ঢাকা প্রিমিয়ার লিগ
Published : 29 Apr 2025, 04:18 PM
নাসুম আহমেদের ডেলিভারি লেগ সাইডে খেললেন মোসাদ্দেক হোসেন। বল বাউন্ডারি লাইন স্পর্শ করতেই মাঠের ভেতর ছুট দিলেন অপেক্ষমাণ আবাহনীর ক্রিকেটাররা। কেউ এসে হাতে তুলে নিলেন স্টাম্প। কেউ আবার জড়ো হলেন ক্রিজের পাশে। মোসাদ্দেক ও মোহাম্মদ মিঠুনকে ঘিরে শুরু হলো উদযাপন। মোহামেডান স্পোর্টিং ক্লাবকে হারিয়ে ঢাকা প্রিমিয়ার লিগে টানা তৃতীয়বার চ্যাম্পিয়ন হওয়ার আনন্দে ভাসল আবাহনী।
শের-ই-বাংলা ক্রিকেট স্টেডিয়ামে মঙ্গলবার চিরপ্রতিদ্বন্দ্বীদের ৬ উইকেটে হারিয়েছে আবাহনী। প্রতিপক্ষের ২৪০ রান তারা পেরিয়ে গেছে ৫৬ বল বাকি থাকতে।
এবারের লিগে দুই দলের শেষ রাউন্ডের ম্যাচটি পরিণত হয়েছিল ফাইনালে। যেখানে হাসি ফুটল আবাহনীর মুখে। হার দিয়ে আসর শুরু করা ঢাকার ক্লাব ক্রিকেটের সফলতম দলটি ঘুরে দাঁড়িয়ে ১৪ জয়ে ধরে রাখল মুকুট।
সব মিলিয়ে ঢাকার ক্লাব ক্রিকেটের শীর্ষ টুর্নামেন্টে আবাহনীর এটি ২৪তম শিরোপা। ২০১২-১৩ মৌসুমে লিস্ট ‘এ’ স্বীকৃতি পাওয়ার পর তাদের সপ্তম শিরোপা এটি, যার মধ্যে ২০১৯-২০ আসর হয়েছিল টি-টোয়েন্টি সংস্করণে। এই সময়ে অন্য কোনো দলের নেই একাধিক শিরোপাও।
ঢাকার শীর্ষ লিগে এনিয়ে পঞ্চমবার শিরোপা জয়ের হ্যাটট্রিক করল আবাহনী।
মিরপুরে আবাহনীর এদিনের জয়ের নায়ক মোসাদ্দেক। অফ স্পিনে ৩৯ রান খরচায় ২ উইকেট নেন তিনি। পরে রান তাড়ায় ৫ ছক্কা ও ৬ চারে ৬৫ বলে ৭৮ রানের দুর্দান্ত ইনিংসে দলের জয় সঙ্গে নিয়ে ফেরেন অধিনায়ক।
অবদান কম নয় জিশান আলম ও মিঠুনেরও। তিনে নেমে ১ ছক্কা ও ৬ চারে ৫৫ রান করেন জিশান। আর পাঁচে নেমে ২ ছক্কা ও ৬ চারে ৬৬ রান করে অপরাজিত থাকেন মিঠুন।
টস হেরে ব্যাটিংয়ে নামা মোহামেডানের হয়ে অভিজ্ঞ মাহমুদউল্লাহ ১ ছক্কা ৪টি চারে করেন ৫০ রান। ২ ছক্কা ও ৩ চারে আরিফুলের ব্যাট থেকেও আসে ৫০ রান। ফিফটি করতে পারেননি আর কেউ।
এদিন মুস্তাফিজুর রহমান তেমন কিছুই করতে পারেননি। সাত ওভারে ৩৭ রান দিয়ে মোহামেডানের অভিজ্ঞ পেসার ছিলেন উইকেটশূন্য। দলটির হয়ে নাসুম ধরেন সর্বোচ্চ ২ শিকার, ৫৯ রান খরচায়।
