আগফগানিস্তানে দেশটির নাগরিকদের বায়োমেট্রিক ডেটা তালিকাভুক্তির প্রকল্প হাতে নিয়েছিল মার্কিন সামরিক বাহিনী। এখন দেশটির নিয়ন্ত্রণ রয়েছে তালেবানদের হাতে। শঙ্কা রয়েছে, ওই বায়োমেট্রিক ডেটা ব্যবহার করে তারা চড়াও হতে পারে মার্কিন মিত্রদের উপর। কিন্তু আদৌ কী তা সম্ভব?
Published : 21 Aug 2021, 07:42 PM
“আমরা গ্রামে গ্রামে যেতাম এবং মানুষকে এই বায়োমেট্রিক ডেটা সিস্টেমে অন্তর্ভুক্ত করতাম।” – স্মৃতি হাতড়ে বলেছেন ইউএস মেরিন স্পেশাল অপারেশনস কমান্ড সেনা পিটার কিয়েরনান। “আমাদের কাছে ১২ ইঞ্চি বাই ছয় ইঞ্চি প্রস্থের একটি ডিভাইস থাকতো। এটি তাদের আঙুলের ছাপ স্ক্যান করতো, রেটিনা স্ক্যান করতো এবং তাদের ছবি তুলতো।” – যোগ করেছেন তিনি।
সবমিলিয়ে ১২ জন স্থানীয় দোভাষীর ভার ছিলো কিয়েরনানের উপর। এখন তালেবান নিয়ন্ত্রিত আফগানিস্তান থেকে ওই দোভাষীরা যাতে বের হতে পারেন, সে চেষ্টা করছেন তিনি। শুধু কিয়েরনানের ১২ দোভাষীই নন, মার্কিন সামরিক বাহিনীর সঙ্গে যারাই কাজ করেছিলেন, তারাই এখন দেশটি থেকে জরুরি ভিত্তিতে বের হতে চাইছেন।
জাতিসংঘের এক নথি বলছে, নেটো ও মার্কিন বাহিনীর হয়ে যারা কাজ করেছেন এবং সহযোগিতা করেছেন তাদেরকে হন্যে হয়ে খুঁজছে তালেবানরা।
মার্কিন সামরিক বাহিনী ও আফগান সরকারের সংগ্রহ করা ওই বায়োমেট্রিক ডেটা এখন প্রতিশোধ নিতে ব্যবহার করা হতে পারে বলেও মনে করছেন অনেকে।
এ প্রসঙ্গে ‘হিউম্যান রাইটস ফার্স্ট’ –এর জ্যেষ্ঠ উপদেষ্টা ব্রায়ান ডুলি বলেছেন, এ ব্যাপারে সুনির্দিষ্টভাবে খুব কম জানা গেলেও “অত্যন্ত যুক্তিসংগত ধারণা বলছে, বায়োমেট্রিক ডেটার বিপুল সংগ্রহ [তালেবানরা] হয় পেয়ে গেছে বা দখলে নেবে।”
‘হ্যান্ডহেল্ড ইন্টারজেন্সি আইডেন্টিটি ডিটেকশন ইক্যুইপমেন্ট’ বা এইচআইআইডিই নামের ডিভাইস ব্যবহার করে কিয়েরনানের মতো সৈন্যরা আফগানদের বিস্তারিত এক মার্কিন বায়োমেট্রিক স্টোরে যোগ করতেন।
কিয়েরনানের দেওয়া তথ্য অনুসারে, বোমা-নির্মাতাদের শনাক্ত করার মতো কাজে কার্যকরী ছিলো এটি। এ ছাড়াও ঠিকাদার এবং মার্কিন সেনাবাহিনীর সঙ্গে কর্মরত স্থানীয়দের পরিচয় নিশ্চিত করতে কাজে দিতো প্রক্রিয়াটি।
বিবিসি এক প্রতিবেদনে উল্লেখ করেছে, মূল সামরিক লক্ষ্য ছিলো জনসংখ্যার ৮০ শতাংশ বা আড়াই কোটি মানুষকে সিস্টেমের আওতায় নিয়ে আসা। যতটুকু তারা করতে পেরেছে, সে সংখ্যা অবশ্য এর তুলনায় অনেক কম।
