Published : 28 Apr 2025, 11:13 PM
আগের দুই ম্যাচে ঝড়ো শুরু করেও ইনিংস বড় করতে পারেননি। এবার এমনই তাণ্ডব চালালেন যে, ১৪ বছর বয়সী বৈভাব সুরিয়াভানশি পৌঁছে গেলেন সেঞ্চুরির ঠিকানায়। তার নামও উঠে গেল রেকর্ড বইয়ে।
আইপিএলে সোমবার রাজস্থান রয়্যালসের হয়ে স্রেফ ৩৫ বলে তিন অঙ্ক স্পর্শ করেন সুরিয়াভানশি। গুজরাট টাইটান্সের বিপক্ষে দুইশ ছাড়ানো লক্ষ্য তাড়ায় ১১ ছক্কা ও ৭ চারে ৩৮ বলে ১০১ রানের বিধ্বংসী ইনিংস খেলেন কিশোর ভারতীয় ওপেনার।
১৪ বছর ৩২ দিন বয়সে তিন অঙ্ক ছুঁয়ে স্বীকৃত টি-টোয়েন্টি ক্রিকেটে সর্বকনিষ্ঠ সেঞ্চুরিয়ান এখন তিনিই।
এতদিন রেকর্ডটি ছিল আরেক ভারতীয় ব্যাটসম্যান ভিজায় জোলের। ২০১৩ সালে ভারতের আরেক টি-টোয়েন্টি প্রতিযোগিতা সৈয়দ মুশতাক আলি ট্রফিতে মহারাষ্ট্রের হয়ে মুম্বাইয়ের বিপক্ষে তিনি ১০৯ রানের ইনিংস খেলেছিলেন ১৮ বছর ১১৮ দিন বয়সে।
এই তালিকায় তৃতীয় স্থানে আছেন বাংলাদেশের পারভেজ হোসেন। ২০২০ সালের বিপিএলে ফরচুন বরিশালের হয়ে মিনিস্টার রাজশাহীর বিপক্ষে সেঞ্চুরির দিন তার বয়স ছিল ১৮ বছর ১৭৯ দিন।
আইপিএলে সুরিয়াভানশির আগে সবচেয়ে কম বয়সে সেঞ্চুরির কীর্তি ছিল মানিশ পান্ডের। ২০০৯ আসরে চ্যালেঞ্জার্স বেঙ্গালুরুর হয়ে ডেকান চার্জার্সের বিপক্ষে মানিশ সেঞ্চুরি করেছিলেন ১৯ বছর ২৫৩ দিন বয়সে।
এই ফ্র্যাঞ্চাইজি লিগটির দেড় যুগের ইতিহাসে দ্বিতীয় দ্রুততম সেঞ্চুরিয়ান এখন সুরিয়াভানশি। এখানে তার ওপরে আছেন ক্রিস গেইল। ২০১৩ সালে রয়্যাল চ্যালেঞ্জার্স বেঙ্গালুরুর হয়ে পুনে ওয়ারিয়র্সের বিপক্ষে ১৭৫ রানের অপরাজিত ইনিংসের পথে ৩০ বলে সেঞ্চুরি পূর্ণ করেছিলেন কারিরবিয়ান তারকা।
এই ইনিংসে সুরিয়াভানশির ১১ ছক্কা আইপিএলে ভারতীয় কোনো ব্যাটসম্যানের যৌথভাবে সর্বোচ্চ। ২০১০ সালে চেন্নাই সুপার কিংসের হয়ে রাজস্থানের বিপক্ষে ১১ ছক্কা মেরেছিলেন মুরালি ভিজায়ও।
২১০ রানের লক্ষ্য তাড়ায় ইয়াসাসভি জয়সওয়ালের সঙ্গে ইনিংস শুরু করতে নেমে মুখোমুখি দ্বিতীয় বলে ছক্কা মেরে ডানা মেলে দেন সুরিয়াভানশি। চতুর্থ ওভারে তিনি তিনটি ছক্কা ও দুটি চার মারেন অভিজ্ঞ পেসার ইশান্ত শার্মাকে। পরের ওভারে স্পিনার ওয়াশিংটন সুন্দারকে দুই ছক্কা ও একটি চার মেরে পঞ্চাশে পৌঁছে যান স্রেফ ১৭ বলে।
সবচেয়ে বড় ঝড়টা যায় দশম ওভারে কারিম জানাতের ওপর দিয়ে। এই ওভারে আফগান পেসারকে তিনটি করে ছক্কা ও চারে ৩০ রান তোলেন সুরিয়াভানশি। ৬৪ থেকে এই ওভারেই তিনি পৌঁছে যান ৯৪ রানে। পরের ওভারে আফগান তারকা স্পিনার রাশিদ খানকে ডিপ মিডউইকেটের ওপর দিয়ে ছক্কায় উড়িয়ে স্পর্শ করেন কাঙ্ক্ষিত মাইলফলক।
পরের ওভারে প্রাসিধ কৃষ্ণার ইয়র্কারে বোল্ড হয়ে থামে তার রেকর্ডগড়া ইনিংসটি। জয়সওয়ালের সঙ্গে তার উদ্বোধনী জুটিতে আসে ৭১ বলে ১৬৬ রান। জয়সওয়ালের ৪০ বলে অপরাজিত ৭০ রানের সুবাদে রাজস্থান ৮ উইকেটে ম্যাচ জিতে যায় ২৫ বল বাকি থাকতেই।
স্বাভাবিকভাবেই ম্যাচের সেরা সুরিয়াভানশি।
বয়সভিত্তিক ক্রিকেটে দারুণ কিছু ইনিংস উপহার দিয়ে গত নভেম্বরে আইপিএলের মেগা নিলামে জায়গা পান সুরিয়াভানশি। তার ভিত্তি মূল্য ছিল ৩০ লাখ রুপি। দিল্লি ক্যাপিটালসের সঙ্গে লড়াইয়ে জিতে ১ কোটি ১০ লাখ রুপিতে তাকে দলে নেয় রাজস্থান। তার বয়স নিয়ে বিতর্ক থাকলেও, আইপিএলের ইতিহাসে নিলামে দল পাওয়া সবচেয়ে কম বয়সী ক্রিকেটার হয়ে যান তিনিই।
আসরের প্রথম দিকে সুযোগ না পেলেও গত সপ্তাহে লাক্ষ্ণৌ সুপার জায়ান্টসের বিপক্ষে খেলানো হয় তাকে। ১৪ বছর ২৩ দিন বয়সে মাঠে নেমে আইপিএলে অভিষিক্ত সর্বকনিষ্ঠ ক্রিকেটারও হয়ে যান তিনি।
সেই উপলক্ষ রাঙান তিনি প্রথম বলেই চোখধাঁধানো শটে ছক্কা মেরে! ১৮১ রানের লক্ষ্য তাড়ায় ওপেনিংয়ে নেমে বড় ইনিংস যদিও খেলতে পারেননি। তবে ৩ ছক্কা ও ২ চারে ২০ বলে ৩৪ রান করে জানিয়ে দেন তার আগমনী বার্তা। পরে বেঙ্গালুরুর বিপক্ষে ২০৬ রানের লক্ষ্য তাড়ায় ২ ছক্কায় ১২ বলে করেন ১৬ রান।
ওই দুই ম্যাচে অল্পে থামলেও, এবার বিস্ফোরক সেঞ্চুরিতে রেকর্ড বইয়ে তোলপাড় ফেলে দিলেন তিনি।