চারদিন ধরে চলা সরকারবিরোধী বিক্ষোভ সংগঠিত করতে ব্যবহৃত সামাজিক মাধ্যম নেটওয়ার্কগুলো বন্ধ করতে পদক্ষেপ নিয়েছে ইরান।
Published : 01 Jan 2018, 05:41 PM
দেশটির রাষ্ট্রীয় সংবাদ সংস্থা আইরিব-এর প্রতিবেদনে বলা হয়, ‘শান্তি বজায় রাখতে’ টেলিগ্রাম আর ইনস্টাগ্রাম অ্যাপের উপর ‘সাময়িক’ এই সীমাবদ্ধতা আরোপ করা হয়েছে।
গণমাধ্যমগুলো যখন কড়া নীতিমালার মধ্যে তখন আন্দোলনকারীরা বিস্তৃত পরিসরে এই অ্যাপগুলোর মতো সামাজিক মাধ্যম ব্যবহার করছিল, এমনটাই বলা হয় বিবিসি’র প্রতিবেদনে।
টেলিগ্রাম ইরানে খুবই জনপ্রিয় একটি অ্যাপ, দেশটির আট কোটি জনগণের অর্ধেকেরও বেশি মানুষ এই অ্যাপে সক্রিয় বলে প্রতিবেদনে জানানো হয়। প্রতিষ্ঠানটির প্রধান নির্বাহী পাভেল দুরোভ এক টুইটে বলেন, “শান্তিপূর্ণ আন্দোলনের মাধ্যমগুলো’ বন্ধে ইরান সরকারের আহ্বান তার প্রতিষ্ঠান প্রত্যাখ্যান করে দেওয়ার পর এই পদক্ষেপ নিয়েছে সরকার।
টেলিগ্রাম-এ নিজের এক পোস্টে তিনি বলেন, বিরোধীদের বিদেশভিত্তিক একটি মাধ্যম থেকে পুলিশের বিরুদ্ধে সহিংসতা চালানোর আহ্বান জানানো হয়। আমাদনিউজ নামের ওই চ্যানেল শনিবার বন্ধ করে দিয়েছে টেলিগ্রাম। তিনি বলেন, তাদের গ্রাহকদের মধ্যে লাখ লাখ মানুষের ব্যবহার করা নতুন একটি ‘শান্তিপূর্ণ মাধ্যম’ এবার বন্ধ করে দেওয়া হলো।
ইরানের যোগাযোগ মন্ত্রী মোহাম্মদ-জাভাদ আজারি জাহরোমি এর আগে আমাদনিউজ-এর মতো চ্যানেলগুলোর বিরুদ্ধে ‘সশস্ত্র অভ্যুথান ও সামাজিক বিশৃংখলা’ ও পেট্রোল বোমা ব্যবহারে প্রচারণা চালানোর অভিযোগ তুলেছিলেন।
২০০৯ সালের আন্দোলনের পর দেশটিতে এবারের আন্দোলন বিরোধীদের সবচেয়ে বড় বিক্ষোভ প্রদর্শন বলে বিবিসি’র প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়। ২০০৯ সালে প্রেসিডেন্ট মাহমুদ আহমাদিনেজাদ বিতর্কিতভাবে দ্বিতীয়বারের মতো ইরানের প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হওয়ার পর দেশজুড়ে বিক্ষোভ ছড়িয়ে পড়েছিল। তারপর থেকে এবারের সরকারবিরোধী বিক্ষোভকেই জন অসন্তোষের সবচেয়ে গুরুতর ও ব্যাপক প্রকাশ হিসেবে দেখছেন পর্যবেক্ষকরা।
২০০৯ সালে দেশজুড়ে ছড়িয়ে পড়া ওই অস্থিরতা দেশটির নিরাপত্তা বাহিনী কঠোর হাতে দমন করেছিল। নতুন করে ছড়িয়ে পড়া সরকারবিরোধী বিক্ষোভের মধ্যেও শনিবার ইরানজুড়ে ২০০৯ সালের অস্থিরতা দমন বার্ষিকী সরকারিভাবে পালন করা হয়।
ইরানের প্রেসিডেন্ট হাসান রুহানি বলেছেন, ইরানিদের বিক্ষোভ প্রদর্শনের অধিকার রয়েছে কিন্তু বিশৃংখলা সৃষ্টি করে এমন কিছু নয়।
অর্থনৈতিক দুরবস্থা ও কথিত দুর্নীতির অভিযোগে সৃষ্ট অসন্তোষ থেকে দেশটির দ্বিতীয় জনবহুল শহর উত্তর-পশ্চিমাঞ্চলীয় মাশহাদে বৃহস্পতিবার বিক্ষোভ শুরু করেছিল বিক্ষুব্ধরা; পরে তা সরকারবিরোধী বিক্ষোভে রূপ নিয়ে ক্রমেই সারা দেশে ছড়িয়ে পড়ছে।
দেশটির ১,২০০ শহরে সরকারপন্থি মিছিল হয়েছে বলে রাষ্ট্রীয় টেলিভিশনের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে।
একই সময় সরকারবিরোধী বিক্ষোভও রাজধানী তেহরানে আরো বিস্তৃত হয়েছে, পাশাপাশি বেশ কয়েকটি শহরে নতুন করে ছড়িয়ে পড়েছে।
তেহরানে প্রথমবারের মতো পুলিশের সঙ্গে সংঘর্ষে জড়িয়ে পড়ে বিক্ষোভকারীরা। শহরের প্রধান বিশ্ববিদ্যালয়ের আশপাশে অবস্থান নিয়ে তারা পুলিশের দিকে পাথর ছুড়ে মারে, এর অদূরেই সরকারপন্থি মিছিলকারীরা অবস্থান করছিল।
সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে পোস্ট করা কয়েকটি ভিডিওতে পশ্চিমাঞ্চলীয় শহর দোরুদে সারা শরীরে রক্ত মাখা দুই তরুণকে নিশ্চিলভাবে মাটিতে পড়ে থাকতে দেখা গেছে। নেপথ্য বর্ণনায় ওই দুই তরুণ বিক্ষোভকারীদের লক্ষ্য করে ছোড়া দাঙ্গা পুলিশের গুলিতে নিহত হয়েছেন বলে দাবি করা হয়েছে।
ভিডিওটিতে অন্যান্য বিক্ষোভকারীদের ‘যারা আমার ভাইকে খুন করেছে, আমি তাদের হত্যা করবো!’ শ্লোগান দিতে দেখা গেছে।
এই ভিডিওগুলোর সত্যতা তাৎক্ষণিকভাবে নির্ধারণ করা যায়নি বলে জানিয়েছে রয়টার্স।
এর আগের ভিডিওগুলোতে দোরুদের মিছিলকারীদের ‘একনায়কের মৃত্যু হোক’ শ্লোগান দিতে দেখা গেছে।