অস্ত্রোপচারের মাত্র চার সপ্তাহ পরই ওপালের মা বাবা তার অবস্থা পরিবর্তনের লক্ষণ খুঁজে পান, যা বিশেষভাবে দৃশ্যমান হতে দেখা গেছে ২৪ সপ্তাহ পর।
Published : 10 May 2024, 04:59 PM
বিশ্বের প্রথম ব্যক্তি হিসেবে নতুন এক যুগান্তকারী জিন থেরাপি ট্রায়ালে অংশ নিয়ে নিজের শ্রবণশক্তি ফিরে পেয়েছে ব্রিটিশ এক শিশু।
কন্যা শিশুটির নাম ওপাল স্যান্ডি, ‘অডিটরি নিউরোপ্যাথি’ রোগের কারণে যিনি শ্রবণ প্রতিবন্ধী হিসেবে জন্মেছিলেন। এটি এমন এক রোগ, যা কানের ভেতর থেকে শুরু করে মস্তিষ্কের বিভিন্ন স্নায়ুতে ব্যাঘাত ঘটায়।
এখন প্রায় স্বাভাবিকভাবেই সবকিছু শুনছে ১৮ মাসের শিশুটি, যেখানে মাত্র একটি থেরাপি নেওয়ার পরও তার এ অবস্থায় আরও উন্নতি সাধনের সম্ভাবনা দেখা দিয়েছে।
ওপালের চিকিৎসা হয়েছে কেমব্রিজে অবস্থিত ‘অ্যাডেনব্রুক’স হসপিটালে’। ট্রায়ালের নেতৃত্ব দেওয়া অধ্যাপক মানোহার বান্স বলেছেন, তিনি যতটা ভেবেছিলেন, ‘এর ফলাফল তার চেয়েও ভালো’ হয়েছে। আর এ প্রক্রিয়ায় অন্যান্য চিকিৎসকও হয়ত এ ধরনের শ্রবণজনিত রোগ নিরাময় করতে পারবেন বলে আশাবাদ ব্যক্ত করেন তিনি।
“আমরা ওপালের চিকিৎসায় যে ফলাফল পেয়েছি, তা অসাধারণ। অনেকটা স্বাভাবিকভাবে শুনতে পাওয়ার কাছাকাছি। তাই আমরা আশা করি, এ রোগ নিরাময় করা সম্ভব,” বলেন তিনি।
অডিটরি নিউরোপ্যাথি’র পেছনে হাত থাকতে পারে ‘অটফ’ নামের জিনে থাকা এক ত্রুটির। ‘অটফেরলিন’ নামের প্রোটিন তৈরির মাধ্যমে কানের মধ্যে থাকা বিভিন্ন কোষের সঙ্গে শ্রবণ স্নায়ুর সংযোগ স্থাপনে ভূমিকা রাখে এটি।
ওপালের জন্ম অক্সফোর্ডশায়ারে। গত বছরের সেপ্টেম্বর মাসে অস্ত্রোপচারের মাধ্যমে তার ডান কানে একটি কার্যকরী জিন বসানো হয়েছিল, যে চিকিৎসা ব্যবস্থা তৈরি করেছে বায়োটেক কোম্পানি ‘রেজেনারন’।
অস্ত্রোপচারের মাত্র চার সপ্তাহ পরই ওপালের মা বাবা তার অবস্থা পরিবর্তনের লক্ষণ খুঁজে পান, যা আরও ভালোভাবে বোঝা গেছে ২৪ সপ্তাহ পর।
ওপালের মা বাবা জো ও জেমস স্যান্ডি দুজনের বয়সই ৩৩ বছর। তারা বলছেন, বাড়িতে বিভিন্ন সাউন্ড টেস্টে ওপালের প্রতিক্রিয়া পাওয়ার পর তারা ‘একেবারে হতবাক’ হয়ে গিয়েছিলেন, তাও এই রোগটি নিরাময়ের প্রচলিত উপায় অর্থাৎ ‘ককলিয়র ইমপ্লান্ট’ ছাড়াই।
“আমি ভেবেছি, এটা অনেকটা ‘ঝড়ে বক মরার মতো’ ঘটনা বা এমন কোনও আলো বা অন্যকিছু, যা ও চোখে দেখতে পেয়েছে। কিন্তু আমি বেশ কয়েকবার পরীক্ষা করে দেখেছি,” বলেন জো স্যান্ডি।
তাদের দাবি, ওপাল এখন টেবিলে নিজের চামচে বাড়ি দেওয়ার শব্দ উপভোগ করে। এমনকি বিভিন্ন খেলনা ড্রাম ও কাঠের ব্লক নিয়েও খেলছে শিশুটি।
“আমাদের বলা হয়েছে, শেষবার তার শোনার ক্ষমতা ছিল স্বাভাবিকের প্রায় কাছাকাছি,” যোগ করেন তিনি।
“আমার ধারণা, তারা ২৫ থেকে ৩০ ডেসিবল পর্যন্ত শব্দে ওর প্রতিক্রিয়া পেয়েছেন।”
“আমার জানামতে, ২০ ডেসিবলের শব্দ স্বাভাবিক শোনার সক্ষমতা হিসেবে বিবেচিত। আর ও এর থেকে খুব বেশি দূরে নেই। আর আগে তো ও একেবারেই শুনতে পেত না।”
ডা. বান্সের দাবি, ওপালের এ সার্জারি ককলিয়ার ইমপ্লান্টের কাছাকাছি পর্যায়ের।
তিনি বলেন, ওর কানের ভেতরের অংশ (ককলিয়া) উন্মুক্ত অবস্থায় ছিল। আর এই চিকিৎসায় ১৬ মিনিটের বেশি সময় ধরে একটি সূক্ষ্ম নল ব্যবহার করে তা ঠিক করা হয়।
“আমাদেরকে ওর কানের আরেক অংশে গর্ত বানাতে হয় যাতে এই চিকিৎসায় নলটি পুরোপুরি কানের মধ্য দিয়ে যেতে পারে।”
“এর পর আমরা শুধু এটি সুক্ষ্মভাবে মেরামত করেছি, অনেকটা ককলিয়ার ইমপ্ল্যান্টের মতো প্রক্রিয়ায়, যেখানে আমরা কোনও কিছুই বসাইনি।”