আচরণবিধি ভেঙে চার ম্যাচের নিষেধাজ্ঞা পাওয়া গুরুত্বপূর্ণ এই লড়াইয়ে অধিনায়ক তাওহিদ হৃদয়কে পায়নি মোহামেডান। তার অনুপস্থিতিতে নেতৃত্ব দেওয়া রনি বড় ইনিংস খেলার আভাস দিলেও ফিরে যান ফিফটির আগে। ৯ চারে এই ওপেনার করেন ৪৫ রান।
অন্য দুই টপ অর্ডার ব্যাটসম্যান তৌফিক খান (২ চারে ১৬) ও আনিসুল ইসলাম (১ চারে ১৫) পারেননি টিকতে। একপ্রান্তে কিছুক্ষণ লড়াই করে ৬ চারে ৪২ রান করেন ফরহাদ হোসেন।
এরপর মাহমুদউল্লাহ ও আরিফুলের ব্যাটে ইনিংসের সবচেয়ে বড় জুটিটি পায় মোহামেডান। তাদের যুগলবন্দীতে আসে ৯০ রান। নিজের পরপর দুই ওভারে থিতু দুই ব্যাটসম্যানকে ফিরিয়ে দেন মোসাদ্দেক।
রান তাড়ায় এবাদত হোসেনের করা ইনিংসের প্রথম ওভারের চতুর্থ বলে ক্যাচ দিয়ে ড্রেসিং রুমে ফেরেন শাহরিয়ার কমল। পারভেজ হোসেন ও জিশানের ৫৬ রানের জুটিতে শুরুর সেই ধাক্কা সামাল দেয় আবাহনী।
এরপর দ্রুত পারভেজ (৩ ছক্কা ও ১ চারে ২৮) ও মেহরবকে (১ চারে ১০) হারায় দলটি। ফিফটি করা জিশানকে এলবিডব্লিউ করে দেন নাসুম। ১০৮ রানে ৪ উইকেট হারিয়ে চাপে পড়ে যায় আবাহনী।
তবে, দারুণ ব্যাটিংয়ে দলকে কক্ষপথে রাখেন মিঠুন ও মোসাদ্দেক। দেখেশুনে খেলে আবাহনীকে লক্ষ্যের দিকে এগিয়ে নেন তারা। ৬২ বলে ফিফটি স্পর্শ করেন মিঠুন। আর মোসাদ্দেকের পঞ্চাশ আসে ৫২ বলে।
১২২ বল স্থায়ী ১৩৫ রানের অবিচ্ছিন্ন জুটিতে আবাহনীকে কাঙ্ক্ষিত ঠিকানায় পৌঁছে দেন তারা দুজন।
সংক্ষিপ্ত স্কোর:
মোহামেডান স্পোর্টিং ক্লাব: ৫০ ওভারে ২৪০/৭ (রনি ৪৫, তৌফিক ১৬, আনিসুল ১৫, ফরহাদ ৪২, মাহমুদউল্লাহ ৫০, আরিফুল ৫০, সাইফ ৫, নাসুম ৪*, মুস্তাফিজ ৫*; রিপন ৮-০-৫৩-১, রকিবুল ১০-০-৩৬-০, মৃত্যুঞ্জয় ৭-০-৪৬-২, মাহফুজুর ১০-১-৩৮-১, মোসাদ্দেক ১০-১-৩৯-২, মেহরব ৫-০-২৬-১)
আবাহনী লিমিটেড: ৪০.৪ ওভারে ২৪৩/৪ (শাহরিয়ার ১, পারভেজ ২৮, জিশান ৫৫, মেহরব ১০, মিঠুন ৬৬*, মোসাদ্দেক ৭৮*; এবাদত ৮-১-৪৭-১, মুস্তাফিজ ৭-১-৩৭-০, সাইফ ৭-০-৫১-১, নাসুম ৯.৪-০-৫৯-২, নাবিল ৩-০-২৭-০, মাহমুদউল্লাহ ৫-০-১৭-০, আরিফুল ১-০-৩-০)
ফল: আবাহনী লিমিটেড ৬ উইকেটে জয়ী
ম্যান অব দা ম্যাচ: মোসাদ্দেক হোসেন