Published : 22 Nov 2016, 08:08 PM
সম্প্রতি লন্ডনে অনুষ্ঠিত হয়েছে ই-স্পোর্টস ইন্ডাস্ট্রি অ্যাওয়ার্ড অনুষ্ঠান যেখানে বিশ্বের শীর্ষ খেলোয়াড়দের প্রশংসা করা হয়। এই অনুষ্ঠানে কোনো নারী খেলোয়াড় মনোনীত হননি।
বিবিসির প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, খুব কম সংখ্যক নারীই পেশাদার গেইমিং জগতে প্রবেশ করে থাকেন। আর যারা প্রবেশ করেন, তাদের প্রায়ই নানা হয়রানি ও লিঙ্গবৈষম্যের শিকার হতে হয়। এমনকি অনেক সময় তাদের ধর্ষণের হুমকিও দেওয়া হয়ে থাকে। আর অনলাইনে কটূক্তিতো গেইমিং সম্প্রদায়ে নতুন কিছু নয়। শুরু থেকেই এর প্রচলন রয়েছে। বিশেষ করে ২০১৪ এবং ২০১৫ সালে এর ব্যবহার ছিল মাত্রাতিরিক্ত পর্যায়ে।
পিউ সেন্টার-এর সাম্প্রতিক এক গবেষণায় দেখা গেছে যদিও নারী এবং পুরুষ ভিডিও গেইম খেলা বা খেলতে পছন্দ করার বিষয়টি সমানভাবে বলে, কিন্তু সাধারণত পুরুষরা নারীদের তুলনায় দ্বিগুণ হারে নিজেদের ‘গেইমার’ হিসেবে বিবেচনা করতে পছন্দ করে। আর যখন গেইমিং প্রতিযোগিতামূলক পর্যায়ে হয় তখন নাটকীয়ভাবে নারীদের সংখ্যা কমে যায়। এমনকি ই-স্পোর্টস এর ক্ষেত্রে শারীরিক বিশেষ কোনো সক্ষমতার প্রয়োজন না থাকলেও পুরুষদের অংশগ্রহণই বেশি এখানে।
বিশ্বের অন্যতম সফল গেইমারদের একজন স্টেফ হার্ভি জানান, ই- স্পোর্টস-এ নারীদের অংশগ্রহণের হার ৫ শতাংশেরও কম এবং এর প্রধান কারণ হচ্ছে প্রচলিত গেইমারদের মতো এর সঙ্গে একাত্মতা না থাকা। "এটি এখনো ছেলেদের ক্লাব এবং নারী হিসেবে আপনাকে স্বাভাবিকভাবেই ভিন্ন নজরে দেখা হবে"- বলেন তিনি। এসব কারণে তিনি কখনও হতাশায় ভোগেন, আবার অনেক সময় ক্ষুব্ধ এবং মর্মাহত বোধ করেন বলে জানান। নিজের নারীবাদী অবস্থান এবং গেইমিং জগতে নারীদেরও জায়গা আছে এমন ভাবনাই তার বিরুদ্ধে ঘৃণার কারণ বলে মত তার।
চলতি বছর অক্টোবরে বিশ্বের শীর্ষ নারী গেইমিং দলের খেতাব পাওয়া ‘টিম সিক্রেট’-এর দলনেতা জুলিয়া কিরন-এর মতে, এটি খুবই সাধারণ মনোভাবের প্রতিফলন মাত্র। "এটি সবসময় অনুভূত হয় যে নারী দলগুলো কখনোই বাস্তব দৃশ্য নয়, পুরুষ খেলোয়াড়রা আমাদের পার্শ্বচরিত্র হিসেবেই ধরেন, যাদের কখনোই গণনা করা হয় না"- বলেন তিনি।
ই- স্পোর্টস এর শীর্ষ পুরুষ খেলোয়াড়ের আয় হল ২৫ লাখ মার্কিন ডলারেরও বেশি, যেখানে শীর্ষ নারী খেলোয়াড়ের আয় দুই লাখ মার্কিন ডলারেরও কম। কারণ বিশ্লেষণে দেখা গেছে নারী দলগুলোর যে কোনো প্রতিযোগিতার জন্য বাজেট নেই বললেই চলে, স্পন্সরের অভাব এবং মিডিয়া কাভারেজও তুলনামূলক অনেক কম। সমাধান হিসেবে শুধু নারীদের নিয়ে টুর্নামেন্ট আয়োজনের প্রস্তাবও দিয়েছেন কেউ কেউ।
অ্যামাজনের মালিকানাধীন গেইমিং স্ট্রিমিং সাইট 'টুইচ' তাদের সাইটে এই ধরনের পরিস্থিতি মোকাবেলায় কিছু পদক্ষেপ গ্রহন করেছে। 'মিসক্লিকস' নামের একটি সংগঠন স্ট্রিম গেইমিং জগতে নারী গেইমারদের ভুমিকা প্রচার করছে। সমস্যা সমাধানে স্টেফ ও তার নিজের কিছু কর্মপরিকল্পনা গ্রহণ করেছেন। তিনি আশা করেছেন আরও অধিক সংখ্যক নারী এই জগতে প্রবেশ করবেন যাতে তাদের দেখাদেখি অন্যান্য নারীরাও অনুপ্রাণিত হতে পারেন। ই-স্পোর্টস এর ক্ষেত্রে অনেক সময় নারী গেইমাররা পুরুষদের তুলনায় অনেক বেশি দক্ষ হয়ে থাকেন বলেই বিশ্বাস তার।
প্রতিযোগিতামূলক গেইমিং বা ইলেকট্রনিক গেমিং খুব দ্রুত এবং অবিশ্বাস্য গতিতে প্রসার লাভ করছে। পেশাদার সেবাদাতা প্রতিষ্ঠান ডিলয়েট এর পূর্বাভাস অনুযায়ী ২০১৬ সালে ই-স্পোর্টস থেকে আয় ২৫ শতাংশ বেড়ে ৫০ কোটি মার্কিন ডলারে দাঁড়াবে এবং এর নিয়মিত বৈশ্বিক শ্রোতা বেড়ে দাঁড়াবে ১৫ কোটিতে।