Published : 29 Apr 2025, 09:54 PM
জাতীয় রাজস্ব বোর্ড-এনবিআরের বর্তমান কার্যক্রম দুই ভাগ করে রাজস্ব নীতি ও রাজস্ব ব্যবস্থাপনা বিভাগ করার ক্ষেত্রে আয়কর ও শুল্ক ক্যাডারের মতামতের প্রতিফলন খসড়া অধ্যাদেশে না থাকায় ক্ষোভ দেখিয়েছেন শতাধিক কর্মকর্তা।
কয়েক ঘণ্টা চেয়ারম্যানের অফিসের সামনে অবস্থানের পর ‘অধ্যাদেশ জারি না হওয়ার’ আশ্বাসে তারা পরে ফিরে যান।
মঙ্গলবার বিকালের পর ঢাকার বিভিন্ন কার্যালয় থেকে আয়কর ও শুল্ক ক্যাডারের শতাধিক কর্মকর্তা এনবিআর ভবনে এসে অবস্থান নেন সংস্থার চেয়ারম্যান মো. আবদুর রহমান খানের দফতরের সামনে। তারা এ নিয়ে উচ্চ স্বরে নিজেদের ক্ষোভও প্রকাশ করেন।
পরে দুই ক্যাডারের সংগঠনের নেতাদের সঙ্গে বৈঠকে বসেন চেয়ারম্যান।
সেখানে রাজস্ব নীতি ও রাজস্ব ব্যবস্থাপনা বিভাগ পৃথক করার অধ্যাদেশ 'আপাতত জারি হচ্ছে না' অর্থ উপদেষ্টা সালেহউদ্দিন আহমেদ ও এনবিআরের চেয়ারম্যানের তরফে এমন আশ্বাসে আয়কর ও শুল্ক ক্যাডারের কর্মকর্তারা ভবন ছেড়ে যান।
বিসিএস ট্যাক্সেশন অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি মুতাসিম বিল্লাহ ফারুকী বলেন, "এনবিআর চেয়ারম্যান অর্থ উপদেষ্টার সঙ্গে কথা বলেছেন। এবং তার সঙ্গে কথা বলে দেখা হবে কোথায় কোথায় কী প্রবলেম আছে এবং কোথায় কী করা যেতে পারে।
"আইন সচিবকেও বলা হয়েছে আপাতত এটা (অধ্যাদেশ জারি না করে) থাকুক। দেখি কী অসামঞ্জস্যতা আছে, কতটুকু এডজাস্ট করা যায়। এমন একটি আশ্বাসের প্রেক্ষিতেই সেখান (চেয়ারম্যানের দফতর) থেকে আমরা আসছি।"
রাত সাড়ে ৮টার দিকে আলোচনা শেষে বৈঠক থেকে বেড়িয়ে এসে কর্মকর্তাদের আশ্বাসের বিষয়ে তুলে ধরেন সংগঠনের নেতারা। পরে ক্ষুব্ধ কর্মকর্তারা এনবিআর চেয়ারম্যানের দফতর ছেড়ে যান।
অধ্যাদেশ আপাতত জারি না হওয়ার বিষয়ে এনবিআর চেয়ারম্যানের বক্তব্য জানা যায়নি।
কর্মকর্তাদের ক্ষোভের বিষয়ে বিসিএস ট্যাক্সেশন অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি ফারুকী বলেন, "আমাদের সমস্ত কর্মকর্তা একত্রিত হয়েছিল তাদের ক্ষোভের বহিঃপ্রকাশ করার জন্য। এবং তারা আমাদের কাছ থেকেও জানতে চাচ্ছিল যে আমাদের পরবর্তী স্টেপ কী। সেখান থেকেই এক হওয়া।"
অধ্যাদেশের খসড়ায় আয়কর ও শুল্ক ক্যাডারদের মতামতের 'বেশ কিছু ব্যত্যয়' হয়েছে তুলে ধরে তিনি বলেন, "আমরা চেয়ারম্যানকে বলেছি, ড্রাফট যেটা গিয়েছে, সেখানে বেশ কিছু ব্যত্যয় আছে। অনেক কিছু অস্পষ্ট আছে। এরকম অনেক বিষয় আছে।
