারা দিন ও রাতের শিফটে কাজ করতেন এবং গ্রহণের সময়ও এ কাজ চালিয়ে গেছেন।
প্রতিটি বেলুন একটি ‘রেডিওসোন্ড’-এ বহন করেছেন শিক্ষার্থীরা, এটি এমন একটি ডিভাইস যা তাপমাত্রা, বাতাসের গতি, আর্দ্রতা ও অন্যান্য কারণ পরিমাপ করতে সক্ষম। এ থেকে প্রাপ্ত তথ্য মাঠ পর্যায়ে শিক্ষার্থীদের কাছে ফেরত পাঠানো হয়। মাঠ পর্যায়ে শিক্ষার্থীরা আরও বিশ্লেষণের জন্য এটিকে সার্ভারে আপলোড করেন।
২০২৪ সালের বসন্তে গবেষণা দলটি নিশ্চিত হয় যে, এ গ্রহণটিই আসলে বায়ুমণ্ডলীয় মাধ্যাকর্ষণ তরঙ্গ তৈরি করেছে। এ নিয়ে উচ্ছ্বাস প্রকাশ করেছেন নাসার গবেষক জি গং।
“সব ধরনের তথ্য একসঙ্গে করার পর যখন আমরা টাইম সিরিজের দিকে তাকাই তখন সংকেতের বিভিন্ন তরঙ্গ দেখতে পাই। সে সময় আমি খুবই রোমাঞ্চিত ছিলাম ও সঙ্গে সঙ্গে সবাইকে ইমেইল পাঠাই!”
অনেক শিক্ষার্থীর জন্যই এটি ছিল সত্যিকারের বিজ্ঞানভিত্তিক তথ্য সংগ্রহের প্রথম অভিজ্ঞতা। কারণ আবহাওয়া বেলুন কীভাবে ওতে হয় তা শেখার বাইরেও এ প্রকল্পটি শিক্ষার্থীদের দলবদ্ধভাবে কাজ করা ও সমস্যা সমাধানের দক্ষতা বিকাশে সহায়তা করেছে।