মঙ্গলবার সংবাদ সাইট ইন্টারসেপ্ট জানায়, কিছু এইচআইআইডিই ডিভাইস তালেবানদেনদের হাতে পড়েছে। অন্যদিকে, রয়টার্স এক কাবুল বাসিন্দার বরাত দিয়ে প্রতিবেদনে জানায়, তালেবানরা এক “বায়েমেট্রিক মেশিন” নিয়ে বাড়ি-বাড়ি তল্লাশি চালাচ্ছে।
এক আফগান কর্মকর্তা নিউসায়েন্টিস্টকে জানান, বায়োমেট্রিক কাঠামো এখন তালেবানের হাতে রয়েছে।
‘দ্য ট্রুম্যান ন্যাশনাল সিকিউরিটি প্রজেক্ট’ নামের মার্কিন ‘থিংক-ট্যাংক’ এর সদস্য কিয়েরনান। তার মতে, জোটের বায়োমেট্রিক ডেটার কিছুটা তালেবানের হাতে পড়া সম্ভব, কিন্তু এটি অনিশ্চিত যে ওই ডেটা কাজে লাগানোর মতো কারিগরি জ্ঞান তাদের রয়েছে কি না।
অন্যদিকে সামরিক বায়োমেট্রিকস নিয়ে গবেষণা করা সাংবাদিক ও গ্রন্থকার অ্যানি জ্যাকবসন মনে করছেন, জোটের সংগ্রহ করা বড় মাপের ডেটায় প্রবেশাধিকার পাবে না তালেবান, এমনকি এইচআইআইডিই মেশিন থাকলেও না।
তিনি যোগ করেছেন, “যদি কোনো দুর্নীতিগ্রস্ত কর্মকর্তা” সম্ভাব্য অপরাধীদের আগেভাগে জানিয়ে দেয় এই শঙ্কায় ওই ডেটা সমষ্টিগতভাবে কোনো আফগান কর্মকর্তার সঙ্গে শেয়ার করাও হয়নি।
জ্যাকবসন আরও জানিয়েছেন, এইচআইআইডিই ডিভাইসের ডেটা আফগানিস্তানে সংরক্ষণ করা হয়নি। সেগুলো পেন্টাগনের অটোমেটেড আইডেন্টিফিকেশন সিস্টেমে সংরক্ষিত রয়েছে। জটিলতার কারণে সেটিকে “সিস্টেমের সিস্টেম” নামে অভিহিত করেছেন তিনি।
জ্যাকবসনের মতে, প্রায়োগিক পর্যায়ে তালেবানদের জন্য তথ্য পাওয়ার সহজ একটি পথ হতে পারে সামাজিক মাধ্যম।
নাগরিক ডেটা
আফগান সরকারও বায়োমেট্রিক ডেটা ব্যবহার করেছিল।
আফগানিস্তানের ‘ন্যাশনাল স্ট্যাটিসটিকস অ্যান্ড ইনফরমেশন অথরিটি’ নিজেদের ই-তাজকিরা বায়োমেট্রিক পরিচয় কার্ডের জন্য ৬০ লাখেরও বেশি আবেদন পেয়েছিল। এর মধ্যে আঙুলের ছাপ, আইরিস স্ক্যান এবং ছবি অন্তর্ভুক্ত রয়েছে।
এ ছাড়াও ২০১৯ সালের ভোটার নিবন্ধন পরীক্ষায় ফেইশল রিকগনিশনসহ বায়োমেট্রিক ব্যবহার করা হয়েছিলো।
ব্যবসা নিবন্ধনের জন্য বায়োমেট্রিক ব্যবহার এবং মাদ্রাসার শিক্ষার্থীদের কাছ থেকেও এ ধরনের ডেটা ডেটা সংগ্রহের পরিকল্পনা ছিলো দেশটির।
এদিকে, এক আফগান সংবাদদাতা জানিয়েছেন, তালেবানরা ২০১৬ সালে বায়োমেট্রিক রিডার ব্যবহার করে নিরাপত্তা সেবার সদস্য এমন বাস যাত্রীদের খুঁজে বের করেছিল। সেবার তাদের আক্রমণে প্রাণ হারিয়েছিলেন ১২ জন।