“যেমন ধরেন দুটো বিভাগের প্রধান পদে আমাদের দুই ক্যাডার থেকে নিয়োগের বিষয়টি মোটামুটি আলোচনা হয়েছিল। সেখানেও (খসড়ায়) সেটা নিশ্চিত করা হয়নি। এরপরে আরো কিছু কিছু জিনিস পরিষ্কার করা হয়নি। আমাদের কাঠামোগত বিষয়গুলোকেও এত পরিষ্কার নয় যে কোন বিভাগগুলো কীভাবে নিয়ন্ত্রিত হবে, কীভাবে কাঠামো তৈরি হবে সেটা অনেকটা অপরিষ্কার আছে।"
তার ভাষ্য, এ খসড়ার মাধ্যমে এনবিআরের কর্মকর্তারা তাদের প্রাপ্যতা থেকে 'নিজেদের বঞ্চিত' মনে করছেন।
বর্তমানে রাজস্ব আহরণ ও নীতি প্রণয়নসহ রাজস্ব সংক্রান্ত বেশির ভাগ দায়িত্বে রয়েছেন এ দুই ক্যাডারের কর্মকর্তারা।
এনবিআরকে দুই ভাগ করে রাজস্ব নীতি ও রাজস্ব ব্যবস্থাপনা আলাদা করতে খসড়া অধ্যাদেশে গত ১৭ এপ্রিল অনুমোদন দেয় উপদেষ্টা পরিষদ। বাকি প্রক্রিয়া শেষ করে তা দ্রুত জারি হওয়ার কথা বলছে সরকার।
অধ্যাদেশের খসড়া অনলাইনে এলে তা দেখে আয়কর ও শুল্ক ক্যাডারের কর্মকর্তাদের মধ্যে ক্ষোভ বাড়তে থাকে। তাদের দেওয়া মতামত অধ্যাদেশে প্রতিফলিত না হওয়ায় এ নিয়ে বিসিএস কাস্টমস অ্যান্ড ভ্যাট অ্যাসোসিয়েশন সংবাদমাধ্যমে বিবৃতিও দেয়।
এ বিষয়ে নিজেদের করণীয় ঠিক করতে শনবিার এনবিআরের মাল্টিপারপাস হলে বিশেষ সাধারণ সভা (ইজিএম) করে বিসিএস কাস্টমস অ্যান্ড ভ্যাট অ্যাসোসিয়েশন। আগামী শনিবার আয়কর ক্যাডারদের সংগঠনের ব্যানারে আরেকটি ইজিএম হওয়ার কথা রয়েছে।
কাস্টমস অ্যাসোসিয়েশনের সভা শেষে সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে সংগঠনটি বলেছে, “গত উপদেষ্টা পরিষদে অনুমোদিত রাজস্ব নীতি ও রাজস্ব ব্যবস্থাপনা অধ্যাদেশ, ২০২৫ এর যে খসড়া পাওয়া গেছে সেটি পাঠ ও পর্যালোচনা করে দুই সংগঠনের মতামত প্রতিফলিত হয়নি বলে প্রতীয়মান হয়েছে।”
এছাড়া রাজস্ব আহরণ, নীতি ও সংশ্লিষ্ট বিষয়ে অভিজ্ঞতা না থাকা বা কম অভিজ্ঞদের কাছে রাজস্ব নীতি বিভাগ চলে যাওয়ার শঙ্কা প্রকাশ করা হয়েছে বিজ্ঞপ্তিতে।
অন্তর্বর্তীকালীন সরকার ক্ষমতায় এসে সংস্কারের অংশ হিসেবে যে রাজস্ব সংস্কার পরামর্শক কমিটি করে সেখানে রাজস্ব নীতি ও রাজস্ব ব্যবস্থাপনা পৃথকীকরণের বিষয়ে সুপারিশ উঠে আসে। তবে এ দু’টিরই নেতৃত্বে এনবিআরের বর্তমান কর্মকর্তাদের অভিজ্ঞতার কারণে তাদেরই থাকার সুপারিশ মেলে সেখানে।
তবে সে সুপারিশ খসড়ায় ‘ব্যাপকভাবে উপেক্ষিত হয়েছে’ দাবি করে বর্তমানের মত প্রশাসন ক্যাডারদের হাতেই ভাগ হওয়া এনবিআর চলে যাওয়ার শঙ্কা থেকেই এ ক্ষোভ আয়কর ও শুল্ক ক্যাডারদের।
এনবিআর ভাগের ক্ষেত্রে সংশ্লিষ্টদের মতামত 'প্রতিফলিত না হওয়ার' দাবি